ডিএমপি কমিশনার : পুলিশকে তৎপর হতে হবে ভোরে

আগের সংবাদ

১৪ দলে আগ্রহ ছোট দলগুলোর : অপেক্ষায় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, তৃণমূল বিএনপি, ইসলামিক ফ্রন্ট, ইসলামী ঐক্যজোট > মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে একই প্ল্যাটফর্মে চায় আওয়ামী লীগ

পরের সংবাদ

ইন দ্য লাইন অব ফায়ার

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পাকিস্তানের প্রবল দাপুটে সেনাপ্রধান ও প্রেসিডেন্ট মৃত্যুদণ্ডের পরোয়ানা নিয়ে দুরারোগ্য এমিলোয়ডসিস রোগাক্রান্ত হয়ে ফেব্রুয়ারি ২০২৩ দেশান্তরী থেকে দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ১১ আগস্ট ১৯৪৩ ব্রিটিশ ভারতের দিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭-এর ভারত ভাগ ও পাকিস্তান সৃষ্টির লগ্নে চার বছর বয়সি পারভেজসহ পরিবার পাকিস্তান চলে আসে। তার পিতামহ ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে কর্মরত ছিলেন, পিতা পাকিস্তান পররাষ্ট্র সার্ভিসে। মেধাবী ছাত্র পারভেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত ও অর্থনীতির পাঠ নেন। ১৯৬৯-তে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৬৫-র ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে খেমকরন সেক্টরে যুদ্ধ করেন।
১৯৭১-এ আর্মি-নেভি জয়েন্ট অপারেশনে তাকে পূর্ব পাকিস্তান বদলি করা হয়েছিল। কিন্তু দার্জিলিং-পাকিস্তান সীমান্তে ভারতীয় তৎপরতা শুরু হয়ে গেলে বদলির আদেশ বাতিল হয়। যদি আদেশটি কার্যকর হতো তাহলে ঢাকায় আত্মসমর্পণ করা সৈনিকদের একজন হতেন পারভেজ মোশাররফ। সেক্ষেত্রে জীবনধারা হয়তো বদলে যেত।
চার বছর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট থাকাকালে চারবার হত্যা-প্রচেষ্টার শিকার হন এবং অল্পের জন্য বেঁচে যান। লেফটেন্যান্ট জেনারেল থাকাকালীন তিনি ক্যু করার বিরোধিতা করেছেন। কিন্তু যে নওয়াজ শরিফ সিনিয়রিটি ডিঙ্গিয়ে তাকে সেনাপ্রধান করেন, তিনি অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সেই প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করে প্রেসিডেন্ট হন। ২০০৮ সালে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে তিনি লন্ডন চলে যান এবং প্রতি বক্তৃতার জন্য দেড় থেকে ২ লাখ ডলার দাবি করার মতো বড় বক্তায় পরিণত হন। ইন দ্য লাইন অব ফায়ার তার আত্মজীবনী বহুল সমাদৃত।
ধনী বাবার সন্তান, ইউরোপীয় ধাঁচে বেড়ে ওঠা পারভেজ মোশাররফ তার সেনাজীবনের প্রথম দিকে ‘কাউবয়’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে পাকিস্তানি আদালতের মৃত্যুদণ্ডের পরোয়ানা জারি হয় ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯। পরবর্তী সময় লাহোর হাইকোর্ট রায়টি রদ করে। ২০০২ সালে তিনি বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন।
ইন দ্য লাইন অব ফায়ার থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের ভাষান্তর উপস্থাপন করা হচ্ছে : ৭ নভেম্বরের ১৯৯৮ রাতের খাবার সেরে সাড়ে ৭টার দিকে আমাদের মাঙ্গলা ক্যান্টনমেন্টের বাড়িতে আমার স্ত্রীর সঙ্গে বসে টেলিভিশন দেখছিলাম। এ সময় একটি ফোন পেলাম- প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ আমাকে ডেকেছেন। আমি জানালাম আগামীকাল সকালে আমি ইসলামাবাদ এসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করব। প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব জোর দিয়ে বললেন, ‘না, স্যার, তিনি চাচ্ছেন আপনি এখনি আসুন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, আজ রাতেই।
আমি সোজা হয়ে বসলাম। প্রধানমন্ত্রীর এত কাছাকাছি সেনাপ্রধান থাকতে একজন লেফটেন্যান্ট জেনারেলকে ডেকে পাঠানোটা স্বাভাবিক ব্যাপার নয়। আমি জবাব দিলাম ‘ঠিক আছে। আমি সেনাপ্রধানকে জানিয়ে আসছি।’ সামরিক সচিব বললেন, ‘না, ব্যাপারটা খুব গোপন। কাউকে না জানিয়েই আপনি আসুন।’ অস্বাভাবিক কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে বলে আমার মনে হলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘কী কারণে আমাকে তলব করা হচ্ছে!’ জানতে চাই। ‘স্যার এখানে এলে আপনি নিজেই তা জানতে পারবেন। সেনাপ্রধানের সঙ্গে কথা বলতে যাবেন না।’
আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘আমাকে কি সেনা ইউনিফর্মে আসতে হবে!’
‘হ্যা, তাই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে আসুন।’
আমি ইউনিফর্ম পরে তৈরি হলাম, মিলিটারি পুলিশ এসকর্ট প্রস্তুত হতে বললাম এবং আমার প্রিয় গøক জি-১৭ পিস্তল স্ট্র্যাপে গেঁথে নিলাম। তারপর ইসলামাবাদ রওনা হলাম। এখান থেকে পুরো নব্বই মিনিটের ড্রাইভ। কারো সঙ্গে কথা বলতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। কী ঘটতে যাচ্ছে আমার কোনো ধারণাও নেই। আমার গাড়ি ইসলামাবাদের সীমানায় ঢুকতেই আমার বন্ধু ব্রিগেডিয়ার ইজাজ শাহ-র ফোনটা ধরি। ইজাজ লাহোরে ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) ডিটাচম্যান্ট কমান্ডার।
বলল, ‘অভিনন্দন, তোমাকে সেনাপ্রধান করা হচ্ছে।’ ‘কী বাজে বকতে শুরু করলে? কেরামতের মেয়াদ তো এখনো শেষ হয়নি, আমি কেমন করে চিফ হবো? বন্ধু বলল, ‘সেনাপ্রধান পদত্যাগ করেছেন। এটা তো গণমাধ্যমে এসে গেছে।’ আমার মন তখনই জেনারেল হেড কোয়ার্টার্সে ক’মাস আগে অনুষ্ঠিত কোর কমান্ডারদের সম্মেলনের স্মৃতিতে ফিরে যায়। সেখানে সেনাপ্রধান জেনারেল জাহাঙ্গীর কেরামত বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ জাতীয় সংসদ অবলুপ্ত করার এবং সরকার বাতিল করে দেয়ার যে ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির তা একটি সাংবিধানিক সংশোধনীর মাধ্যমে নিজের কাছে নিয়ে এসেছেন। তিন বাহিনীর প্রধান নিয়োগদান এবং স্টাফ কমিটির জয়েন্ট চিফ নিয়োগদানের ক্ষমতাও এখন তার কাছে। আমি তখন দেখলাম লেফটেন্যান্ট জেনারেল আলি কুলী খানের মুখের রং বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ফারুক লেঘারির সঙ্গে তার বন্ধুত্বের সম্পর্ক আর এটা অনেকটা গৃহীত সিদ্ধান্তের মতো মনে করা হচ্ছে যে তিনিই হচ্ছেন সেনাবাহিনীর পরবর্তী প্রধান। প্রেসিডেন্টের বদলে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ যদি সে সিদ্ধান্ত নেন তাহলে পুরনো সব হিসাব পাল্টে যাবে। জেনারেলদের কেউ কেউ বললেন আমার চিফ হওয়ার সম্ভাবনা ফিরে এসেছে কিন্তু আমি তাদের কথা উড়িয়ে দিলাম কারণ আমি জানি অবসরে যাওয়ার আগে বর্তমান সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আলি কুশী খানের নাম তার উত্তরসূরি হিসেবে প্রস্তাব করবেন। সাংবিধানিক সংশোধনীর পরও পরবর্তী সেনাপ্রধান নিয়োগের নথি প্রেসিডেন্ট লেঘারিকে সই করতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে তার পছন্দের মানুষকে নিয়োগে প্রভাব বিস্তার করতেই পারবেন।
কোর কমান্ডারদের সেই সম্মেলনের খবর প্রধানমন্ত্রীরও জানতে পারার কথা।
এই ক্ষমতা হরণ নিয়ে একদিকে প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যদিকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান বিচারপতির মধ্যে সম্পূর্ণ অনাকাক্সিক্ষত একটি দ্ব›দ্ব বিরাজ করতে থাকে। এটাই পাকিস্তানের বিধান হয়ে গেছে- এ ধরনের অচলাবস্থার নিরসন করতে উভয় পক্ষই সালিশের জন্য সেনাপ্রধানকে টানতে থাকে। প্রেসিডেন্ট ফারুক লেঘারি চাচ্ছেন প্রধান বিচারপতি নওয়াজ শরিফের এই সংবিধান সংশোধনীকে বেআইনি ঘোষণা করুন। প্রধান বিচারপতি সেই রায় দিয়ে দিলেই প্রেসিডেন্ট জাতীয় পরিষদ অবলুপ্ত করবেন এবং পথভ্রান্ত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সরকার বাতিল করে দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী কিছুসংখ্যক বিচারপতিকে তার দলে ভিড়ালেন এবং তাদের দিয়ে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব নেওয়ালেন। তারপর প্রধানমন্ত্রী তার দলের গুন্ডাদের দিয়ে আদালত চলাকালে সুপ্রিম কোর্ট আক্রমণ করালেন। মার খাওয়া কিংবা আরো গুরুতর কিছু এড়াতে তারা তাদের চেম্বারে লুকিয়ে রইলেন। পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে, সাধারণভাবে বলতে গেলে এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় একটি কর্মকাণ্ড। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট উভয় সেনাপ্রধান জেনারেল কেরামতকে সালিশিতে ডেকেছেন বিষয়টি পর্যালোচনা করার জন্য সেনাপ্রধান কোর কমান্ডারকে নিয়ে একটি সম্মেলন ডাকলেন। ওদিকে আইএসআই নিশ্চিত করল প্রেসিডেন্ট ও প্রধান বিচারপতির মধ্যে আঁতাত হয়ে গেছে, তারা জাতীয় পরিষদ বাতিল করবেন মূলত তাদের প্রধান টার্গেট প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে উৎখাত করা। আমরা আমাদের সামনে খোলা পথগুলো বিবেচনা করলাম। একটি হচ্ছে প্রধান বিচারপতির কাছে একটি বার্তা পাঠানো- আপনি সঠিক আচরণ করুন, নিরপেক্ষ থাকুন। নিরপেক্ষতা বিচারপতির দায়িত্বের পূর্বশর্ত। কেউ কেউ মনে করলেন জাতীয় পরিষদে তার যে ‘ব্রুট মেজরিটি’ তা ব্যবহার করে সংবিধানকে বিকৃত করবেন এবং দেশের ক্ষতি করছেন আর বাড়াবাড়ি করার আগে তাকে উচ্ছেদ করাই হবে উত্তম কাজ। চিফ অব জেনারেল স্টাফ আলি কুলী খান বললেন সেই লড়াইতে যদি প্রেসিডেন্ট হেরে যান এবং তাকে অপমান করা হয়, সে ক্ষেত্রে নওয়াজ শরিফকে উচ্ছেদ করতে হবে এবং আমাদের তখন সামরিক আইন জারি করে দেশ চালাতে হবে। কিন্তু আমি বললাম, প্রেসিডেন্ট ও প্রধান বিচারপতি যা করতে যাচ্ছেন সেটা অন্যায়; নওয়াজ শরিফ নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসেছেন, আমাদের উচিত তার টার্ম পূরণ করতে দেয়া- অবশ্যই আমরা যদি গণতন্ত্র প্রোথিত ও পরিপক্ব হোক এটা চাই।
প্রধানমন্ত্রী তার অবস্থানে থাকুন, আমি ছিলাম তার সবচেয়ে শক্তিশালী প্রবক্তা, জাতীয় পরিষদও অব্যাহত থাকুক। যদি কাউকে বাদ দিতে হয় তাহলে আমি মনে করি তারা হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান বিচারপতি। আমি আমার বক্তব্যের পক্ষে দীর্ঘ বিশ্লেষণও দাখিল করলাম।
পরদিন জেনারেল জাহাঙ্গীর কেরামত প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারদের বৈঠক ডাকলেন, সেখানে আমিসহ আমরা কোর কমান্ডারদেরও কেউ কেউ উপস্থিত ছিলাম। আলি কুলী আবারো বললেন, সেনাবাহিনীর ক্ষমতা নিয়ে নেয়া উচিত। প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী দুজনকে প্যাক করে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া দরকার। আলি কুলীর সঙ্গে আমার একটু কথা কাটাকাটি হলো। আমি মনে করি এটা ন্যায্য হবে না, এটা নিজেদের প্রমোশন। আমরা আবারো ঠিক করলাম প্রধান বিচারপতি যাতে সঠিক আচরণ করেন সেই বার্তা পাঠাব। কিন্তু দীর্ঘ আলোচনার পর আমার প্রস্তাবই মেনে নেয়া হলো- প্রেেিসডেন্ট ও প্রধান বিচারপতি উভয়কেই বাড়ি চলে যেতে হবে। সেনাবাহিনী নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন করবে। সভার পর আমরা ফিরে যাই।
পরদিন আমরা কেউই হাজির ছিলাম না। মরিয়া হয়ে ওঠা আলি কুলী তার শেষ কার্ডটি লেখলেন এবং জোর দিলেন প্রেসিডেন্ট যদি বিদায় হন তাহলে নওয়াজ শরিফকেও অবশ্যই যেতে হবে এবং সেনাবাহিনীকে অবশ্যই দেশের শাসনভার গ্রহণ করতে হবে। সেনাপ্রধান জেনারেল জাহাঙ্গীর কেরামত সম্মতি দিলেন না, তিনি প্রধানমন্ত্রীর হেরে যাওয়া সমর্থন করলেন। প্রেসিডেন্ট ফারুক লেঘারি পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। সহকর্মীদের অধিকাংশ সমর্থন হারিয়ে প্রধান বিচারপতি নিজেই প্রেসিডেন্টকে অনুসরণ করতে বাধ্য হলেন। কাজেই সুপ্রিম কোর্ট করায়ত্ত করার যুদ্ধের অসম্মানজনক পরিণতি ঘটল। বরাবরই রাজনীতিবিদরা এসব সংকটের মধ্যে সেনাপ্রধানকে টেনে আনেন। তবে এবার সেনাপ্রধান সঠিক কাজটিই করলেন।
আমি প্রধানমন্ত্রীর অফিসে ঢোকার সময় কিছুটা দ্বিধান্বিত ছিলাম। তিনি সোফায় বসেছিলেন। নওয়াজ শরিফের মুখে বিজয়ীর হাসি। তিনি আমাকে বললেন সেনাবাহিনী প্রধান পদত্যাগ করেছেন এবং আমাকে তার জায়গায় নিয়োগ প্রদান করেছেন। কী ঘটেছে আমি তার কাছে জানতে চাইলাম। প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘আমি তাকে পদত্যাগ করতে বলেছি এবং তিনি তাই করেছেন।’ আমি অবাক হই। জেনারেল কেরামতের ‘ভুল’টা ছিল নেভাল স্টাফ কলেজের সভায় তার বক্তৃতার মধ্যে দেশের সুশাসনের জন্য কিছু পরামর্শ দেয়া এবং জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ স্থাপনের কথা বলা। আমি জানি পাশ্চাত্যের গণতন্ত্রে কর্মরত সেনা কর্মকর্তা বিশেষ করে সেনাপ্রধান কখনো রাজনৈতিক মন্তব্য করেন না। আমার ওপর আস্থা রাখার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। আমাকে ব্যাজ পরানোর সময় তিনি বললেন, ‘আপনাকে বেছে নেয়ার একটি কারণ হচ্ছে আপনিই হচ্ছেন একমাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল যিনি সেনাপ্রধান হওয়ার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমার কাছে তদবির করেননি।’ আমি প্রধানমন্ত্রীকে স্যালুট দিয়ে বিদায় নিই।
সবার আগে আমি আর্মি হাউসে যাই এবং জেনারেল জাহাঙ্গীর কেরামতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি, তিনি এখন আমার পূর্বসূরি। আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, ‘স্যার কী ঘটেছে?’ তিনি আমাকে কিছুই বলেননি। তিনি কেন পদত্যাগ করলেন এ পর্যন্তও আমাকে কিছু জানাননি। তিনি আমাকে অভিনন্দন জানালেন। আমি তাকে আর কী বলতে পারি। ‘স্যার আমি আপনার জন্য দুঃখিত, তবে নিজের জন্য আনন্দিত।’ আমি তার সঙ্গে দশ-পনেরো মিনিট কাটিয়ে বেরিয়ে এলাম।
বাকি রাতের জন্য আর্মার্ড কোরের মেসে চলে এলাম। সঙ্গত কারণে সবার আগে ফোন করে যাদের খবরটা জানাই তারা হলেন আমার স্ত্রী ও আমার মা-বাবা। বলার অপেক্ষা রাখে না তারা আনন্দিত হয়েছেন। কিছুক্ষণ পর আর্মি লেফটেন্যান্ট জেনারেল আলি কুলীর ফোন পেলাম, তিনিই এখন আমার চিফ অব জেনারেল স্টাফ, পরদিন সকালে আমার সেনাপ্রধান নিয়োগ সংক্রান্ত সব অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেন। নিষ্পৃহ কণ্ঠে তিনি বললেন, ‘পারভেজ অভিনন্দন- একটি বিয়েতে যোগ দিতে কাল আমাকে পেশোয়ার যেতে হচ্ছে।’
আমি বললাম ‘ঠিক আছে, যেতে হলে অবশ্যই যাবেন।’ তারপর তিনি বললেন, ‘তারপর আমি হয়তো আর ফিরব না।’ আমি বললাম, ‘আলি এটা সম্পূর্ণভাবে আপনার ইচ্ছে,’ আমার হতাশার সুর চেপে রেখে বললাম, ‘আমি চাইব আপনি অফিস অব্যাহত রাখুন, যদি না আসতে চান সেটা আপনার ব্যাপার।’ আলি আর কখনো ফিরে আসেননি, সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়েছেন। আমার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করেছেন। আমার কোর্সমেটদের যখন ডিনারে ডেকেছি, তিনি তাতেও সাড়া দেননি।

ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে, নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়