ডিএমপি কমিশনার : পুলিশকে তৎপর হতে হবে ভোরে

আগের সংবাদ

১৪ দলে আগ্রহ ছোট দলগুলোর : অপেক্ষায় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, তৃণমূল বিএনপি, ইসলামিক ফ্রন্ট, ইসলামী ঐক্যজোট > মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে একই প্ল্যাটফর্মে চায় আওয়ামী লীগ

পরের সংবাদ

বিলেতের বাংলা মিডিয়া : একটি আত্ম-আলোচনা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জনপ্রিয় হওয়ার পর থেকে ক্রমেই মুহূর্তের খবর পাঠকের কাছে পৌঁছে দেয়ার একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন খবর-প্রতিবেদন নিয়ে সকালে বের হওয়া যে কাগজটির জন্য পৃথিবীর দেশে দেশে মানুষ অপেক্ষা করত, সে অপেক্ষা এখন আর নেই। সেখানে জায়গা করে নিয়েছে অনলাইন নিউজগুলো। এমনকি পত্রিকাগুলো ভোররাতে প্রকাশিত হয়ে সকালে পাঠকের হাতে পৌঁছার আগেই সেই পত্রিকাগুলোর পের্টালে নিউজ পাল্টে যায় কিংবা আপডেট হয়। অর্থাৎ অনেক নিউজই তখন পাঠকের কাছে পুরনো হয়ে যায়। প্রযুক্তিই গতি দিয়েছে, মানুষকে পৌঁছে দিচ্ছে মুহূর্তের খবর।
আর সে কারণেই ডিজিটাল ভার্সনের পাশাপাশি প্রায় প্রত্যেকটা কাগজই নিউজকে আরো জীবন্ত করে তোলতে লাইভ সম্প্রচার চালু করেছে। শুধু বিদেশে নয়, বাংলাদেশের অনেক পত্রিকাও এ কাজগুলো করে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, ব্যবসাসফল হয়েছে। পাশাপাশি টিভি চ্যানেলগুলোর অনলাইন পোর্টালও পাঠকপ্রিয়। অর্থাৎ একেকটা মিডিয়া হাউস এখন মাল্টি মিডিয়ায় রূপ নিয়েছে। সেজন্যই এখনো মানুষ নির্ভর করছে বিশ্বস্ত মিডিয়াগুলোর ওপর। কারণ অনলাইন কিংবা ডিজিটাল দুনিয়ায় যে কেউ খবরকে বিকৃত করে বিনে পয়সায় তৈরি করা পাবলিসিটি পেজে ভ্রান্ত তথ্য দিয়ে হৈচৈ ফেলে দিতে পারে কিংবা গুজব ছড়ায়। এ হিসেবে বিলেত থেকে প্রচারিত বাংলা মিডিয়াগুলো অনেক পেছনেই পড়ে আছে। কয়েকটা সাপ্তাহিক পত্রিকা আছে, যেগুলোর অনলাইন সংস্করণ নেই বললেই চলে। কোনো কোনো পত্রিকার অনলাইন পের্টালই নেই, আবার দু-একটা পত্রিকার তা থাকলেও দুই-তিন দিনে মাঝে মাঝে আপডেট হয়। অনলাইন পোর্টালের সংখ্যাও প্রচুর, গোনা যাবে না। তবে একটা পোর্টালকেও ব্রিটেনের বাংলাদেশি কমিউনিটির নির্ভরযোগ্য কোনো গণমাধ্যম বলা যাবে না। কারণ প্রত্যেকটি পোর্টালই মূলত দেশের খবরগুলো এক-দুদিন পরপর আপডেট দিয়ে থাকে, এর মাঝেও যিনি এই পোর্টাল চালান, তিনি তার এলাকার খবর কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার গ্রামের নিউজগুলোই প্রাধান্য দেন এবং এলাকার স্থানীয় পত্রিকা কিংবা অনলাইন পোর্টাল থেকে হুবহু বসিয়ে দেন। এখান থেকে যে কয়েকটা সাপ্তাহিকী বের হয়, এগুলোর মাঝে দু-একটা সাপ্তাহিকী বিলেতের বাঙালি কমিউনিটির দু-একটা গুরুত্বপূর্ণ খবর ছাপে, না হলে তারাও মূলত দেশনির্ভর কপি এবং পেস্টের ওপরই নির্ভরশীল। আর সেজন্য এ পত্রিকাগুলোর কাটতিও নেই। কিন্তু পত্রিকাগুলোর নিজস্ব অফিস আছে, খণ্ডকালীন কাজ করা সাংবাদিকদের কিছুটা হলেও সম্মানী দিয়ে পত্রিকাগুলো প্রকাশ করা হচ্ছে। আগেই উল্লেখ করেছি, যদিও এই পত্রিকাগুলোর কোনো ভালো ওয়েব ভার্সন নেই। স্বাভাবিকভাবেই মাল্টি মিডিয়া হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠাও করতে পারছে না। সত্যি কথা হলো, আগের মতো কমিউনিটির ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোও খুব একটা এতে গুরুত্ব দেয় না এবং পত্রিকাগুলো টিকিয়ে রাখতে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো খুব একটা ভূমিকা রাখছে না।
অন্যদিকে ফেসবুক কিংবা ইউটিউবভিত্তিক কয়েকটা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম আছে, যেগুলো শুধু চটকদার ইস্যু টার্গেট করে দু-তিন মিনিটের ভিডিও বানিয়ে ভাইরাল করার জন্য প্রচার করে। প্রযুক্তি হাতের মুঠোয়, তাই এ রকম মাধ্যমগুলোর প্রায় সবকটাই নিজস্ব বাসস্থান থেকেই প্রচার হয়। অস্বীকার করা যাবে না এ মাধ্যমে হাতেগোনা (দু-একজন) পেশাদার সাংবাদিক আছেন। এগুলোকে অবশ্য মিডিয়ার আবরণেই একটা গণমাধ্যম হিসেবে তারা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর সেজন্য এগুলোতে এমন কিছু বিষয়ও উপস্থাপন করা হয়, যা কোনো সময় কারো ভাড়াটিয়া (পক্ষপাতদুষ্ট) হিসেবে কিংবা কাউকে তোয়াজ করে কিংবা ব্যক্তিগত বিদ্বেষপ্রসূত লাইভ প্রচার কিংবা নিজস্ব পরিবার কিংবা স্বজনদের নিয়ে ভিডিও বানিয়ে ছড়িয়ে দেয়া। সে কারণেই দু-একটা ইউটিউব চ্যানেলের দর্শক থাকলেও বাকিগুলোর ইউটিউব ভিউ এমনকি কোনো কোনোটির দশটিরও নিচে থাকে। যদিও কেউ বিদ্বেষ ছড়ালে কিংবা গালাগালি করলে এগুলো দেখে মানুষ।
অথচ দুই-তিনজন ফুল টাইম সাংবাদিক নিয়ে হলেও একটা অনলাইন চালু করা সম্ভব, যা দিয়ে কমিউনিটির ভাবনাগুলো তোলে ধরা যেত। সাপ্তাহিকগুলোর দীর্ঘদিনের নিজস্ব একটা ইমেজ, ভিত্তি থাকা সত্ত্বেও পত্রিকার মালিক-সম্পাদকরা এ কাজগুলো তারা করতে পারছেন না। সাপ্তাহিকগুলোর নিজস্ব ভিত্তি আছে, কিন্তু তারা মানসম্মত ওয়েবসাইট করতে পারছে না, ফেসবুক কিংবা ইউটিউবভিত্তিক নিউজও দিতে পারছে না। অর্থাৎ ছোটখাটো মাল্টি মিডিয়া হওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তারা এই কাজটি করতে উদ্যোগী হচ্ছে না।
এখন আসি একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে। সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে আসা বিশেষত ছাত্রীদের নিয়ে একটা রিপোর্ট হয়েছে একটা টিভি চ্যানেলে। সেখানে তারা উল্লেখ করেছেন, দেশ থেকে আসা ছাত্রীরা পতিতাবৃত্তিতে লেগেছে। অথচ যা প্রমাণসাপেক্ষ নয়। ধরে নিলাম এ রকম একটা-দুটা দুঃখজনক বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতেই পারে। কিন্তু ছাত্রীদের ঢালাওভাবে লেভেল দেয়ায় শিক্ষার্থীরা এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং অভিভাবকরা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। সে সূত্র ধরে একটা ঘটনা উল্লেখ করছি, প্রায় দশ বছর আগে কি একটা কাজে ব্রিকলেনের একটা সাইড রোডে আমরা চারজন হাঁটছি। এর মাঝে বয়সে প্রবীণ দুজনও আছেন। সন্ধ্যা তখন উতরে গেছে। হঠাৎ বাংলায় একটা মেয়েলি কণ্ঠ শোনলাম। চেয়ে দেখি স্কার্ট পরা এক তরুণী ছেলেদের ডাকছে এবং আমাদের সামনেই একটা ছেলে তরুণীর সঙ্গে চলে গেল। আমি জানি না, ব্রিকলেনের আশপাশে এ রকম হয় কী? এ রকম সামাজিক অবক্ষয়ইতো নিউজ। অথচ এগুলো কি নিউজ হয়েছিল কখনো। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের এদেশের ভিন্ন বর্ণের মেয়েদের এ রকম বিচ্ছিন্ন ঘটনাও সময়ে সময়ে উচ্চারিত হয়। তাছাড়া বাংলাদেশের রাজনীতিতেও বিশেষত ছাত্ররাজনীতিতে এ রকম বিষয়তো আলোচিত।
ক’দিন আগে নর্থওয়েস্ট ইংল্যান্ডের এক টিভি রিপোর্টারের সঙ্গে তার রিপোর্টিংয়ের ব্যাপারে আলাপ করছিলাম। প্রসঙ্গক্রমে জানালেন, ‘আমি নিউজ কালেকশন করতে গিয়ে কীভাবে নিজস্ব পরিচিত মানুষদের বলব আমাকে কিছু অর্থ দিতে।’ এবং ব্যাখ্যা করলেন একটা নিউজ প্রচার হলে পঞ্চাশ পাউন্ড চ্যানেলকে দিতে হয়। পরবর্তীতে আরেকটা চ্যানেলের আরেক রিপোর্টারকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে সেই একই কথা বললেন। তারা দুজনই চ্যানেল এবং তাদের নাম উল্লেখ না করতে অনুরোধ করেন। যদিও বিষয়টা এখন সবাই জানে। অর্থাৎ সর্বোপরি মালিকপক্ষ তাদের রিপোর্টারদের মূলত নৈতিকতা বিসর্জন দিতেই একধরনের চাপে ফেলে দিয়েছেন এখন। টিভি চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত থাকা সত্ত্বেও কমিউনিটি উপযোগী কোনো নতুন কিছু দিতে না পারায় ব্যাপক দর্শক ধরে রাখতে পারছে না। তাই বিজ্ঞাপনের দিক দিয়েও তারা খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। সেজন্যই হয়তো এখন দুই-তিনটি টিভি চ্যানেল তাদের রিপোর্টারদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে এই অবাঞ্ছিত আয়। যদিও টিভিগুলোতে একটা বাড়তি সুবিধা আছে, তাদের মাধ্যমে ফান্ড রেইজিং করে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, যাতে চ্যানেলগুলোর অর্থনৈতিক সুবিধাও আছে।
ছয়-সাতটি টিভি চ্যানেলের সবকটিতে এ রকম না হলেও ও মোটামুটি এই হলো ব্রিটেনের বাঙালি পাড়ার মিডিয়া। লন্ডনের বাইরের একজন রিপোর্টারকে তারা একটা টাকাও দেয় না। অথচ এদের অনেকেই কয়েক হাজার পাউন্ড দিয়ে ক্যামেরা কিনেছে। নিছক শখের বশে কিংবা কমিউনিটিতে একটা সম্মানের জন্য তারা তাদের সময় ও অর্থ ব্যয় করে, কিন্তু মিডিয়া মালিকরা যেন এদের দিয়েই তাদের আহার জোগানোর একটা পথ বের করেছেন। এর চেয়ে লজ্জা এবং অপেশাদারিত্ব আর কি হতে পারে?

ফারুক যোশী : কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়