পঞ্চগড় প্রতিনিধি : ‘স্বাধীনতার ৫১ বছর ধরে চলমান দুর্নীতি – দুঃশাসনের বিরুদ্ধে বদলে যাও বদলে দাও’ -এই স্লোগান নিয়ে ঘুষ, দুর্নীতি, দুঃশাসন, অর্থপাচারসহ রাষ্ট্রের নানা অনিয়ম, অসঙ্গতি এবং নৈতিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে ৬৪ জেলা প্রশাসক ও ৪৯৫ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে স্মারকলিপি দিয়েছেন হানিফ বাংলাদেশী নামে এক ব্যক্তি। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টায় পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক আজাদ জাহানের কাছে স্মারকলিপি দিতে গেলে তিনি তা গ্রহণে অসম্মতি প্রকাশ করেন। পরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়ে কর্মসূচি সমাপ্ত করেন তিনি।
এর আগে তিনি গত ৫ জুন কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা থেকে শুরু করে দীর্ঘ ৮ মাসে ১৬০ দিনে ৪৯৫ উপজেলা প্রদক্ষিণ করে বুধবার পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসে কর্মসূচি সমাপ্ত করেন।
কর্মসূচি সম্পর্কে হানিফ বাংলাদেশী বলেন, ঘুষ দুনীতি অর্থ পাচার সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে। সমাজ রাষ্ট্রব্যবস্থার সর্বক্ষেত্রে সামাজিক, পারিবারিক, মানবিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় চলছে, ভোট গণতন্ত্র আইনের শাসনের ওপর আগের সরকারের সময়েও নগ্ন হস্তক্ষেপ হয়েছে, ঘুষ দুর্নীতি অর্থ পাচার হয়েছে, সামাজিক মানবিক পারিবারিক মূল্যবোধের  অবক্ষয় আগেও ছিল এখন আরো চরম আকার ধারণ করেছে। আমাদের দেশের কৃষক উৎপাদনশীল, শ্রমিকরা পরিশ্রমী, ছাত্র যুবকরা মেধাবী। কিন্তু দুর্বৃত্ত্বায়িত রাজনীতি, দুনীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ, দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি আমলা, দুর্নীতিগ্রস্ত বড় বড় ব্যবসায়ীরা দেশ থেকে লক্ষ কোটি টাকা বিদেশ পাচার করে আমাদের সব অর্জনকে ব্যাহত করছে। এত সম্ভাবনা থাকার পরও দেশ যতটুকু এগিয়ে যাওয়ার কথা দুর্নীতির কারণে  ততটুকু এগোচ্ছে না। দেশে অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু মানবিক মূল্যবোধের পতন  হচ্ছে। আশা করি সম্ভাবনাময় এই অগ্রযাত্রা এগিয়ে নিতে এবং চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ঘুষ, দুর্নীতি ও অর্থপাচার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং পাচারকৃত অর্থ ফেরত এনে বেকার  যুবকদের মাঝে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে সহজ শর্তে সহজ কিস্তিতে ঋণ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, ভোট গণতন্ত্র আইনের শাসনের মান উন্নয়নে আরো যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে বাংলাদেশ বিশ্বে একটি আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।
হানিফ বাংলাদেশী আরো বলেন, দেশের নানা অসঙ্গতি নিয়ে সব সময় প্রতিবাদ করে থাকি। এর আগেও ঢাকা শহরসহ দেশের জনবহুল স্থানে পাবলিক টয়লেট স্থাপনের আন্দোলন করেছি। ২০১৩-২০১৪ সালে দেশে যখন জ্বালাও পোড়াও করে মানুষ হত্যা শুরু হয় তখন এই অপরাজনীতি বন্ধের দাবিতে দুই দলের নেত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে ভোটাধিকারের দাবিতে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ৪৬ দিন পায়ে হেঁটে পদযাত্রা করেছি, নির্বাচন কমিশনকে পচা আপেল দিয়ে প্রতিবাদ করেছি। সংসদ ভবনের চার পাশে ১৬ বার প্রদক্ষিণ করে স্পিকারের বরাবর স্বারকলিপি দিয়েছি।
২০২০ সালে সর্বগ্রাসী দুর্নীতির বিরুদ্ধে ৬৪ জেলা প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসক অফিসে স্মারকলিপি দিয়েছি এবং দুর্নীতিবাজদের উদ্দেশে প্রতীকী লালকার্ড প্রদর্শন করেছি। ২০২০ সালে সীমান্তহত্যা বন্ধের দাবিতে প্রতীকী লাশ নিয়ে পদযাত্রা করেছি। ২০২১ সালে দেশব্যাপী মার্চ ফর ডেমোক্র্যাসি গণতন্ত্রের জন্য ৬৭ হাজার গণসাক্ষর সংগ্রহ করেছি। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের দাবিতে সংসদ ভবনের সামনে ঘণ্টা বাজিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছি। ২০২১ সালে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের দাবিতে মাথায় ভোটের বাক্স নিয়ে ৬৪ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। ৫০ বছর ধরে চলমান দুর্নীতি-দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে ৫ জুন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্বারকলিপি দেয়ার উদ্যোগ নিয়ে কর্মসূচি শুরু করে দীর্ঘ ৮ মাসে ১৬০ কর্মদিবসে সারাদেশ সফর করে আজ ২৫ জানুয়ারি পঞ্চগড়ে এসে কর্মসূচি শেষ করেছি। আমার এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিভিন্ন জেলায় কিছু কুচক্রিমহল নানাভাবে আঘাতে হেয় প্রতিপন্ন করেছে তাদের ধিক্কার জানাই। 
তার এই কর্মসূিচতে দেশবাসী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যমকর্মীসহ সবাইকে সহযোগিতা করার জন্য ধন্যবাদ জানান।