যৌতুকের জন্য স্ত্রী হত্যার মামলায় স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

আগের সংবাদ

বিদেশিদের নজর ঢাকার দিকে : ব্যস্ত সময় পার করলেন ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কোরিয়ার শীর্ষ কূটনীতিকরা

পরের সংবাদ

সাংবাদিকতা ও সাহিত্যে ভোরের কাগজ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

একজন লেখক ও পাঠকের কাছে ভোরের কাগজের গ্রহণযোগ্যতা কতটা তা দীর্ঘদিন যাবত উপলব্ধি করে আসছি। বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনে পত্রিকাটির অবস্থান যেমন শীর্ষস্থানীয়, ঠিক তেমনই সাহিত্যচর্চায়, বিশেষত বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ তৈরিতে পত্রিকাটির অবদান অতুলনীয়। কথাগুলো বলা হচ্ছে নিখাদ অভিজ্ঞতার আলোকে। সাংবাদিক পরিবারের একজন অতি সাধারণ ও কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে বরাবরই সত্য পাঠ ও সত্য প্রকাশের প্রতি দারুণ এক দুর্বলতা কাজ করেছে এবং আজো করে। এ এক বহমান, চলমান বোধ। কঠিন আকর্ষণ। অনেকটা আপসহীনভাবেই সত্য পাঠ ও সত্য প্রকাশে অনড়, যা বললে যথার্থ বলা হয়।
প্রসঙ্গক্রমে বাবার কথা বলতে হয়। আমার বাবা মুহ. আসফ উদদৌলা রেজা ছিলেন একজন আপাদমস্তক সাংবাদিক। দৈনিক ইত্তেফাকের সাবেক কার্যনির্বাহী ও বার্তা সম্পাদক। জন্মের পর থেকে দেখেছি তার সাংবাদিকতার চালচলন ও আচার-আচারণ। সত্য বলতে কার্পণ্য যেমন করেননি, তেমন ভীত হননি প্রকাশে। সৎ, নির্ভীক এবং একজন দেশপ্রেমিক সাংবাদিক বলতে যা বুঝায় বাবা ঠিক তেমনই একজন অতি সাধারণ ছিলেন। কথাটা সন্তান হিসেবে কেবল আমার বা আমাদের পরিবারের নয়, বরং যারা আজো সৎ, নির্ভীক ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সাংবাদিক পেশায় নিযুক্ত আছেন কিংবা সাংবাদিক পেশা থেকে অবসর নিয়েছেন, কথাটা তাদের অনেকেরই। একটা সময় ছিল যখন সাংবাদিকতা পেশা হিসেবে গড়ে উঠতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হতো। সাংবাদিকদের লোকে বলত ছাপোষা মানুষ। অর্থনৈতিক স্বল্পতা কিংবা অসচ্ছলতার কারণেই এই পরিচিতি ছিল। অতিরিক্ত টাকা কামাই, ধনসম্পদ বানাবার চিন্তা, পাঁয়তারা ছিল না সেইসময়কার সাংবাদিকদের। দেশ ও জাতির কল্যাণে সত্য সংবাদ পরিবেশনই ছিল মূল ও একমাত্র লক্ষ্য। এক কথায়, সততার সঙ্গে জড়িতরাই এই কাজ করতেন। দেশপ্রেম ও আদর্শ ছিল এই পেশায় কাজ করার মূলমন্ত্র, ব্রত। অন্যায়ের কাছে, অনিয়মের কাছে মাথা নত করেননি। কেনাবেচার মাঝে অবস্থান ছিল না। বরং সাহস নিয়ে প্রতিটি অধ্যায় তারা পাড়ি দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী তারা একই ধারায় আছেন, থেকেছেন। খুব মনে পড়ে, একজন নির্ভীক সাংবাদিক হয়ে বাবা কীভাবে রাষ্ট্রীয় বড় বড় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তার আদর্শের প্রশ্নে। লোভ, লালসা কোনো কিছুই তাকে স্পর্শ করেনি। একজন সাধারণ সাংবাদিক, অসাধারণ নৈতিক মূল্যবোধ ও দেশপ্রেম নিয়ে তিনি ইহকাল ত্যাগ করেছেন। কাজের সূত্রে বাবার সঙ্গে ভোরের কাগজের কোনো সম্পর্ক না থাকলেও সাংবাদিকতার আদর্শ ও নৈতিকতার সঙ্গে রয়েছে নিবিড় মিল ও চিরন্তন এক যোগসূত্র। আমি তেমনটাই খুঁজে পেয়েছি, দেখেছি। এই মিল সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার পেশার সঙ্গে যায়। এই মিল বস্তুনিষ্ঠ ও সত্য সংবাদ পরিবেশনে আপসহীনতার মিল। শহীদ সাংবাদিক সিরাজ উদ্দীন হোসেন কাকা ও বাবা মুহ. আসফ উদদৌলা রেজার অবর্তমানে দৈনিক ইত্তেফাকে অনেক কিছুরই অভাব, অনুপস্থিতি অনুভব করেছি। এই অনুপস্থিতি ও অভাবটা প্রবল হলো নিজের এক অর্জিত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে। যা কখনোই কাম্য ছিল না। সত্য প্রকাশে দ্বিধাগ্রস্ততা ও নিরুৎসাহিত হওয়ার মানে অন্য কিছু দাঁড়ায়। অনিয়ম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে এমন একটি লেখা প্রকাশ করতে না পারায় অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয় বৈকি। বুঝে নিতে হয়েছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পেশার রং ও ধরন বদলে গেছে। আদর্শের বাসা বদল হয়েছে। এখন সংবাদপত্র বা সাংবাদিক বললে চোখের সামনে ভেসে ওঠে সংবাদ বাণিজ্য, ব্যবসায়িক সাংবাদিকতা। অথবা রাজনৈতিক প্রচণ্ড আপসকামিতা।
ব্যতিক্রম হয়ে আছে তার মাঝে কোনো কোনো সংবাদপত্র। এক কথায়, ভোরের কাগজ তার অন্যতম। যখন যে সত্য প্রকাশে লেখা পাঠানো হয়েছে তা মুদ্রিত হয়ে পাঠকের কাছে পৌঁছেছে। লেখা লিখলে ও তা প্রকাশ পেলেই যে, সমস্যার সমাধান হয়ে যায় কিংবা সংশ্লিষ্টরা দায়িত্বশীল হয়ে ওঠে, তা কিন্তু নয়। তবে লেখকের সত্য বলার সুখ ও স্বস্তির আনন্দ ব্যাপক হয়। সেইসঙ্গে সত্য প্রকাশে সংবাদপত্রের দায়বদ্ধতা সমাজ ও রাষ্ট্রে সত্য অনুশীলনে, অনুসরণে বড় ভূমিকা রাখে, ভূমিকা রাখতে সচেষ্ট হয়। এতে পাঠকসমাজে পরিবর্তন আসে এবং সেটা মননে, চিন্তা-চেতনায়। যেটা সুস্থ, সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে অত্যন্ত জরুরি।
একটা গল্প বলি। দুটো লেখা লিখেছি। একটা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্যের অনিয়ম, শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং অপরটি, নদী ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে লাগাতার অনিয়ম, দায়িত্বে অবহেলা বিষয়ে। শীর্ষ স্থানীয় দৈনিকে পাঠানো হলো। নিয়মিত লিখি বিধায়। কিন্তু লেখা দুটির ক্ষেত্রে অপারগতা প্রকাশ করা হলো প্রচারে। যুক্তি হলো, এতে পুলিশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির আশঙ্কা ও পত্রিকার মালিক, সম্পাদক পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত বিধায় প্রশ্নবিদ্ধ হবার সম্ভাবনা। বিস্মিত হয়েছিলাম এই ভেবে যে, যে পত্রিকাটির জন্ম সত্য উন্মোচনে এবং মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সপক্ষে, অথচ দেশের মানুষের স্বার্থ সংরক্ষণে, কল্যাণে সেই পত্রিকার দায়বদ্ধতা কই! লেখা দুটি প্রকাশের জেদ ছিল। দু’একটি পত্রিকা ঘুরে শেষ অব্দি পৌঁছাতে হলো ভোরের কাগজে। সাবলীলভাবে তা প্রকাশিত হলো।
আরেকটি ঘটনা উল্লেখ করতে হয় প্রসঙ্গক্রমে। কর আদায়ের লক্ষ্যে গুলশান, বনানীসহ অভিজাত এলাকার অবৈধ মদ ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স প্রদানে একজন মন্ত্রীর পরামর্শ বিষয়ে একটি লেখা তৈরি হয়ে গেল। বিবেক লিখতে বাধ্য করল। অবৈধ ব্যবসার জন্য শাস্তি না দিয়ে শুধু কর আদায়ের জন্য তাদের লাইসেন্স দিয়ে পুরস্কৃত করবার এ কেমন যৌক্তিকতা ভেবে হতভম্ব হয়েছিলাম। বিশ্বাস করুন পাঠক, বড় বড় সেøাগান এঁটে দেয়া পত্রিকার একটি হতে বলা হলো, পত্রিকার মালিকের নিজের মদের ব্যবসা আছে। সুতরাং ছাপা সম্ভব নয়। আরেকটি পত্রিকার মতে, রাজনৈতিক সমস্যা হতে পারে। সব লেখা যায় না। শেষ অব্দি আবারো ভোরের কাগজ। ভোরের কাগজে এমন অসংখ্য লেখার ঠিকানা হয়েছে। দেশের মানুষের পক্ষে, কল্যাণে ও স্বার্থে কোনো লেখাই ভোরের কাগজ থেকে ফিরে আসেনি। সংবাদপত্রের জগতে এখানেই ভোরের কাগজের বড় অর্জন, বড় সার্থকতা এবং অন্যান্য পত্রিকার সঙ্গে তার ভিন্নতা। কথাগুলো একান্তই আমার এবং সেটা অভিজ্ঞতা থেকে।
নারায়ণগঞ্জের মেয়র নির্বাচন প্রসঙ্গে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ লেখা ভোরের কাগজ ছাপাতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেনি। আমার মনে হয়েছে, কোনো সত্য অভিমত বা তথ্য প্রকাশ পেলে রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে, সুতরাং এমন লেখা প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকা ভালো- এমন উপলব্ধি বা বোধ কিংবা ভীরুতা ভোরের কাগজ কর্তৃপক্ষের নেই, নেই সম্পাদক এবং তার সংবাদকর্মীদের। সম্পাদক শ্যামল দত্তের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের নেপথ্যে সক্রিয় সেটা সহজেই অনুমান করা যায়। কাউকে ছাড় দিয়ে, ছেড়ে দিয়ে সংবাদ পরিবেশন হয় বলে মনে পড়ে না। বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে সবাই যেন অঙ্গীকারবদ্ধ।
এটা অস্বীকার করবার উপায় নেই যে, উন্নয়ন ও আধুনিকতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে তোষামোদী আর তেলবাজির সংস্কৃতি চর্চা। এই তোষামোদী আর তেলবাজির সংস্কৃতি যে কতটা সর্বনাশ বয়ে আনছে তা কেবল ভুক্তভোগীরাই জানে। শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সর্বত্রই রয়েছে তেলবাজ। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, রাষ্ট্রের অন্যান্য সেক্টরের মতো অনেক প্রচারমাধ্যমও এই তোষামোদী, তেলবাজি সংস্কৃতি চর্চায় ব্যতিব্যস্ত। সত্য গোপন করা কিংবা মিথ্যে সংবাদ পরিবেশন করে কাউকে তুষ্ট করা, ফায়দা নেয়া ইত্যাদি নানান অভিযোগ ওঠে প্রায়ই সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে। যে কারণে ভুক্তভোগীর মতো অনেক সাধারণ মানুষ সাংবাদিকের নাম শুনলেই ভয়ে কেঁপে ওঠেন। সেই সঙ্গে সংবাদপত্রের ওপর থেকে তাদের আস্থা হারায়। তবে সংবাদপত্র জগৎকে সবচাইতে বেশি বিভাজিত করেছে, বিতর্কিত করেছে প্রচলিত রাজনীতি। রাজনীতির মতাদর্শগত ভিন্নতা কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, গোটা সমাজকেই বিভাজিত, দ্বিখণ্ডিত করেছে। এই বিভাজনের থাবা পড়েছে প্রচারমাধ্যমে যেমন, তেমন আবার বিভাজন নিয়েই জন্মেছে আরো কিছু প্রচারমাধ্যম। পত্রিকার পাতা উল্টালে পরিষ্কার বুঝা যায় যে, কোন পত্রিকা কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে কাজ করছে, অহেতুক কার গুণগান গাইছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ও রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারে পত্রিকাগুলো যেভাবে ব্যবহৃত হয় তাতে হতাশ হতে হয়। হাতেগোনা মাত্র ক’টি পত্রিকা ছাড়া প্রায় সবই সেই কাতারে। ভোরের কাগজ কিন্তু তার স্বাতন্ত্র্যতা বজায় রেখেছে সতর্কতার সঙ্গে। কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী কিংবা রাজনৈতিক দল বা প্রতিষ্ঠানকে অহেতুক ও অন্যায়ভাবে সমর্থন করে এমন কোনো বানানো সংবাদ প্রকাশ করতে দেখেছি বলে মনে হয় না। বরং শক্তভাবে দেশ ও দশের স্বার্থের কথা বলতে দেখেছি।
মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস প্রকাশে ভোরের কাগজের রয়েছে বিচক্ষণতা ও যথার্থ উদ্যোগ। ইতিহাসকে সমৃদ্ধভাবে উপস্থাপনে তার রয়েছে নানান আয়োজন। রাজনৈতিক যে বিভাজন বিদ্যমান রাষ্ট্রে তার ঊর্ধ্বে থেকে পত্রিকাটি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জাগরণের কাজটি করছে। লক্ষ্য করেছি, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল পাঠকদের উল্লেখযোগ্য অংশটাই ভোরের কাগজের নিয়মিত পাঠক। সম্পাদক ও সংবাদকর্মীদের এও এক বড় সফলতা নিঃসন্দেহে। রাজনৈতিক দলগুলোর কারণে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়টি যখন কারোর কারোর কাছে একটা রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে মাত্র এবং কেউ কেউ ভেবে নিচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধ কথাটা কেবল একটা রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানার মাত্র, তখন ভোরের কাগজের মতো পত্রিকা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য মুক্তিযুদ্ধ যে একমাত্র উপায় ও অন্যতম কৌশল ছিল, সেই সত্য প্রতিষ্ঠায় ও প্রকাশে, প্রসারে নীরবে কাজ করে চলেছে। নতুন প্রজন্মের পাঠকের চিন্তা-চেতনায় সেই সত্যের বীজ বপন করে চলেছে। মুক্তিযুদ্ধই যে আমাদের জাতিগত অস্তিত্বের চরম সত্য, ভোরের কাগজ তা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে। আজকাল দেখা যায়, স্বার্থের ব্যাট ও বল এর মাঝে সমন্বয় না হলে, যে কারণে এই সমন্বয় হয় না তার গোষ্ঠী উদ্ধার চলে যত্রতত্র এবং তা অশোভনীয়ভাবে। আমার মনে হয়, ভোরের কাগজের তেমন পরিস্থিতিতে পড়ার প্রয়োজন পড়েনি, পড়বেও না।
বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ঐতিহ্য সব কিছুতেই এক পরিপূর্ণতার ছাপ পাওয়া যায় পত্রিকার পাতায়। এটা নিছক প্রকাশের জন্যই প্রকাশ নয়, বরং বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চায় সুষ্ঠু ও সুস্থ ধারা বজায় রাখার পাঠশালা রীতিমতো। তরুণদের আগ্রহ বৃদ্ধি, আকৃষ্ট করা সব আয়োজন ও ব্যবস্থা থাকে পত্রিকাটিতে। দীর্ঘদিন ধরে লেখালেখি করে সেই অভিজ্ঞতা হয়েছে। তরুণ লেখকদের জন্য সাহিত্য চর্চার এক নির্ভরযোগ্য জায়গায় পরিণত হয়েছে ভোরের কাগজ। আমার মনে হয় না এতটা সহজ বিচরণ তরুণ লেখকদের জন্য আর কোথাও আছে কিংবা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তাদের উৎসাহিত করার চেষ্টারও কমতি নেই। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির জন্য অব্যাহত সক্রিয় থেকেছে। থাকার চেষ্টা রয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি যে একটা অন্যতম অংশ হিসেবে ছিল, সেটা অনেকেই ভুলে গেলেও ভোরের কাগজ ভুলেনি।
একটি দেশ, একটি জাতির প্রকৃত উন্নয়ন তখনই হয় যখন দেশটির প্রতিটি নাগরিক তার দেশের জন্য দায়বোধ করে, দায়িত্বশীল হয়ে ওঠে। এই দায় ও দায়িত্ব অনিয়ম, অনৈতিক কাজ হতে বাধা দেয়। হতে দেয় না। আবার একটি রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য যত না সশস্ত্র বাহিনীর প্রয়োজন পড়ে, তার অধিক প্রয়োজন পড়ে দেশপ্রেমিক সচেতন নাগরিকের। দেশপ্রেম কিন্তু অস্ত্রের চাইতেও শক্তিশালী। এটার জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা ডিগ্রি লাগে না। কেবল দায় ও বোধ লাগে। এই দায় ও বোধ জাগিয়ে তুলতে সংবাদপত্রের ভূমিকা থাকে, থাকতে হয়। সংবাদপত্র যদি প্রতিটি নাগরিকের স্বার্থ সংরক্ষণে সক্রিয় থাকে তাহলে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। দেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সে এখন সেটাই জরুরি। জরুরি, অরাজনৈতিক ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা। আমি ভোরের কাগজের আরো সাফল্য আশা করি।

স্বপ্না রেজা
কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়