সমাজকল্যাণমন্ত্রী : ভিক্ষুক নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালাচ্ছে মোবাইল কোর্ট

আগের সংবাদ

বৈশ্বিক সংকটে চাপা প্রত্যাবাসন : রোহিঙ্গা শরণার্থী

পরের সংবাদ

লোডশেডিংয়ে বোরো আবাদ ও শিল্প উৎপাদন ব্যাহত

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. আবু বকর সিদ্দিক, নওগাঁ থেকে : নওগাঁয় লোডশেডিংয়ের কারণে বোরো আবাদ ও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। নওগাঁ পৌর শহরসহ জেলার ১১টি উপজেলায় গত তিন-চার দিন ধরে দিন-রাতের অর্ধেক সময়ই বিদ্যুতের সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। এতে বিপাকে পড়েছেন কৃষক ও কলকারখানার মালিকরা। বিদ্যুতের অভাবে বোরো আবাদের জমিতে সেচ কার্যক্রম ও কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
নওগাঁয় বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৯৭ মেগাওয়াট।পাওয়া যাচ্ছে ৬০-৬৫ মেগাওয়াট করে। তীব্র শীতের মধ্যেও চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ পাওয়ায় লোডশেডিং অব্যাহত রয়েছে।
নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ ও সমিতি-২ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় পল্লী বিদ্যুতের আওতায় ৩ লাখ ৯০ হাজারের অধিক গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে ৫২ হাজার বাণিজ্যিক, ১৫ হাজারের অধিক সেচপাম্প ও ২ হাজারের অধিক ছোট-বড় শিল্পকারখানা রয়েছে। পল্লী বিদ্যুতের অধীনে তিন-চার দিন ধরে প্রতিদিন গড়ে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৯৭ মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদনকেন্দ্র থেকে সরবরাহ পাওয়া গেছে ৬০-৬৫ মেগাওয়াট করে।
নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) মাধ্যমে নওগাঁ ও সান্তাহার পৌরসভা এলাকাসহ নওগাঁ সদর ও বদলগাছী উপজেলার কিছু অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। নেসকোর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ নওগাঁ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তিন-চার দিন ধরে নওগাঁয় নেসকোর গ্রাহকদের বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১১ মেগাওয়াট। কিন্তু বিদ্যুতের সরবরাহ পাওয়া গেছে ৫ থেকে ৬ মেগাওয়াট। এ কারণে নওগাঁ পৌরসভাসহ বেশকিছু এলাকায় দিনে-রাতে অর্ধেক সময়ই লোডশেডিং করতে হয়েছে।
নওগাঁ পৌরসভার উকিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা বেলায়েত হোসেন বলেন, গতকাল আমার নতুন বাড়ির ছাদ ঢালাইয়ের কাজ ছিল। লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যাপক বিড়ম্বনায় পড়েছিলাম। সকাল ৯টার দিকে ঢালাই কাজ শুরু হওয়ার পর অন্তত চারবার লোডশেডিংয়ের কারণে প্রায় ৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। বিদ্যুৎ না থাকায় ওই ৩ ঘণ্টা ঢালাই কাজও বন্ধ ছিল। এর ফলে যে কাজ দুপুর ২টার মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল, সেই কাজ শেষ হয়েছে বিকাল ৫টায়। শীতকালে এত লোডশেডিং কোনো দিন দেখিনি।’
নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁপানিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও একটি গভীর নলকূপের চালক সাইদুর রহমান বলেন, ‘কৃষকরা বোরো আবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করা শুরু করেছে। জমিতে সেচ দেয়ার জন্য দুই সপ্তাহ ধরে ২৪ ঘণ্টাই সেচপাম্প চালু রাখতে হয়েছে। কিন্তু তিন-চার দিন ধরে দিনে ৬-৭ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে সেচপাম্প চালাতে সমস্যা হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে এবার বোরো আবাদ ব্যাহত হতে পারে।
বুধবার বেলা ১১টার দিকে কথা হয় সদর উপজেলার বর্ষাইল এলাকার কৃষক জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘টিউবওয়েল (গভীর নলকূপ) থেকে দুই বিঘা জমিতে সেচ দিতে ৪ ঘণ্টা লেগেছে। সকাল ৮টা থেকে সেচ দেয়া শুরু হইছে। এর মধ্যে দুইবার কারেন্ট গেছে। কারেন্ট না গেলে দেড় ঘণ্টার মধ্যেই সেচ শেষ হয়ে যেত।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁ জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে ১১টি উপজেলায় ১ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ১২ শতাংশ জমিতে ধানের চারা লাগানো হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু হোসেন বলেন, জেলার কিছু কিছু এলাকায় কৃষকরা ইতোমধ্যে বোরো ধান লাগানো শুরু করে দিয়েছেন। ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বোরো ধান লাগানো যাবে। সময়মতো জমিতে সেচ দিতে না পারলে বোরোর ফসল উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। আশা করি, কিছু দিনের মধ্যেই বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। আধুনিক কৃষি ব্যবস্থায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অন্যতম প্রধান শর্ত।
এদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যাহত হচ্ছে শিল্পকারখানার উৎপাদন। জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে চালকলগুলোতে আমন ধান থেকে চাল উৎপাদন করা হয়ে থাকে। জেলায় ছোট-বড় প্রায় ১২০০ চালকল রয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে কারখানার উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এভাবে ঘন ঘন লোডশেডিং অব্যাহত থাকলে চাল সরবরাহ ব্যাহত হবে। এতে করে চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা যেতে পারে।
নেসকোর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ নওগাঁ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মনির হোসেন বলেন, চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কম পাওয়ায় শীতের মধ্যেও এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং করতে হচ্ছে। ১১ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ৫-৬ মেগাওয়াট করে। নওগাঁ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এর মহাব্যবস্থাপক রবিউল হক বলেন, ‘বিদ্যুতের চাহিদা ৬৩ মেগাওয়াট থাকলেও তিন-চার দিন ধরে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে চাহিদার ৫০-৭০ শতাংশ করে। এ কারণে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিছে, কিছু কারিগরি ত্রæটি ও জ¦ালানি সংকটের কারণে বিদ্যুৎ সমস্যা বিঘিœত হচ্ছে। তবে এই সমস্যা সাময়িক। কিছু দিনের মধ্যেই এটা সমাধান হয়ে যাবে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়