শামীম ইকবাল চৌধুরী, নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) থেকে : কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পসংলগ্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র দুই নেতার বিরুদ্ধে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় মামলা হয়েছে। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ওসি টান্টু সাহা। আটক দুই জঙ্গি হলেন- সংগঠনটির শুরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধান রণবীর ওরফে মাসুদ এবং তার সহযোগী ‘বোমা বিশেষজ্ঞ’ আবুল বাশার ওরফে আলম।
নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ওসি জানান, গতকাল মঙ্গলবার সকালে র?্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের এক সদস্য বাদী হয়ে আটক দুই জঙ্গি সদস্যের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত পরিচয় আরো পাঁচজনকে আসামি করে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি নথিভুক্ত করার পর আসামিদের বান্দরবান আদালতে পাঠানো হয়েছে।
সোমবার ভোর থেকে কুতুপালং ক্যাম্পসংলগ্ন এলাকায় জঙ্গিদের সঙ্গে র্যাবের গোলাগুলির পর ওই দুজনকে গ্রেপ্তার এবং তাদের কাছ থেকে দেশি-বিদেশি অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের কথা জানায় র্যাব। পরে গ্রেপ্তার দুই জঙ্গিকে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় হস্তান্তর করা হয়।
ওসি টান্টু সাহা আরো বলেন, অভিযানস্থল উখিয়া উপজেলার কুতুপালং এলাকায় হলেও অস্ত্র উদ্ধার এবং জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকা থেকে। তাই মামলাটি আজ (মঙ্গলবার) নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে সোমবার দুপক্ষের তুমুল গোলাগুলির পর কুতুপালং ৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, পাহাড়ে-সমতলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তাড়া খেয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিল জঙ্গিরা।
তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ১০ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, একটি খালি কার্টিজ, দুটি একনলা (দেশীয়) বন্দুক, ১১টি ১২ বোরের কার্তুজ, ১০০ রাউন্ড পয়েন্ট টুটু (.২২) বোরের গুলি, নগদ ২ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
এই র্যাব কর্মকর্তা আরো বলেন, গোয়েন্দা তথ্যে তারা নিশ্চিত হন যে, রণবীর ও বাশার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে কুতুপালং সাত নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ‘এ’ ব্লক ঘিরে সোমবার ভোর ৫টায় যৌথ চিরুনি অভিযান চালায় র্যাব। র্যাবের অবস্থান টের পেয়ে জঙ্গিরা পাশের পাহাড়ে চলে যায়। র্যাব ওখানে অভিযান শুরু করলে সশস্ত্র জঙ্গিরা র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে র্যাব সদস্যরাও পাল্টা গুলি চালায়। কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে দুই জঙ্গি নেতাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় র্যাব।
র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-২, র্যাব-৩ এবং র্যাব-১৫ এর সদস্যরা এ অভিযানে অংশ নেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
উল্লেখ্য, বেশ কয়েকজন তরুণের ঘর ছাড়ার ঘটনায় তদন্তে নেমে ২০২২ সালের অক্টোবরে র্যাব নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র হদিস পায়। তখনই র্যাব জানায়, পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে মিলে দুর্গম এলাকায় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে তুলেছে এই নতুন জঙ্গি গ্রুপ। এরপরে পাহাড়ে ধারাবাহিক অভিযানের খবর জানিয়ে আসছে এলিট ফোর্স র্যাব।
র্যাব বলছে, হরকাতুল জিহাদ, জেএমবি এবং আনসার আল ইসলামের বেশ কিছু সদস্য ২০১৭ সালে নতুন এই উগ্রবাদী সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করে। পরে ২০১৯ সালে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামে কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।