প্রধান শিক্ষককে পিটুনি : আ.লীগ নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি

আগের সংবাদ

ভোক্তা অধিদপ্তরের মতবিনিময় সভা : আমদানি স্বাভাবিক না থাকলে বাজার নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে

পরের সংবাদ

এক্সকেভেটর গিলে খাচ্ছে কৃষি জমি : বেগমগঞ্জে কাবিখা-কাবিটা প্রকল্পে হরিলুট

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) ও কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) প্রকল্পে বড় ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সরকারের গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধির কর্মসূচি ব্যাহত হচ্ছে। এক্সকেভেটর মেশিন দিয়ে কাজ করানোর কারণে কৃষি জমিসহ মানুষের বাড়ির আঙিনা, বাগান নষ্ট হওয়ার অভিযোগ ওঠেছে।
বেগমগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে ৫২টি কাবিখা ও ৭৫টি কাবিটা প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কাছে প্রকল্পের তথ্য জানতে চাইলে, প্রকল্পের সংখ্যা জানালেও প্রকল্পের তালিকা ও বরাদ্দ জানাতে অস্বীকৃতি জানান।
সরজমিন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে শ্রমিক দিয়ে মাটি কেটে এসব প্রকল্পের কাজ করার বাধ্যবাধকতার কথা থাকলেও, এক্সকেভেটর দিয়ে সস্তায় মাটি কেটে সরকারের টাকা আত্মসাৎ করছেন এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যরা। ওই উপজেলার প্রায় সবগুলো প্রকল্প শ্রমিক দিয়ে কাজ করার মাস্টাররোল অফিসে জমা দিলেও আসলে কাজ করা হচ্ছে এক্সকেভেটর (স্থানীয়ভাবে ভেকু নামে পরিচিত) মেশিন দিয়ে। এতে রাস্তার পাশের মানুষের ফসলি জমি, বাগান ও বসতবাড়ি কেটে নেয়া হচ্ছে মাটি। এতে দরিদ্র শ্রমিকের পাশাপাশি কৃষকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব অনিয়মের সবই হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের চোখের সামনে। কিন্তু, কাউকেই কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসকে ম্যানেজ করে চলছে এই অনিয়ম ও দুর্নীতি।
উপজেলার একাধিক ইউনিয়নের বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, রাস্তার কাজে ব্যবহৃত মেশিন দিয়ে মানুষের ফসলি জমির উর্বর মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও মানুষের বাড়ি ও বাগান কেটে নেয়া হচ্ছে। অপরদিকে মেশিন দিয়ে নামে মাত্র মাটি কেটে তা রাস্তার ওপর ৫-৬ ইঞ্চি পরিমাণে ছিটিয়ে কাজ শেষ করে মোটা অঙ্কের টাকা লোপাট করা হচ্ছে। এসব দেখার কেউ নাই।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার সাবেক দুই ইউপি চেয়ারম্যান জানান, প্রকল্প বাস্তাবায়ন অফিস সরাসরি এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। তাদের ছত্রছায়ায় এসব অনিয়ম হচ্ছে। কোথাও কোথাও কাগজে-কলমে প্রকল্প থাকলেও বাস্তবে প্রকল্পের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আহমেদ উল্যাহ সবুজের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলে এবং সরাসরি অফিসে গিয়ে প্রকল্পের সংখ্যা, বরাদ্দ ও তালিকা চাইলে তিনি প্রকল্পের সংখ্যা জানালেও বরাদ্দ ও তালিকা না দেয়ায় প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংবাদে উল্লেখ করা যায়নি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আহমেদ উল্যাহ সবুজ কাবিখা-কাবিটা প্রকল্পে অনিয়মের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমরা প্রত্যেক চেয়ারম্যানকে নিষেধ করেছি কোনো মেশিন যেন ব্যবহার না করেন। মেশিন ব্যবহার না করলে কৃষকের কোনো ক্ষতি হবে না।
শ্রমিক দিয়ে কাজ না করে মেশিন দিয়ে যেসব প্রকল্পের কাজ হয়েছে সেসব প্রকল্পের কমিটিকে বিল প্রদান করা হবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কাজ না করালে বিল আটকে দিব। কাজ করালে তো বিল দিতেই হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াছির আরাফাত বলেন, আমরা যেখানেই মেশিন দিয়ে মাটি কাটার খবর পাচ্ছি, সেখানেই বন্ধ করে দিচ্ছি। কাবিখা-কাবিটা প্রকল্পের বিষয়েও আমি পিআইও এর সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়