মাছরাঙা টেলিভিশনের সংবাদ উপস্থাপিকা ডা. নাতাশার মৃত্যু

আগের সংবাদ

৫০ বছরের অংশীদারিত্ব উদযাপনকালে বিশ্বব্যাংক এমডি : বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের সর্ম্পক নতুন মাইলফলকে

পরের সংবাদ

কালীগঞ্জে ইটভাটার মাটিতে মহাসড়ক যেন মৃত্যুফাঁদ : কুয়াশা ও শিশিরে ভেজা পিচ্ছিল মাটিতে ঘটছে দুর্ঘটনা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বেলাল হুসাইন বিজয়, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) থেকে : ইটভাটার মাটিটানা গাড়ির ফেলা মাটিতেই যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। বৈরী আবহাওয়া ও ঘন কুয়াশায় ভিজে মাটির পিচ্ছিলে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক ও মোটরসাইকেল। গত রবিবার ভোর থেকে বেলা ১০টা পর্যন্ত মহাসড়কের কালীগঞ্জের বাকুলিয়া নামক একটি স্থানেই ঘটেছে প্রায় ২০টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। মাত্র ৫ ঘণ্টার ব্যবধানে ওই স্থানে দুর্ঘটনায় আছড়ে পড়ে মারাত্মক আহত হয়েছেন অনেকেই। ওই সময়ে একের পর এক দুর্ঘটনায় পতিত মানুষের আহাজারি শুনে এগিয়ে আসেন স্থানীয়রা ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা। তারা রাস্তায় বালির বস্তা ও লাল কাপড় টাঙিয়ে পথচারীদের সহযোগিতা করেন।
মহাসড়ক সংলগ্ন অধিবাসী বাকুলিয়া গ্রামের মাসুদ রানা জানান, ওইদিন ভোর ৫টার দিকে মানুষের চিৎকার শুনে তিনি রাস্তাতে আসেন। এ সময় দেখতে পান দুজন মোটরসাইকেল অরোহী দুর্ঘটনায় জখম হয়ে রাস্তাতে কাতরাচ্ছেন। একই সময়ে আরো কয়েকটি মোটরসাইকেল আসলে তারাও সড়কের কাদায় পিচ্ছিলে পড়ে আহত হন। তিনি জানান, ভোর থেকে এভাবেই একের পর এক ওই স্থানেই কমপক্ষে ২০/২২টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পতিত হন। প্রচণ্ড ঘন কুয়াশা ও শিশিরে ভেজা রাস্তার পিচ্ছিল মাটির কারণেই এসব দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে। পরে গ্রামবাসী ও রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা মিলে রাস্তায় বালির বস্তা ও লাল কাপড় ঝুলিয়ে দিয়ে পথচারীদের সতর্ক বার্তা দেন।
ওই সময়ে দুর্ঘটনায় আহত মোটরসাইকেল আরোহী সাব্বির হোসেন জানান, রাস্তায় উপরে থাকা ভেজা মাটিতে চাকা পিছলে পড়ে গেছি। অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেলেও হাত-পা কেটে বেশ আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন।
আহত আরেক মোটরসাইকেল আরোহী রিয়াদ হোসেন জানান, সড়কে পড়ে থাকা মাটির পিচ্ছিলে প্রতিনিয়ত এসব দুর্ঘটনা ঘটলেও তার কোনো প্রতিকার নেই। তিনি মাটি টানা গাড়ি ও ইটভাটার মালিকদের দায়ী করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
এদিকে দুর্ঘটনার খবর শুনে ঘটনাস্থলে আসা স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুবেল হোসেন বলেন, কর্দমাক্ত সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। বিষয়টি নিয়ে মেয়রের সঙ্গে আলোচনাপূর্বক প্রতিকারের ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়ক সংলগ্ন একাধিক স্থানে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। তাদেরই মাটিটানা গাড়ি থেকে অল্প অল্প পড়ে যাওয়া মাটি সড়কেই জমে থাকে। ওই মাটিগুলো কখনই অপসারণ করা হয় না। যে কারণে বৃষ্টি বা ঘন কুয়াশার শিশিরে ভিজে পিচঢালা সড়কগুলো মারাত্মক পিচ্ছিল হয়ে উঠে। আর মহাসড়কে চলাচলকারী পরিবহনগুলো ওই স্থানে গেলেই কাদায় পিচ্ছিলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হন।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মহাসড়ক সংলগ্ন বেশির ভাগ ইটভাটার সম্মুখে রাস্তাতেই মাটি জমে আছে। এছাড়া সড়কের অন্যান্য স্থানেও তাদেরই ফেলা মাটিতে একই চিত্র দেখা গেছে। সেই সঙ্গেই গ্রামাঞ্চলের পাকা রাস্তাগুলোতেও একই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে কোনো কোনো সড়ক মাটিতে চর পড়ে থাকে। দেখলে বোঝা যায় না এটি একটি পাকা সড়ক। কিন্তু এর কোনো প্রতিকার না থাকায় প্রতিনিয়ত বিপদগ্রস্ত হচ্ছে পথচারী সাধারণ মানুষসহ পরিবহনের যাত্রীরা। কেড়ে নিচ্ছে নিরীহ মানুষের প্রাণ। পঙ্গুত্ববরণ করছেন অনেকেই।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ বারোবাজার হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মন্জুরুল আলম ইটভাটার গাড়ির ফেলা মাটিতে দুর্ঘটনার কথা স্বীকার করে বলেন, মহাসড়কে মাটি টানা সব অবৈধ যান চলাচল নিষিদ্ধ। তারা প্রতিনিয়ত সড়কে অভিযানে মামলা দিয়ে থাকেন। মাটি সদস্যায় সড়কে দুর্ঘটনা রোধে আরো পদক্ষেপ নিবেন বলে জানান তিনি।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বলেন, মহাসড়কের সমস্যাগুলো হাইওয়ে পুলিশ দেখভাল করে থাকে। এরপরও ইটভাটার মাটিতে সড়কে দুর্ঘটনার বিষয়টি দেখে তিনি জনস্বার্থে দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়