শালুক আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মিলন ১০ মার্চ

আগের সংবাদ

ই-টিকেটের নামে ‘ফাঁকিবাজি’ : টিকেট দিতে অনীহা কন্ট্রাকটরের, টিকেটের বিষয়ে যাত্রীরাও উদাসীন, মনিটরিং ব্যবস্থা অপ্রতুল

পরের সংবাদ

চট্টগ্রামে অপ্রতিরোধ্য কিশোর গ্যাং : ধরাছোঁয়ার বাইরে কথিত ‘বড়ভাই’

প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রীতম দাশ, চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রামে আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে কিশোর অপরাধ। খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর-তরুণ অপরাধীরা। কথিত বড় ভাইয়ের ছত্রছায়ায় মহানগরীতে বেপরোয়া অর্ধশত কিশোর গ্যাং। মাঝে মধ্যে কিশোর অপরাধীরা ধরা পড়লেও কথিত ‘বড়ভাই’রা রয়ে গেছে নিরাপদে। এসব কিশোর অপরাধীরা আধিপত্য বিস্তার, বড় ভাই ছোট ভাই দ্ব›দ্ব এবং তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। নগরের ১৬ থানা এলাকায় বিভিন্ন নামে গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধশতাধিক কিশোর গ্যাং। এসব গ্যাংয়ের সদস্যরা নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সেবন করছে ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ নানা মাদকদ্রব্য। আধিপত্য বিস্তারে ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র। গত এক দশকে নগরের জামালখান এলাকায়ও একাধিক কিশোর গ্যাংয়ের উত্থান ঘটেছে। কিশোর গ্যাংয়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে নগরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। রাজনৈতিক দলের নেতাদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কয়েকজন কাউন্সিলর এসব কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা জানান, সারাদেশে কিশোর গ্যাং কালচার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিভিন্ন ছত্রছায়ায় নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোররা ব্যবহৃত হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের অপরাধের ধরনও পাল্টে যাচ্ছে।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি অভিযান চালিয়ে নগরের চকবাজার থানার নবাব সিরাজউদৌলা রোড বালি আর্কেড শপিং সেন্টারের সামনে থেকে কিশোর গ্যাং ‘ডট গ্যাং’ গ্রুপের প্রধানসহ ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- গ্রুপের প্রধান হোসাইনুল আমিন মিম (১৬), সামিউল ইসলাম (১৬), আহনাফ শাহরিয়ার (১৬), মো. শরিফুল ইসলাম (১৬), শানিপ শাহীদ (১৬), মাশহাদ সিদ্দিকী (১৬) ও আবু তারেক (১৬)।
র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম জানান, কিশোর গ্যাং সদস্যদের বিষয়ে নানা ধরনের অভিযোগ পাওয়ার পরে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু হয়। নজরদারির একপর্যায়ে দেখা যায়, নগরের বিভিন্ন এলাকার একটি গ্রুপ ফেসবুক আইডি খুলে তাদের বিভিন্ন অপকর্মের স্থির চিত্র এবং ভিডিও চিত্র ধারণ করে আপলোড করেছে। পরবর্তীতে বিশেষ একটি তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার কিশোর গ্যাং ‘ডট গ্যাং’ গ্রুপের প্রধানসহ ৭ সদস্যকে আটক করা হয়েছে। ‘ডট গ্যাং’ গ্রুপের প্রধান গ্রেপ্তার হোসাইনুল আমিন ওরফে মিম। ‘ডট গ্যাং’ নামের ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ মিম নিজে কন্ট্রোল করত। তার নেতৃত্বে নগরের জামালখান এবং চকবাজার এলাকায় অনেক ছিনতাই, চাঁদাবাজি এবং হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। তার বিরুদ্ধে চকবাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও আছে। মিমের বাবা একজন চিকিৎসক এবং মা চাকরিজীবী। গ্রুপের প্রধান মিমের সঙ্গে মাশহাদ হোসেন একই স্কুলে পড়ালেখা করেছে, সেই সুবাধে তাদের পরিচয়। মাশহাদ নগরের জামালখান এবং চকবাজার এলাকায় অনেক ছিনতাই, চাঁদাবাজি এবং হতাহতের ঘটনায় মিমের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করত। সামিউল আমিন নগরের জামালখান এবং চকবাজার এলাকায় ৪ থেকে ৫টি মারামারিতে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল। গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই চট্টগ্রামের স্বনামধন্য সরকারি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র বলে জানায় র‌্যাব। র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক বলেন, সবাই চট্টগ্রামের একটি কোচিং সেন্টারের নিয়মিত ছাত্র ছিল। তাদের এমন কাজে স্থানীয় বড় ভাইরা মদদ দিত বলে জানা গেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
কিশোর অপরাধ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. রহমান নাসের উদ্দিন ভোরের কাগজকে বলেন, অপরাজনীতির কারণে দেশে মারাত্মকহারে কিশোর গ্যাং বাড়ছে। সামাজিক অধঃপতন, ন্যায়-নীতি-মূল্যবোধের ক্রমবর্ধমান অবক্ষয়ের কারণে কিশোর অপরাধের প্রবণতা বাড়ছে। আরেকটা বিষয়- প্রযুক্তিনির্ভরতা। আমাদের সন্তানরা এখন খুব কম বয়সেই মোবাইল বা ইন্টারনেট আসক্ত হয়ে পড়ছে। এতে তারা অপসংস্কৃতির দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে। পারিবারিক-সামাজিক নজরদারি বা স্কুলিং বাড়ানো, সুস্থ সংস্কৃতির চর্চার পাশাপাশি জনকল্যাণমূলক কাজে কিশোর-কিশোরীদের আকৃষ্ট করা গেলে তারা বিপৎগামীতার হাত থেকে রক্ষা পাবে বলে মনে করি। 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়