ডিএমপি কমিশনার : পুলিশকে তৎপর হতে হবে ভোরে

আগের সংবাদ

১৪ দলে আগ্রহ ছোট দলগুলোর : অপেক্ষায় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, তৃণমূল বিএনপি, ইসলামিক ফ্রন্ট, ইসলামী ঐক্যজোট > মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে একই প্ল্যাটফর্মে চায় আওয়ামী লীগ

পরের সংবাদ

স্কুল পাঠ্যবই নিয়ে শঙ্কা কাটছে না : এনসিটিবি দায়িত্বশীল হোক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

স্কুল পাঠ্যবইয়ে তথ্য বিকৃতি, বানান ভুল, লেখা পরিবর্তন, পরিমার্জন ইত্যাদি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা যেন পিছু ছাড়ছে না। গতকাল ভোরের কাগজের প্রধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞান এ দুটি পাঠ্যবই তুলে নেয়া, সংশোধনীর নামে আরো তিনটি বই আটকে রাখাসহ ভুলে ভরা পাঠ্যবইয়ের কারণে বিপাকে পড়েছে লাখ লাখ শিক্ষার্থী। সময় থাকতে শিক্ষার্থীদের এমন ক্ষতি পোষাতে সংশ্লিষ্টদের মনোযোগী হতে হবে। পাঠ্যবইয়ে তথ্য বিকৃতি ও বাক্য গঠনের ভুলগুলো শুধু অদক্ষতাই নয়, এটি অমার্জনীয় অপরাধ। জানা গেছে, চলতি বছর প্রকাশিত নবম ও দশম শ্রেণির ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা’ বইয়ের ১৮১ নম্বর পৃষ্ঠায় একটি বড় ভুল ধরা পড়েছে। এখানে বলা হচ্ছে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশজুড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্যাতন, গণহত্যা ও ধ্বংসলীলায় মেতে ওঠে। অথচ এখানে হবে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে। ওই বইয়ের ২০০ নম্বর পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে ১২ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মাদ সায়েমের কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অথচ বঙ্গবন্ধুকে শপথ পড়ান তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ের একটি অংশে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এডুকেশনাল সাইট থেকে নিয়ে হুবহু অনুবাদ করে ব্যবহার করা হয়েছে। এই অভিযোগ সত্য বলে স্বীকার করে নিয়েছেন বইটির রচনা ও সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত থাকা অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক হাসিনা খান। যৌথ বিবৃতিতে তারা এর দায়ও স্বীকার করেছেন। গত বছরও এমন চিত্র দেখেছি। ‘বঙ্গবন্ধু’কে বঙ্গবন্ধু এবং পুরো নাম না লেখে শুধু ‘শেখ মুজিব’ বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। সংবিধানে এক তথ্য থাকলেও পাঠ্যবইয়ে দেয়া হয়েছে মনগড়া তথ্য। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের সরকারের সময় একই ধরনের ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়। এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষার মেরুদণ্ড ধ্বংসের ষড়যন্ত্র। এর আগেও স্কুল পাঠ্যবইতে ভুলের ছড়াছড়ি হয়েছে। কৌশলে হয়েছে তথ্য বিকৃতি। বিভিন্ন সময়ে সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কোনো জোরালো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর থেকেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিপরীতে দেশের যাত্রা। রাজনীতি থেকে শুরু করে শিক্ষা, সংস্কৃতি সর্বক্ষেত্রেই এই পরিবর্তন আনার চেষ্টা হয়। পাঠ্যবইয়ে সাম্প্রদায়িক চিন্তা ও বিকৃত ইতিহাসের অনুপ্রবেশের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের মগজ ধোলাই চলে। এর ফলে কয়েকটি প্রজন্ম বড় হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও তার প্রকৃত ইতিহাস বঞ্চিত হয়ে। ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় পাঠ্যপুস্তকে এই বিকৃতির ধারা আরো জোরালো হয়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে পাঠ্যবইয়ে যে পরিবর্তন করে সেই পরিবর্তন এই খাতে স্মরণকালের মধ্যে বড় সংস্কার হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এ সময় পাঠ্যবইয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ তুলে ধরা হয়। কিন্তু আমরা দেখছি, ইতিবাচক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রতি বছর কোনো না কোনো বইতে ইতিহাস বিকৃতি দেখা যায়। এর দায় কার? এনসিটিবির দায়িত্ব কী? নানা প্রশ্ন সামনে আসছে। এমন তথ্য বিকৃতির সঙ্গে যুক্তদের কোনোভাবে আর ছাড় নেই। আমরা দোষীদের শাস্তির আওতায় দেখতে চাই। না হয় বারবার এমন বিকৃতি ঘটেই যাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়