মাদকবিরোধী অভিযান : রাজধানীতে গ্রেপ্তার ৭০

আগের সংবাদ

রাজশাহীর জনসভায় শেখ হাসিনা : আ.লীগ কখনো পালায় না

পরের সংবাদ

আলোয় রঙে চীনা উৎসব

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মদ হুসাইন ভূঁইয়া, সাংহাই থেকে
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে সূর্যের আবর্তনের উপর নির্ভর করে তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এছাড়াও আছে চান্দ্র ক্যালেন্ডারও। এর একটি চীনা লুনার ক্যালেন্ডার অনুসারে জাঁকজমকের সাথে পালন হচ্ছে চাইনিজ নিউ ইয়ার বা চান্দ্রবর্ষ। চীনের বাসিন্দাদের সঙ্গে এ আয়োজনে উদযাপনে যোগ দিয়েছে নানা প্রান্ত থেকে আসা প্রায় ২০ কোটি পর্যটক। পনেরদিন ধরে চলা এ আয়োজনে আলোক সজ্জায় ও ফানুসে সেজে ওঠে প্রতিটি বাড়ির রাস্তা ও ভবনও। চীনা রাশিচক্র অনুসারে নতুন বছর হবে খরগোশের বছর।

চাইনিজ নিউ ইয়ার বা ইংরেজিতে লুনার নিউ ইয়ার হল বিগত বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর সময়। দীর্ঘ ছুটিতে সাধারণত পরিবারের সকলে একত্রিত হয়ে এটি উদযাপন করে থাকে। চীন ও পূর্ব এশিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশে চীনা চান্দ্র নববর্ষ ২০২৩ উদযাপন শুরু হয়েছে ২১ জানুয়ারির রাত থেকে। এখন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পটভূমি থেকে আসা বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশেরও বেশি মানুষ চাইনিজ নিউ ইয়ার বা ইংরেজিতে লুনার ইয়ার উদযাপন করে। একই সাথে এটি উত্তর গোলার্ধে বসন্তের আগমন উদযাপন করার সময়। যে-কারণে এটি ‘বসন্ত উৎসব’ নামেও পরিচিত।
চাইনিজ নিউ ইয়ার উদযাপনের শুরুর কথা চীনের প্রাচীন ইতিহাস খুঁজলে পাওয়া যায়। কিংবদন্তি চীনা সম্রাট ইয়াও (খ্রিস্টপূর্ব ২৩৫৬-২২৫৫) এর সময়কালের প্রথম দিকে এর প্রচলন হয়। শীতের সবচেয়ে ছোট দিন ২১ ডিসেম্বরের পর দ্বিতীয়বার যখন নতুন চাঁদ ওঠে, তার পর দিন থেকে শুরু হয় উদযাপন। চীনের চন্দ্র ও সৌর মিশ্র ক্যালেন্ডারে এটি প্রথম অমাবস্যার পর নতুন চাঁদ ওঠার দিন। সাধারণত ২২ জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এটি পড়ে।

এই উদযাপন চলছে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ভোজ, কুচকাওয়াজ দেখা এবং নতুন বছরে সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনার মধ্য দিয়ে। চীনা রীতি অনুযায়ী এ বছর রাশিচক্রের ক্রম অনুসারে খরগোশবর্ষ। ওই রীতি অনুযায়ী বলা হয়, এ বছর পৃথিবীতে আসা শিশুরা হবে ভবিষ্যতের নেতা।
অন্য সবার ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে তাদের ওপর।
যদিও বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ একই দিনে নতুন বছর শুরু করে, তবে সারা বিশ্বের মানুষ নিজেদের স্বতন্ত্র ঐতিহ্য অনুযায়ী বেশ আলাদা রকমে এই অনুষ্ঠানটিকে উদযাপন করে থাকে। অশুভ আত্মাকে ভয় দেখিয়ে বিদায় জানানো
চীনারা এই উৎসবে লাল রঙের সজ্জা ব্যবহার করে এবং লাল কাগজে অভিবাদন বাক্য লিখে থাকে যার নাম ফাই চুন তারা আতশবাজি জ্বালিয়ে ড্রাগন এবং সিংহ নাচ পরিবেশন করে এবং গং ও ড্রাম বাজিয়ে অশুভ আত্মা, বিশেষত পশু নিয়ানকে তাড়িয়ে দেয়।

চীনা পৌরাণিক কাহিনীতে রয়েছে যে নিয়ান নতুন বছরের শুরুতে তার লুকানো জায়গা থেকে বেরিয়ে আসে, মানুষ এবং প্রাণীদের খেয়ে ফেলার জন্য। কথিত আছে যে নিয়ান প্রচন্ড আওয়াজ ও আগুন দেখলে ভয় পায় এবং লাল রঙ দেখলে পালিয়ে যায়।
উৎসব এবং আনন্দময় পুনর্মিলনের সঙ্গে সবসময়ই সুস্বাদু খাবার ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। সুস্বাদু খাবার উপভোগ করা হলো উৎসব উদযাপনের আরেকটি ঐতিহ্য। এসময় চীনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকেরা ঐতিহ্যবাহী খাবার খেয়ে নতুন বছর উদযাপন করে।
চীনা পরিবারগুলি নতুন বছরের প্রাক্কালে সমবেত হয় এবং গত বছরের সৌভাগ্যের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে নৈশভোজ উপভোগ করে। দক্ষিণ চীনে নৈশভোজের খাবার-তালিকায় থাকে মুরগি, মাছ এবং অন্যান্য মাংস। আর উত্তর অঞ্চলে রাতের খাবারের তালিকায় রয়েছে ডাম্পলিং এবং হট পটে রান্না করা খাবার।
লুনার নিউ ইয়ার উদযাপনের সময় চীনারা পৌরাণিক কাহিনীতে বর্ণিত নিয়ানকে উদ্দেশ্য করে লাল বা অন্যান্য উজ্জ্বল রঙের পোশাক পরেন। আবার কেউ কেউ নতুন বছরকে নতুন ভাবে শুরু করে স্বাগত জানানোর প্রতীক হিসেবে আগাগোড়া নতুন জামা কাপড় পরে থাকেন।
বয়োজেষ্ঠ্যরা লাল প্যাকেট বা লাকি মানি (লাই সি) নামে পরিচিত লাল খামে করে তাদের নতুন প্রজন্মকে অর্থ উপহার দেন। বিনিময়ে তরুণ প্রজন্ম ঐতিহ্যগত শিষ্টাচার এবং রীতিনীতি অনুযায়ী তাদের প্রবীণদের সুখ, সুস্বাস্থ্য এবং সৌভাগ্য কামনা করে। তবে সকলেই লাল রঙ ব্যবহার করে না । প্রথম চান্দ্র মাসের ১৫ তম দিনে, ভিয়েতনামী এবং চীনা জনগণ উভয়ই ফানুস উৎসব উদযাপন করে, পূর্ণিমার চাঁদ উপভোগ করে এবং ফানুসে লেখা বিভিন্ন ধাঁধা সমাধান করে।
অনেক চীনা লোকের কাছে, এই বসন্ত উৎসব হল করোনার বৈশ্বিক সংকটের পরবর্তি তিন বছর পর প্রথম বসন্ত উৎসব, যা বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে উদযাপন করছেন। চীন জুড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।
বড় আলোর স্থাপনা শহুরে রাতের আকাশ আলোয় উদ্ভাসিত করছে। চীনের বহু এলাকায় এই নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে ড্রাগন নাচ হয়। লম্বা, রং ঝলমলে ড্রাগনের পুতুল তৈরি করা হয় এবং রাস্তা দিয়ে এই ড্রাগন নিয়ে শোভাযাত্রা নববর্ষ উদযাপনের একটা অন্যতম আকর্ষণ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়