প্রধান শিক্ষককে পিটুনি : আ.লীগ নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি

আগের সংবাদ

ভোক্তা অধিদপ্তরের মতবিনিময় সভা : আমদানি স্বাভাবিক না থাকলে বাজার নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে

পরের সংবাদ

শান্তিগঞ্জে সরকারি খাড়ি ব্যক্তি উদ্যোগে ইজারা : সেচের অভাবে কয়েকশ হেক্টর জমি অনাবাদি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শান্তিগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি : শান্তিগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাক ইউনিয়নের পাঙ্গাসিয়া হাওরে এক ফসলি জমিতে পানির সংকটে চাষাবাদ করতে পারছেন না হাজারো কৃষক। এই মৌসুমে তাদের গোলায় কোনো ধান এবার উঠবে না। কৃষকরা অভিযোগ করেছেন, একটি প্রভাবশালী মহল অবৈধভাবে সরকারি খতিয়ানভুক্ত খাড়ি ইজারা দেয়ার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অনাবাদি রয়েছে কয়েকশ হেক্টর বোরো জমি।
শিমুলবাক ইউনিয়নের পাঙ্গাসিয়া হাওরের খাড়িটি আমরিয়া গ্রামের মসজিদ কমিটির নাম ভাঙিয়ে ইজারা নিয়ে মৌসুমের আগেই পুরো হাওরের পানি ছেড়ে দিয়েছেন প্রভাবশালী ইজারাদার। ফলে হাওরজুড়ে দেখা দিয়েছে সেচ সংকট। হেক্টরের পর হেক্টর জমি রয়ে গেছে অনাবাদি। অন্যদিকে ইজারাদার হাওরের খাড়ির মুখ বন্ধ করে দেওয়ায় নিচু এলাকার বোরো জমির পানি না কমায় স্থানীয় কৃষকরা পড়েছেন বিপাকে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার শিমুলবাক ইউনিয়নের কিদিরপুর, রামেশ্বরপুর, ঢালাগাঁও, চাঁনপুর, আমরিয়া, কান্দাগাঁও, রুপাবালি, মুক্তাখাইসহ ৮টি গ্রামের একমাত্র হাওর পাঙ্গাসিয়া হাওর। সেখানে শত শত হেক্টর জমি রয়েছে। অনেকের লাগানো ফসল সেচ সংকটে পড়ে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। অন্যদিকে উঁচু জমি একেবারেই অনাবাদি রয়েছে। হাওরের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র নালা আমরিয়া গ্রামের পাশে পাঙ্গাসিয়ার খাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ইজারাদার আমরিয়া গ্রামের আহমদ আলী, আব্দুল বাছির, ইকবাল হোসেন বাছন খালের মুখ বেঁধে খালটিতে স্যালো পাম্প লাগিয়ে একেবারে শুকিয়ে মৎস্য আহরণ করছেন। হাওরের কৃষক কান্দাগাঁও গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা অধিরচন্দ্র দাস, মছব্বির মিয়া, কিদিরপুর গ্রামের মশাহিদ আলী, আনজব আলী, বিরাজ আলী, রুপাবালি গ্রামের আব্দুল আজিজ, আবুল কালাম, চাঁনপুর গ্রামের আশরাফ আলী, রামেশ্বরপুর গ্রামের নিরঞ্জন দাসসহ অসংখ্য কৃষক জানিয়েছেন, আমরিয়া গ্রামের ফয়জুর রহমান মেম্বার, আমরিয়া জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লি আব্দুর রহিম, আবুল কালাম, আলী আহমদরা প্রতি বছর তাদের মসজিদের নাম ভাঙিয়ে হাওরের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র রাস্তা পাঙ্গাসিয়ার খাড়ি ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে স্থানীয়ভাবে ইজারা দেয়া হয়। ইজারাদাররা প্রতি বছর কৃষকদের সঙ্গে এমন আচরণ করে আসছেন। এই বছর তারা ভরা পানির মৌসুমে পুরো হাওরের পানি ছেড়ে দিয়ে মৎস্য আহরণ করেছেন। তাই হাওরের উঁচু জমি সেচ সংকটের কারণে অনাবাদি রয়ে গেছে। সেই সঙ্গে ফসল লাগানো জমিও পানির কারণে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। পাঙ্গাসিয়ার খাড়িটি রামেশ্বরপুর মৌজার সরকারি ১নং খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত। এরপরও এটা এক গ্রামের লোকজন কীভাবে ইজারা দেয় এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এলাকাবাসীর মাঝে। তারা বলেন, এই অবৈধ ইজারার কারণে আমরা আজ মহাদুর্ভোগে পড়েছি। তারা একটি গ্রামের কিছু প্রভাবশালী মিলে আমাদের ৮টি গ্রামের একটি মাত্র হাওরের আজ এই দশা। আমরা এই প্রভাবশালীদের কাছ থেকে মুক্তি চাই। ইজারাদার আব্দুল বাছির ও ইকবাল হোসেন বাছন বলেন, আমরা আমরিয়া গ্রামের পঞ্চায়েতের কাছ থেকে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে পাঙ্গাসিয়ার খাড়ি ইজারা নিয়েছি। কৃষকরা পানি না পেলে আমরা কি করব? আমরা আমাদের জলাশয়ের মৎস্য আহরণ করছি। পানির বিষয়টি আমরিয়া গ্রামের পঞ্চায়েতের মানুষজন বলতে পারবেন। তাদের কাছ থেকে আমরা যেভাবে চুক্তি করেছি সেভাবেই আমরা মৎস্য আহরণ করছি।
আমরিয়া গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান ও ইউপি সদস্য ফয়জুর রহমান বলেন, আমাদের জন্মের পর থেকে আমাদের বাপদাদারা গ্রামের মসজিদের উন্নয়নের জন্য পাঙ্গাসিয়ার খাড়ি ইজারা দিয়ে আসছেন। ইজারার টাকা আমাদের মসজিদের উন্নয়নে ব্যয় করা হয়। হাওরের প্রয়োজনে আমরা খাড়ি বেঁধে রাখি এবং প্রয়োজন মতো ছেড়েও দেই।
এ ব্যাপারে শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আনোয়ার উজ জামান বলেন, পাঙ্গাসিয়া খাড়িটি সরকারি খতিয়ানভুক্ত হয়ে থাকলে এটাকে কোনো ব্যক্তি ইজারা দিতে পারবে না। এটা তো সবার জন্য উন্মুক্ত থাকার কথা। যে বা যারা ইজারা দিয়েছে, নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়