জাকের সুপার মার্কেট : সংঘর্ষে সভাপতিসহ আহত ২

আগের সংবাদ

অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ : সীতাকুণ্ডের ‘সীমা অক্সিজেন লিমিটেডে’ বিস্ফোরণে নিহত ৬, আহত আরো ২৫

পরের সংবাদ

মাছ-মাংসের বাজারে আগুন সবজির দামও ঊর্ধ্বমুখী

প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দেশের বাজারে নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি, থামার কোনো লক্ষণ নেই। উল্টো দফায় দফায় বাড়ছে দাম। এর মধ্যে মাছ-মাংসের বাজারে জ¦লছে আগুন। সবজির দামও ঊর্ধ্বমুখী। আর চিনি, আটা, ময়দা উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল থাকলেও নতুন করে রমজানকে সামনে রেখে বেড়েছে ডাল ও ছোলার দাম। এ অবস্থায় খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন মধ্য ও নি¤œবিত্তরা। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
রাজধানীর বড় বাজারগুলোতে মাসখানেক আগেও হাড়সহ গরুর মাংস কেনা যেত ৬৮০ টাকায়। এখন কেজিতে খরচ পড়ছে ৭৫০ টাকা। তবে পাড়া-মহল্লায় এই দাম আরো বেশি। এছাড়া খাসির মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায়। যাত্রাবাড়ী বাজারের মাংস বিক্রেতা মামুন হাসান বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে গরুর মাংসের দাম চড়া। কেন দাম বাড়ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করলেন, বাজারে কোন জিনিসের দাম কম? আপনি বাজার-সদাই করেন? এই মাংস বিক্রেতা বলেন, দাম বাড়লে তো আমাদেরই বেশি ক্ষতি। এত দাম দিয়া মাংস কয়জনে কিনব। দাম বাড়লে মানুষ কম কিনে।
গরুর মাংসের এই আকাশচুম্বী দামের কারণে মধ্যবিত্তের অনেকেই ভিড় করছেন ব্রয়লার মুরগি ও মাছের বাজারে। তবে আগে থেকেই আগুন হয়ে আছে ব্রয়লার আর মাছের বাজার। এক মাস ধরে ব্রয়লার মুরগি হাঁটছে গরুর মাংসের পথে। মাসখানেক আগে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি। ধাপে ধাপে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি। ব্রয়লারের এই দাম সোনালি জাতের মুরগির দামকেও উসকে দিয়েছে। এ জাতের মুরগির দাম আরো বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা। এছাড়া দেশি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা দরে। গরুর মাংস আর মুরগির দামে হতাশ হয়ে ক্রেতারা যাচ্ছেন মাছের বাজারে। সেখানেও দামের আগুনে পুড়তে হচ্ছে। মাছের মধ্যে দামের তালিকায় তুলনামূলক নিচের দিকে থাকত চাষের কৈ, তেলাপিয়া ও পাঙাশ। দামের ঢেউয়ে এসব মাছও লাফাচ্ছে। দুই থেকে তিন মাস আগে যারা ১৪০ বা ১৫০ টাকায় তেলাপিয়া কিংবা পাঙাশ কিনেছেন, বাজারে গেলে এখন চোখ তাদের কপালে ওঠে। বড় আকারের তেলাপিয়ার কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। একইভাবে পাঙাশের কেজি কিনতেও গুণতে হচ্ছে ২০০ থেকে ২৩০ টাকা পর্যন্ত। চাষের কৈ মাছও বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৬০ টাকা দরে। তবে ‘অভিজাত’ শ্রেণির মাছ কিনতে গেলে খরচ করতে হবে আরো বেশি। চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে। পাবদার কেজি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। রুই ও কাতলার কেজি বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে ২৮০ থেকে ৪৫০ টাকায়।
শান্তিনগর বাজারের মাছ বিক্রেতা হাবিব বলেন, দেশে এখন বিভিন্ন জায়গায় মাছের চাষ হয়। তবু বাজারে মাছের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ অনেক কম। এ কারণে পাইকারি বাজারে দাম বেশি। পাইকারিতে বেশি পড়লে খুচরা বাজারে দাম বাড়বেই। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে এক বছরে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে ১৬ শতাংশ, খাসির মাংসের ২১ এবং ব্রয়লারের ৪১ শতাংশ। মাছ-মাংস থেকে দূরে সরে যারা সবজির বাজারে যাচ্ছেন, তারাও হতাশ। শীতের ভরা মৌসুমে এবার সবজির দাম ছিল অনেক চড়া। সেই রেশ এখনো রয়ে গেছে। দুই-তিনটি ছাড়া অন্য সব সবজির দাম ৫০ টাকার উপরে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালের সবজি ঢেঁড়স, ঝিঙা, ধুন্দুল, বেগুন, বরবটিসহ কয়েকটি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। কোনো কোনোটির দাম আরো বেশি। করলা, পটলসহ কয়েকটি সবজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে।
এদিকে মুদি বাজারে তেল, চিনি, আটা, ময়দা, গুঁড়া দুধসহ অন্যান্য বেশকিছু পণ্য উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল রয়েছে। এছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন করে বেড়েছে ডাল ও ছোলার দাম। প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১০০-১০৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ৯০-৯৫ টাকা ছিল। একইভাবে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বুটের ডাল ৯৫-১০০ এবং মাসকলাইয়ের ডাল ১৫৫-১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে সাধারণত গরিব ও নি¤œ মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভোক্তারা ব্রয়লার মুরগি ও মাছের ওপর নির্ভরশীল। তাদের মধ্যে অনেকে এসব নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সেগুনবাগিচা বাজারে বাজার করতে আসা রিকশাচালক রহমত উল্লাহ বলেন, একটা দিন যে ভালো-মন্দ খাব এখন সেই উপায় নেই। এগুলো দেখার কেউ নেই। আমাদের নিয়ে সরকার ভাবে না।
তিনি বলেন, দিনে ৬০০-৭০০ টাকা কামাই, এর মধ্যে যদি ২৫০ টাকায় মাছ কিনি, তাহলে অন্য খরচ কী দিয়ে হবে? রিকশাচালক রহমতের মতো শান্তিনগর বাজারে মাছ কিনতে আসা মরিয়ম বেগম বলেন, ২০০ টাকা কেজি দরে দেড় কেজি ওজনের একটি পাঙাশ কিনেছি, এতেই ৩০০ টাকা নাই। মাংস কেনা তো অনেক আগেই ভুলে গেছি। এখন তো মাছেও হাত দেয়া যায় না। বেসরকারি চাকরিজীবী আহমদ হোসেন ব্রয়লার মুরগি কিনতে এসে জানালেন, গরুর মাংস থেকে অনেক আগেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। গরুর মাংস এখন আর সবার জন্য নয়। এখন দেখছি ব্রয়লারও বাদ দিতে হবে। কেজি হয়ে গেছে ২৫০ টাকা। আহমদ হোসেন আর মরিয়ম বেগমের মতো অনেকের কাছেই এখন গরুর মাংস দুর্লভ। নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে মুরগি ও মাছের মতো প্রাণীজ আমিষও। কেউ কেউ এসব খাদ্যপণ্য কেনা কমিয়েছেন। আবার কেউ কেউ খাদ্যাভ্যাস বদলের চেষ্টা করছেন। এতে অনেকের মধ্যেই বাড়ছে আমিষের ঘাটতি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়