যৌতুকের জন্য স্ত্রী হত্যার মামলায় স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

আগের সংবাদ

বিদেশিদের নজর ঢাকার দিকে : ব্যস্ত সময় পার করলেন ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কোরিয়ার শীর্ষ কূটনীতিকরা

পরের সংবাদ

স্মার্ট বাংলাদেশ : উন্নত সমাজব্যবস্থার রূপরেখা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছে সরকার। এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও ঘোষণা দেয়া হয়েছে আগামী নির্বাচনে তাদের সেøাগান হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বলতে স্মার্ট নাগরিক, সমাজ, অর্থনীতি ও স্মার্ট সরকার গড়ে তোলা হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও আর্থিক খাতের কার্যক্রম স্মার্ট পদ্ধতিতে রূপান্তর হবে। এ জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন এবং এর উন্নয়নে একটি দক্ষ ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা কাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। এছাড়া বিভিন্ন কার্যক্রম ডিজিটাইজেশন করা হবে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া, আইন ও প্রযুক্তিগত অবকাঠামো সৃষ্টি এবং সব পর্যায়ে তা বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও আর্থিক খাতের কার্যক্রমকে স্মার্ট পদ্ধতিতে রূপান্তরের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন, স্মার্ট ও সর্বত্র বিরাজমান সরকার গড়ে তোলার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক, বাণিজ্যিক এবং বৈজ্ঞানিক পরিমণ্ডলে তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিধিমালা প্রণয়ন, রপ্তানির কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ নীতি প্রণয়ন ও সময়াবদ্ধ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে ব্যবস্থা, আর্থিক খাতের ডিজিটাইজেশন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে ।
সারা বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে গেলেও দেশের অর্থনীতি এখনো যথেষ্ট গতিশীল ও নিরাপদ রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার। সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দেশ আজকের পর্যায়ে পৌঁছেছে। একসময়ে দরিদ্রপীড়িত, খরা, মঙ্গা, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত, বিপর্যস্ত জনপদের দেশ হিসেবে দুনিয়াজুড়ে পরিচিতি ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু গত কয়েক দশকের পথপরিক্রমায় এ দেশের মানুষ অনেক অসাধ্য সাধন করেছে। এখন বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত গোটা বিশ্বে। গত একদশকেরও বেশি সময়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে। জীবনযাপন, ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাংকিং, আর্থিক লেনদেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, কৃষি, শিল্প, যোগাযোগ, বিনোদন, গবেষণা প্রভৃতি ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার সবকিছুকেই সহজ, সাবলীল করে তুলেছে। স্মার্ট বাংলাদেশ ধারণার বাস্তবায়ন দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে সন্দেহ নেই। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই নানা প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমাদের অনেক আশাবাদী করে তুলেছে সরকারের বিভিন্নমুখী তৎপরতা। তবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে এর অনুসঙ্গ হিসেবে অনেক কিছুই প্রয়োজন। যা এখনো শতভাগ নিশ্চিত করা যায়নি। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব হচ্ছে আধুনিক স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে চলমান উৎপাদন ও শিল্পব্যবস্থার স্বয়ংক্রিয় সমসাময়িক সংস্করণ। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী আলোচিত নানা বিষয়ের মধ্যে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বিষয়টি একটি অন্যতম অনুষজ্ঞ। এ বিপ্লব রোবটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ন্যানো টেকনোলজি, কোয়ান্টাম, কম্পিউটিং, বায়োটেকনোলজি, ইন্টারনেট অব থিংস, থ্রিডি প্রিন্টিং, সম্পূর্ণ স্বচালিত যানবাহন ও উদীয়মান প্রযুক্তির যুগান্তকারী যুগ হিসেবে চিহ্নিত। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এখন বিশ্বের দ্বারপ্রান্তে। এর ভিত্তি হিসেবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দ্রব্য ও সেবা উৎপাদন, বিপণন ও ভোগের ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রভাব। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মানুষের চিন্তা জগতে পণ্য উৎপাদন ও সেবা প্রদানে পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। পৃথিবীর গতিপ্রকৃতি ও মানুষের জীবনধারাকে বদলে দিচ্ছে। বিশ্বের রাষ্ট্রনায়কদের সক্ষমতাকে বড় ধরনের পরীক্ষার সম্মুখীন করছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল পেতে দেশের সবাইকে উপযুক্ত করে তোলাটাও জরুরি এ ক্ষেত্রে। কারিগরি শিক্ষার যথাযথ বিকাশ ঘটানো সম্ভব হয়নি এখন পর্যন্ত। অথচ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যাবতীয় বিষয় ভালোভাবে রপ্ত করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এখন দেশের তরুণ বয়সি জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির নানা বিষয় নিয়ে বেশ আগ্রহী। এ বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করে নিজেদের সময়ের সঙ্গে, যুগের সঙ্গে মানানসই এবং উপযুক্ত করে তুলতে তাদের মধ্যে একধরনের উদ্দীপনা ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এটা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ব্যাপারে বিরাট সহায়ক নিঃসন্দেহে বলা যায়। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ এবং এর সুষম ব্যবহার আমাদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে করেছে ত্বরান্বিত। মোবাইল ব্যাংকিং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিয়েছে- এ কথা বললে খুব বেশি বলা হবে না। আমাদের অর্থনীতিতে গত একদশকে অনেক সমৃদ্ধি ঘটেছে, উন্নয়নের নতুন নতুন দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হয়েছে। উন্নয়নের মহাসড়কে রয়েছে এখন বাংলাদেশ। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ। এরপর মধ্য আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ। এখন বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখছে উন্নত দেশ হওয়ার। বর্তমান সরকারের লক্ষ্য রয়েছে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশে নিয়ে যাওয়া। মাথাপিছু কম জমি নিয়ে বাংলাদেশের মতো আর কোনো দেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নে এমন ইতিহাস করতে পারেনি। এ জন্য আমাদের বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে ক্রমাগতভাবে বেশি করে সংযুক্ত হতে হবে। বাংলাদেশ অগ্রগতির নানা ধাপ অতিক্রম করে এগিয়ে চলেছে। অথচ একসময়ে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল দরিদ্র দেশের তালিকায়। তলাবিহীন ঝুড়িও আখ্যা দেয়া হয়েছিল বাংলাদেশকে। কিন্তু গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের অগ্রগতি সহজেই চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন বিশ্বব্যাপী আলোচনার বিষয়। তর তর করে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। ছোট্ট একটি ভূখণ্ডে আমরা অনেক মানুষ বাস করি। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি। মোট আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যার চাপ বেশি হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে অভাব, দারিদ্র্য, বেকারত্ব রয়ে গেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যে গতিতে এগিয়ে চলেছে, বাংলাদেশ ঠিক সেভাবে এগিয়ে যেতে পারছে না। বাংলাদেশের অর্থনীতি একসময়ে পুরোপুরি কৃষিনির্ভর ছিল। কিন্তু এখন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে তৈরি পোশাক শিল্প। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে উজ্বল অবস্থানে পৌঁছে গেছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতি বছর বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের আগের রেকর্ড অতিক্রম করে চলেছে। এছাড়া আমাদের রপ্তানি পণ্য তালিকায় নতুন নতুন আইটেম যুক্ত হচ্ছে। আজকাল বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত বিভিন্ন শিল্পজাত সামগ্রী, ইলেকট্রনিকস পণ্য পৃথিবীর অনেক দেশে যাচ্ছে। এগুলোর বেশ ভালো চাহিদা রয়েছে। কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে একসময়ে বাংলাদেশের যে পরিচিতি ছিল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে, তা থেকে অনেকটাই সরে এসেছে সময়ের পালাবদলে। প্রযুক্তির নানা বিকাশ, শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির রাজত্ব গোটা বিশ্বের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক কাঠামোয় এনেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন।
একটি বিষয় সবাইকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে, আমাদের যে বিপুল জনসংখ্যা, তাকে জনশক্তি বা জনসম্পদে রূপান্তর করতে না পারলে জনসংখ্যার বিরাট বোঝার চাপে আমাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক কাঠামো নানাভাবে বিপর্যন্ত হবে। দিনে দিনে ভয়াবহ সংকট আমাদের সামনে এসে দাঁড়াবে। সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা, অপরাধপ্রবণতা, মূল্যবোধের অবক্ষয়, মাদকাসক্তি প্রভৃতি অনাকাক্সিক্ষতভাবে বাড়তেই থাকবে। জনবহুল একটি দেশের বেশিরভাগ নারী-পুরুষ যদি কর্মক্ষম এবং উপার্জনক্ষম হন, তাহলে সে দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি স্বাভাবিকভাবেই মজবুত হতে বাধ্য। আমাদের জনসংখ্যাকে আপদ না ভেবে জনশক্তিতে রূপান্তরের চেষ্টা চালাতে হবে। তখন তা জনসম্পদে পরিণত হবে। আমরা আমাদের জনসম্পদকে দেশের অভ্যন্তরে যেভাবে কাজে লাগাই না কেন, তা আমাদের জন্য সমৃদ্ধির নতুন বার্তা বয়ে আনবে। অর্থনীতিতে ভিন্ন মাত্রা যুক্ত করবে। জনশক্তিকে কারিগরি জ্ঞানে সমৃদ্ধ করে জনসম্পদে রূপান্তরের লক্ষ্যে আমাদের সবাইকে সচেতনভাবে এগিয়ে আসতে হবে। এটা দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেয়ার সঠিক এবং কার্যকর উপায়। বেকার, কারিগরি জ্ঞানশূন্য তরুণ-তরুণীদের মেধা, শ্রম ও মননশীলতাকে যথার্থভাবে কাজে লাগাতে না পারলে আমাদের জাতীয় জীবনে আরো অনেক দুর্যোগ এসে হানা দিতে পারে। আমরা কোনোভাবেই তা চাই না। দেশকে সমৃদ্ধ উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে হলে, জনসংখ্যার বিরাট বোঝাকে অভিশাপ মনে না করে আশীর্বাদ হিসেবে গণ্য করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি শিক্ষার বিস্তার এর কোনো বিকল্প নেই। কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরাই আমাদের অর্থনীতির চেহারাটা আরো বদলে দিতে পারে। দেশে তো বটেই, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভালো বেতনে চাকরি নিয়ে যেতে পারে তারা। আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে উপযুক্ত এবং ভালো বেতনে চাকরির সুযোগ পেতে পারে তারা অনায়াসেই। এভাবে আমাদের প্রবাসী রেমিট্যান্স ধারায় বিপুল জোয়ার সৃষ্টি হতে পারে।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে গোটা সমাজব্যবস্থাটাকে স্মার্ট করে তুলতে হবে। যাবতীয় কর্মকাণ্ডে, চিন্তাভাবনায়, জীবনদর্শনে, শিক্ষা-দীক্ষায়, ব্যবসা-বাণিজ্য জীবনযাপনব্যবস্থায়- সবকিছুতেই স্মার্টনেসের প্রকাশ ঘটাতে হবে। এর মধ্যেই আমরা নানাভাবে আধুনিক প্রযুক্তির বিভিন্নমুখী সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে প্রাত্যহিক জীবনযাপনকে অনেকটাই সহজ, জটিলতামুক্ত এবং গতিশীল করে তুলেছি। ব্যাংকিং ব্যবস্থার কথাই বলি প্রথমে। এখন বাংলাদেশে মান্ধাতা আমলের প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু নেই। ডিজিটালাইজেশনের প্রভাবে ব্যাংকিং এখন অনেক সহজ হয়ে উঠেছে। ব্যাংকে একাউন্ট খোলা এবং পরিচালনা করা অর্থাৎ লেনদেন করাটা আগের মতো জটিল নয়। অনলাইনেই আজকাল বেশিরভাগ ব্যাংকিং কাজ সারছেন গ্রাহক। ইন্টারনেট ব্যাংকিং, এটিএম সুবিধা সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সার্বক্ষণিক ব্যাংকিং সেবার সঙ্গে সংযুক্ত রাখছে। মোবাইল ব্যাংকিং এক্ষেত্রে নতুন বিপ্লবের সূচনা করেছে। এজেন্ট ব্যাংকিং মানুষের দোরগোড়ায় ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির চমৎকার ব্যবহার ঘটিয়ে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সীমাকে অবিশ্বাস্যভাবে প্রসারিত করেছে। আগামী দিনের বাংলাদেশ স্মার্ট ব্যাংকিং আরও নতুন নতুন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আসবে প্রত্যেক গ্রাহকের জন্য। ব্যাংকিং কার্যক্রমকে আরো অনেক বেশি গতিশীল করবে, আশা করা যায়। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বিভিন্ন অর্জনকে ধারণ করে আমাদের ব্যাংকব্যবস্থা অত্যাধুনিক হয়ে উঠবে ক্রমেই। এ জন্য ব্যাংক কর্মীদের ইতোমধ্যেই আধুনিক প্রযুক্তির নানা বিষয়ে অভিজ্ঞ ও দক্ষ করে তোলার কোনো বিকল্প নেই। শুধু কারিগরি বিষয়ের উন্নয়ন ঘটানোর মধ্যেই স্মার্ট ব্যাংকব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা সম্ভব নয়। দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসির মাধ্যমে যথার্থভাবে আর্থিক নানা বিষয়ে অভিজ্ঞ এবং সাক্ষর করে তুলতে হবে। ব্যাংকিং সেবা দ্রুততম সময়ে কম খরচে হাতের নাগালে রাখতে বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইস (মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ কম্পিউটার ইত্যাদি), অ্যাপস ব্যবহারে পটু হয়ে উঠতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় প্রতারণা, জালিয়াতি, অনিয়ম, দুর্নীতি, কেলেঙ্কারির ঘটনা যাতে আর ঘটতে না পারে সে ব্যাপারে ব্যাংকার, গ্রাহক উভয় পক্ষকেই যথেষ্ট সজাগ ও সতর্ক হতে হবে আবশ্যিকভাবে। স্মার্ট বাংলাদেশে ক্যাশলেস সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হবে। তখন নগদ লেনদেনের ঝক্কি ঝামেলা, ঝুঁকি, বিড়ম্বনা থাকবে না বললেই চলে। তখন সব আর্থিক লেনদেন হবে অনলাইন তথা ডিজিটাল মাধ্যমে। এটিএম কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং ইত্যাদির ব্যাপক ব্যবহার ঘটবে এভাবেই। পরিবেশবান্ধব গ্রিন ব্যাংকিং ব্যবস্থা এখন যুগের দাবি হয়ে উঠেছে। পরিবেশের প্রতি ঝুঁকিবহুল বিনিয়োগ থেকে সরে এসে পরিবেশবান্ধব শিল্পকারখানা, ব্যবসা উদ্যোগে বিনিয়োগ বাড়ানো হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশে অবশ্যই নিরাপদ সুস্থ, সুন্দর পরিবেশ রক্ষা এবং ভারসাম্য বজায় রাখতে ব্যাংকগুলো আরও বেশি সজাগ হবে। ব্যাংক বিনিয়োগ থেকে শুরু করে ব্যাংক অফিসগুলোর কর্মকাণ্ড ও কর্মপরিবেশে গ্রিন ব্যাংকিংয়ের যাবতীয় শর্ত পরিপালন করতে হবে।
বাংলাদেশ আজ যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে ডিজিটাল নানা অনুসঙ্গ জনজীবনে নতুন বিপ্লবের সূচনা করেছে। জীবনযাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আজকাল কোনো না কোনোভাবে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির নানামুখী সুবিধা ভোগ করছে। এখন মানুষ ঘরে বসেই নিত্যপ্রয়োজনীয় মুদিসামগ্রী, পছন্দের রেস্টুরেন্টের খাবার থেকে শুরু করে পোশাক-আশাক, বইপত্র, ওটিটি প্ল্যাটফরম থেকে সিনেমা, নাটক দেখার সুযোগ, ট্রেন, বাস, প্লেন, লঞ্চের টিকিট ক্রয়, হোটেল কিংবা হাসপাতালের বুকিং, ডাক্তারের অ্যাপয়নমেন্ট, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির মতো প্রয়োজনীয় কাজগুলো করে ফেলতে পারছেন অনলাইনে। ই-কমার্সের দ্রুত বিকাশ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। তবে মাঝখানে কিছু প্রতারণা, জালিয়াতির ঘটনা ই-কমার্সের ব্যাপারে জনমনে সন্দেহ সংশয় সৃষ্টি করলেও সরকারের প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে এক্ষেত্রে আবার আস্থা ফিরে এসেছে। স্মার্ট বাংলাদেশের
স্মার্ট জীবনযাপনে ই-কমার্সের বিকল্প কিছু হতে পারে না। জীবনযাপনকে সহজ, ঝামেলামুক্ত, নির্বিঘœ করতে ই-কমার্স নিত্যনতুন সেবা নিয়ে আসছে সবার জন্য। স্মার্ট বাংলাদেশে ই-কমার্স দিনে দিনে প্রাত্যহিক জীবনযাপনে আরো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় হয়ে উঠবে। তাছাড়া স্টার্টআপ ব্যবসায় নতুন নতুন উদ্যোগের সমাবেশ ঘটিয়েছে। তরুণ প্রজন্ম নিত্যনতুন আইডিয়া নিয়ে হাজির হচ্ছে, যা সামাজিক জীবনে প্রভাব বিস্তার করছে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। স্মার্ট বাংলাদেশে বিভিন্ন স্মার্ট ভাবনার সন্নিবেশ ঘটিয়ে স্টার্টআপ আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবে ধারণা করা যায়। আগামীর বাংলাদেশে প্রযুক্তিনির্ভর কর্মকাণ্ড, ব্যবসা-বাণিজ্য, উৎপাদন ব্যবস্থা, কৃষিশিল্প সব ক্ষেত্রেই অনন্য এক বিপ্লব ঘটাবে। এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বাড়ছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিজ্ঞান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে, বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ ইতোমধ্যেই অবিশ্বাস্য সাফল্য অর্জন করেছে। আগামীতে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে মেধাবীদের সুযোগ দিতে হবে। তাদের মেধা বিকাশের ও বিজ্ঞান চর্চার সুযোগ বাড়াতে হবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
বাংলাদেশের বিশাল জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করার মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। অদক্ষ জনসংখ্যা দেশের জন্য সম্পদ না হয়ে এক ধরনের বোঝা হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে সব সময়ই। উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির চূড়ান্তে পৌঁছাতে জনসম্পদকে পরিপূর্ণ করে তোলার ব্যাপারে সবাই একমত পোষণ করে আসছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চাকরি নিয়ে যাওয়া বাংলাদেশিদের বেশির ভাগ অদক্ষ হওয়ায় তারা কাক্সিক্ষত মাত্রায় উপার্জন করে দেশে পাঠাতে পারেন না। অন্যান্য দেশের কর্মীর তুলনায় প্রবাসী বাংলাদেশি অদক্ষ কর্মীরা অনেক কম বেতনে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার অনেকেই অদক্ষতার কারণে চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে দেশে ফিরে আসছেন। যে কারণে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয়ে ভাটা পড়ছে। অতএব, হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকার কোনো সুযোগ নেই। স্মার্ট বাংলাদেশের টেকসই ভিত্তি গড়তে দেশের মানুষকে যথার্থ শিক্ষিত এবং বিভিন্ন কারিগরি জ্ঞানে অভিজ্ঞ ও দক্ষ করে তুলতে হবে। জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করে সেখানকার চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ অভিজ্ঞ কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনশক্তি পাঠানোর উদ্যোগ নিতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার কোনো বিকল্প হতে পারে না।
বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরো মজবুত, টেকসই করতে রপ্তানি আয় বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু জনশক্তি রপ্তানি ও গার্মেন্টসামগ্রী রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল না থেকে রপ্তানি পণ্য ও গন্তব্যে বহুমুখীকরণে উদ্যোগী হতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ফোকাস দিতে হবে। অপ্রচলিত নানা পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে গৃহীত উদ্যোগগুলো কাজ দিতে শুরু করেছে। কৃষিজাত হোক, শিল্পজাত হোক- নিত্যনতুন আইটেম বিভিন্ন দেশে রপ্তানির সুযোগ গ্রহণ করতে হবে। আমাদের কৃষিভিত্তিক শিল্পের বিকাশ ঘটাতে হবে। কৃষিপণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণের দিকে নজর দিতে হবে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ এবং আধুনিক চাষাবাদ কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে। স্মার্ট ফার্মিং ব্যবস্থা প্রচলিত চাষাবাদ পদ্ধতির চাইতে অধিক পরিমাণে কৃষি উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টি করবে। আশার বিষয় হলো, বাংলাদেশে কৃষি জমির পরিমাণ কমে এলেও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার ঘটিয়ে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশে কৃষি ব্যবস্থাও স্মার্ট হতে হবে। বিদ্যমান কৃষি জমির সর্বোচ্চ ও সর্বোত্তম ব্যবহার ঘটিয়ে উৎপাদন বাড়ানোটা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনায় রাখতে হবে। কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে পরিমাণ পুঁজি ও শ্রম বিনিয়োগ করে ফসল ফলায় তার উপযুক্ত মূল্য পায় না। অনেক কম মূল্যে উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারে বিক্রি করতে বাধ্য হয়। ফলে কৃষি বিপ্লবের সুফল কৃষক পায় না। স্মার্ট বাংলাদেশে কৃষক যাতে তার উৎপাদিত পণ্যের উপযুক্ত মূল্য পায়, সে যাতে পরিকল্পনামাফিক সঠিক পরিমাণ কৃষি পণ্য উৎপাদনে সচেষ্ট হয়- সে ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে। উৎপাদিত কৃষিপণ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে তার মূল্যমান বৃদ্ধির পর বাজারজাত করতে পারে, সে ব্যবস্থা ও কাঠামো গড়ে তুলতে হবে গ্রামেই। দেশের পার্বত্য অঞ্চলে অব্যবহৃত বিশাল পরিমাণ পার্বত্যভূমির আবাদ করে সেখানে বিভিন্ন ফলমূল, মশলা, শাকসবজি উৎপাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন অনেকেই। সেখানে রাবার চাষের বিপুল সম্ভাবনা গড়ে উঠেছে। স্মার্ট বাংলাদেশের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হবে, দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ ও ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার ঘটিয়ে উৎপাদনের ক্ষেত্রে নবজাগরণ সৃষ্টি। আমাদের পার্বত্য এলাকার অব্যবহৃত, অনাবাদী ভূমিকে কৃষিপণ্য ফলমূল, রাবার, কাঠ উৎপাদনের আওতায় আনার লক্ষ্যে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করে তুলতে হবে। আমাদের মৎস্য সম্পদ আহরণ ও উৎপাদনে গত এক-দেড় দশকে যে অগ্রগতি হয়েছে আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য তার গতি আরো ব্যাপক করে তুলতে হবে। সমুদ্র সম্পদ আহরণে ব্লু ইকোনমির ব্যাপারে জোর দিতে হবে। সমুদ্রে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ ও তৎপরতার কারণে। সমুদ্রে যে বিপুল পরিমাণ সম্পদ এখন অনাবিষ্কৃত অবস্থায় রয়েছে, তা আহরণের ব্যবস্থা করতে হবে। এর মধ্যে মৎস্য সম্পদ, মূল্যবান খনিজ সম্পদ, প্রাকৃতিক গ্যাস অন্যতম। সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য আমাদের সমুদ্র সম্পদের যথার্থ আবিষ্কার, আহরণ ও উপযুক্ত ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সন্দেহ নেই।
একটি দেশে উন্নত-সমৃদ্ধ টেকসই অর্থনৈতিক কাঠামোর জন্য প্রয়োজন উন্নত আধুনিক নির্বিঘœ যোগাযোগ ব্যবস্থা। গত দেড় দুই দশকে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক উন্নয়ন ঘটেছে। সারাদেশে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী যোগাযোগ ব্যবস্থা। যার সুফল দেশবাসী পেতে শুরু করেছেন ইতোমধ্যেই। পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে গোটা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছোট বড় অনেক সেতু নির্মাণের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক ধরনের স্বস্তি এবং নির্বিঘœভাব সৃষ্টি হয়েছে। খুব কম সময়ে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যোগাযোগ ও যাতায়াতের দারুণ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের সময় অনেক কম লাগছে আগের চাইতে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হওয়ার মাধ্যমে চট্টগ্রামসহ কক্সবাজারের সঙ্গে যোগাযোগে আরেকটি সোনালি দিগন্ত উন্মোচিত হবে। স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি। রেল যোগাযোগেও অত্যাধুনিক নানা সুযোগ-সুবিধা সংযোজিত হচ্ছে। এটাও স্মার্ট যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য বিরাট সহায়ক ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। একইভাবে বিমান তথা আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থাও নিত্যনতুন বিমান সংস্থার আত্মপ্রকাশ এবং নতুন বিমানবহর যুক্ত হওয়ায় আরো অনেক স্মার্ট হয়ে উঠেছে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। রাজধানী ঢাকা শহরে অসহনীয় যানজট সবার জন্য চরম ভোগান্তির কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তা নিরসনের জন্য মেট্রোরেল চালু হয়েছে ইতোমধ্যে। স্মার্ট পরিবহন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মেট্রোরেল অন্যতম অবলম্বন হিসেবে বিবেচিত হবে সন্দেহ নেই। বিশ্বের বিভিন্ন আধুনিক স্মার্ট শহরের মতো বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় মেট্রোরেলের পাশাপাশি পাতাল রেল চালুর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ঢাকার পর চট্টগ্রাম শহরেও মেট্রোরেল চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। এভাবেই দিনে দিনে বদলে যাবে আমাদের নগরপরিবহন ব্যবস্থা। স্মার্ট নগরের জন্য আধুনিক দ্রুত গতিসম্পন্ন সহজ সাবলীল পরিবহন ব্যবস্থা একান্ত জরুরি। স্মার্ট বাংলাদেশের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এ বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ দেয়া হয়েছে।
আধুনিক সমাজ জীবনে কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য তথা দৈনন্দিন জীবনে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি। গত দেড় দুই দশকে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণের ফলে আমাদের দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থায় অভাবনীয় উন্নতি সাধিত হয়েছে। শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধা নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করা হলেও সাম্প্রতিক সময়ে জ¦ালানি সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থায় কিছুটা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক নানা কারণে এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যৎ স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য বিদ্যমান জ¦ালানির উৎস, বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে বিকল্প হিসেবে নবায়ণযোগ্য জ¦ালানির সংস্থান ও ব্যবহারের পাশাপাশি সৌরবিদ্যুৎ, জলবিদ্যুৎ, বায়ুচালিত টারবাইন স্থাপনের মাধ্যমে দেশব্যাপী বিদ্যুৎ উৎপাদনের নতুন নতুন উৎসের সন্ধান করতে হবে। কারণ, স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ও উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যাপারটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে প্রচলিত ব্যবস্থার ওপর ভরসা করে থাকার কোনো সুযোগ নেই।
স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য নতুন স্মার্ট আধুনিক ধ্যানধারণার বিকাশ ও প্রয়োগ ঘটাতে হবে প্রশাসনিক ব্যবস্থায়। প্রশাসনকে সময়োপযোগী এবং গতিশীল করতে হবে। এ জন্য উদ্ভাবনী শক্তির যথার্থ প্রয়োগ ঘটাতে হবে। বিভিন্ন স্তরে বিদ্যমান অনিয়ম, কুসংস্কার, উপনিবেশিক ধ্যানধারণার চর্চা, কর্তৃত্ববাদী আমলাতান্ত্রিক মনোভাব, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচার প্রশাসনকে পিছিয়ে রাখছে। গণমুখী আধুনিক স্মার্ট প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু করতে না পারলে স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথ বাধাগ্রস্ত হবে বারবার। বাংলাদেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও কাঠামোর অনেক পরিবর্তন হয়েছে গত ৫২ বছরে। কিন্তু উপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থার অনেক আচরণ, বৈশিষ্ট্য আজও লালন করা হচ্ছে। ব্রিটিশ পাকিস্তানি আমলের অনেক বিধিবিধান আজও বলবৎ রয়েছে। প্রশাসনিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, লালফিতার দৌরাত্ম্য আজও বিদ্যমান। যা সাধারণ মানুষের জন্য হয়রানি, ভোগান্তি, দুঃখ-দুর্দশা বয়ে আনছে। স্বাধীন দেশে প্রশাসনিক ব্যবস্থায় তেমন জটিলতা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারেনা। স্মার্ট বাংলাদেশের বাস্তবায়নে অতীতের সব জটিলতার জঞ্জাল অপসারণ করতে হবে। জনগণের কল্যাণে নিবেদিত হবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। প্রভুসুলভ স্বেচ্ছাচারী আচরণ ত্যাগ করে প্রকৃতই জনগণের সেবক হয়ে উঠতে হবে। ইতোমধ্যে সরকারি কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা বাড়াতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। অনাবশ্যক বিভিন্ন কার্যক্রম বিলোপ করার মাধ্যমে সহজ সাবলীল করা হয়েছে। খুব সহজে জটিলতা ছাড়াই সরকারি সেবা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এসব সম্ভব হয়েছে বর্তমান সরকারের কল্যাণমুখী জনবান্ধব প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আন্তরিকতার কারণে। তবে গৃহীত পদক্ষেপগুলো এখনও যথেষ্ট বলে বিবেচিত হতে পারেনি। আরো অনেক পদক্ষেপ নিতে হবে স্মার্ট প্রশাসন গড়ে তোলার জন্য।
সবক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বর্তমান বিশ্বে সামাজিক, অর্থনেতিক প্রেক্ষাপটে সব দেশেই উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। এখন বাংলাদেশেও সমৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কলকারখানায়, কৃষিক্ষেত্রে সেবা খাতে সর্বত্রই উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ব্যাপারে জোর দেওয়া হচ্ছে। স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য বিদ্যমান জনশক্তি, মেধা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, উদ্ভাবনী শক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার ঘটিয়ে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর লক্ষ্যে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ জন্য দেশি-বিদেশি নতুন বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে হবে। নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির প্রয়াস চালাতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশের কোনোভাবেই কেউ বেকার থাকতে পারবে না। কর্মক্ষম জনশক্তির পরিপূর্ণ ব্যবহারের লক্ষ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশ এবং ব্যবহার বেড়ে গেলে অনেক মানুষ বেকার হয়ে পড়তে পারে। সেই সম্ভাব্য বেকারত্বকে মোকাবিলার জন্য স্মার্ট বাংলাদেশের স্বার্থেই উপযুক্ত কর্মসংস্থানের বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে মিতব্যয়কে প্রাধান্য দিয়ে অপ্রয়োজনীয় খরচ পরিহারের নীতি অবলম্বন করতে হবে।
স্মার্ট বাংলাদেশে শহর এবং গ্রামের মধ্যে ব্যবধান ঘুচিয়ে আনাটাই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও এখন অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার অগ্রগতি গ্রামীণ জীবনে দারুণ গতি এনেছে। বদলে গেছে গ্রামীণ জীবনধারা। শহরের সঙ্গে গ্রামের ব্যবধান থাকলে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলাটা অসম্ভব হবে অনেকটা। এ জন্য গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটাতে হবে ব্যাপকভাবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি উৎপাদন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপন ইত্যাদির সুযোগ বাড়াতে হবে গ্রামাঞ্চলে। যাতে মানুষ শহরমুখী না হয়, তেমন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে ছোট-বড় শিল্পকারখানা স্থাপনের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হলে ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ শহরগুলোতে জীবিকার জন্য গ্রাম থেকে আসা মানুষের চাপ কমবে। ফলে শহর এবং গ্রামের মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ভারসাম্য গড়ে উঠবে। যা স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য একটি সহায়ক উপাদান হয়ে উঠতে পারে।
অপরূপ প্রাকৃতিক শোভামণ্ডিত সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশ বিদেশি পর্যটকদের বারবার আকর্ষণ করে এসেছে। এ দেশে পর্যটনের অনেক সম্ভাবনা থাকলেও বিদ্যমান নানা অব্যবস্থা, অমনোযোগিতা, যুগোপযোগী ধ্যান-ধারণার প্রয়োগে ব্যর্থতা আমাদের পর্যটন শিল্পকে কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি আজও। স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটাতে হবে। আমাদের প্রাকৃতিক শোভামণ্ডিত নয়নাভিরাম সমুদ্রসৈকত, পার্বত্য এলাকার অপরূপ সৌন্দর্য, নদী বিধৌত বাংলাদেশ, গ্রাম বাংলার অনবদ্য সবুজ-শ্যামল রূপকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে সচেতন, শক্তিশালী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে জরুরিভিত্তিতে রিভার ট্যুরিজম, ভিলেজ ট্যুরিজম, পার্বত্য এলাকাগুলোতে নিরাপদ ভ্রমণের পরিবেশ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে বিনিয়োগের প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের অনুপ্রাণিত করতে হবে। এ জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে বড় বড় অঙ্কের বিনিয়োগে। অতীতের দ্বিধা সংকোচ ভয় শঙ্কা কাটিয়ে পর্যটন খাতে নতুন নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্মার্ট পর্যটন শিল্প গড়ে তুলতে পারে।
স্মার্ট বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা আমাদের সবার লক্ষ্য এবং স্বপ্ন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাই স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে ধরা দেবে। শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন, সুষম সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার নতুন সংগ্রাম শুরু করতে হবে। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার মধ্যে ধনী-গরিবের মধ্যে ব্যবধান বাড়ে, ধনী শ্রেণি আরও বিত্তবৈভবের মালিক হয়। গরিব আরো গরিব হয়। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে দারিদ্র্যমুক্ত শোষণ-বঞ্চনাহীন সুষ্ঠু অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা। দারিদ্র্যদূরীকরণে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি সবাইকে কিছুটা বিপর্যস্ত করলেও সরকারের নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণের ফলে শোচনীয় পর্যায়ে যায়নি এখনো। আগামীতে সাধারণ মানুষ যাতে ভালোভাবে খেয়েপরে বাঁচতে পারে সে সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। সেখানেই হবে স্মার্ট বাংলাদেশের সার্থকতা। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির আয় বৈষম্য ঘুচিয়ে সবার আর্থিক সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সবার জন্য উন্নতমানের আধুনিক শিক্ষাগ্রহণের সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ক্রমেই পরিবর্তিত হচ্ছে। বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষার কারিকুলাম ও পরীক্ষা পদ্ধতিতে পালাবদল ঘটছে। স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য বাস্তবায়নে শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকীকরণ জরুরি। বেকার সৃষ্টির শিক্ষা নয়, আমাদের শিক্ষাকে সময়োপযোগী, বাস্তব কর্মোপযোগী করে তোলার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পুঁথিগত বিদ্যা একজন শিক্ষার্থীকে কর্মোপযোগী করে তোলার জন্য কোনোভাবেই যথেষ্ট নয়। শিক্ষা ব্যবস্থাকে স্মার্ট করে তুলতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এখন বিভিন্ন পর্যায়ে আধুনিক পদ্ধতির ব্যবহারিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীদের নিজেকে স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য যথাযথভাবে উপযোগী করে তোলার অবারিত সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। সমাজ থেকে পুরোনো ধ্যানধারণা, কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা, কুপমুণ্ডকতা, স্বার্থপরতা, দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার প্রবণতা দূর করতে মূল্যবোধের বিকাশ ঘটানোর পাশাপাশি সৃজনশীল সাংস্কৃতিক চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটাতে হবে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, মৌলবাদী চিন্তাধারার চর্চা রোধ করতে শিক্ষাব্যবস্থাকে বাস্তবভিত্তিক আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর করে তুলতে হবে। যে শিক্ষা গ্রহণ করে ছেলেমেয়েরা নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রস্তুত হতে পারবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে তেমন শিক্ষা প্রয়োজন।
স্মার্ট বাংলাদেশ ভাবনা কোনোভাবেই অলীক কল্পনা কিংবা অবাস্তব কোনো চিন্তাভাবনার প্রকাশ নয়। আগামী দিনের সমৃদ্ধ স্বনির্ভর আধুনিক উন্নত দেশ ও জাতি গঠনের চমৎকার রূপরেখা বলা যায়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যেখানে তলাবিহীন ঝুঁড়ির আখ্যা পেয়েছিল বাংলাদেশ। অভাব, দুঃখ, দারিদ্র্য, মন্দ, খরা, বন্যা, অনাবৃষ্টি, মহামারি, ফসলহানি, ঝড়, সাইক্লোন ইত্যাদি যুগে যুগে হানা দিয়েছে বাংলার জনপদে। কিন্তু সাময়িকভাবে বিপর্যস্ত হলেও এ দেশের মানুষ দমে যায়নি। হাত গুটিয়ে বসে থাকেনি। শত প্রতিকূলতা, দুর্ভোগ, দুর্যোগ মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলার কোটি কোটি মানুষ। যুদ্ধবিধ্বস্ত ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতির সদ্য স্বাধীনতা লাভকারী দেশটি চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অবশেষে দীর্ঘদিনের পথপরিক্রমার পর আজকে যে পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে তা গোটা এক দারুণ বিস্ময় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
অসাম্প্রদায়িক শোষণমুক্ত স্বাধীন সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়েই বাংলাদেশ পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়েছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার সেই অসাম্প্রদায়িক শোষণবঞ্চনামুক্ত সমাজ গঠনে সবাই নিজেদের সমর্থন ব্যক্ত করলেও বাস্তবে এখনো নানা প্রতিকুলতা রয়ে গেছে। ফলে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, আধিপত্যবাদী আচরণ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে সমাজে মাঝেমধ্যে। যা চরম অস্বস্তি, অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। মানুষ মুক্তভাবে কিছু প্রকাশ করতে পারে না। মুক্ত চিন্তার বিকাশ বারবার বাধাগ্রস্ত হয়। এসবই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার পথে অন্তরায়। অসাম্প্রদায়িক, শোষণ-বঞ্চনামুক্ত স্বাধীন সমাজ ব্যবস্থা, সুস্থ রাজনৈতিক ভাবনার বিকাশে সব দল সব পক্ষকে আন্তরিক হতে হবে। মুখে যা বলা হচ্ছে তা অন্তরেও লালন করতে হবে। কাজের মাধ্যমে তা প্রমাণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে হিপোক্রেসির কোনো উপায় নেই। হিপোক্রেট রাজনীতিবিদ, সমাজপতি, বুদ্ধিজীবী, লেখক, শিল্পীদের দৌরাত্ম্যমুক্ত করতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট রাজনৈতিক ব্যবস্থা কাঠামো প্রতিষ্ঠা করতে হবে। স্মার্ট নির্বাচন পদ্ধতি গড়ে তোলার ব্যাপারে সবাইকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। যেখানে সাধারণ জনগণ তার পছন্দের প্রার্থীকে নির্বিঘেœ নিঃসংকোচে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে পারবে। জোর করে প্রভাব খাটিয়ে কালো টাকার শক্তিকে কোনো দুর্বৃত্ত যাতে নির্বাচিত হতে না পারে সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা কোনোভাবেই ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন বজ্রকণ্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন, ‘দাবায় রাখতে পারবা না। সত্যি তাই। বাঙালি বীরের জাতি, সংগ্রামী জাতি। বাঙালিকে দমিয়ে রাখা সম্ভব নয়। শত ষড়যন্ত্র, বাধা-বিপত্তি প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। ২০৪১ সালকে লক্ষ্য নির্ধারণ করে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যে মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তার বাস্তবায়ন ঘটবে ধাপে ধাপে। সবার সম্মিলিত, স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে বাংলাদেশ ক্রমেই এগিয়ে যাবে অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে। স্মার্ট বাংলাদেশ ভাবনার বিকাশ ঘটবে দিনে দিনে। আরও নতুন নতুন অনেক কার্যক্রম যুক্ত হবে এর সঙ্গে। যুগের দাবি মিটিয়ে সবার শান্তি, সুখ-সমৃদ্ধি ও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করে শোষণমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক আধুনিক চিন্তাচেতনার উন্নত এক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবেই- এটা আজকের দৃঢ় প্রত্যাশা সবার।

রেজাউল করিম খোকন
অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার, কলাম লেখক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়