সমাজকল্যাণমন্ত্রী : ভিক্ষুক নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালাচ্ছে মোবাইল কোর্ট

আগের সংবাদ

বৈশ্বিক সংকটে চাপা প্রত্যাবাসন : রোহিঙ্গা শরণার্থী

পরের সংবাদ

দিশাহারা ঝিনাইগাতীর অর্ধশত কৃষক : ফসলি জমির মাটি কাটা অব্যাহত

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

খোরশেদ আলম, শেরপুর থেকে : আমি টাকা দিয়ে বালুমহাল ইজারা নিয়েছি। মাটি কাটবোই ফোন করে বিরক্ত করবেন না। যত পারেন লেখালেখি করুন। কৃষকদের ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার বিষয়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে ঝিনাইগাতীর মহারশি নদীর বালুমহালের ইজারাদার আসাদুজ্জামান স্বপনের কাছে ফোনে জানতে চাইলে তিনি এভাবেই উত্তর দেন।
উল্লেখ্য, দীঘিরপাড় গ্রামের সজীব মিয়া, এমদাদুলসহ ৮/১০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি বালুমহালের ইজারাদার আসাদুজ্জামান স্বপনের যোগসাজশে দীঘিরপাড় এলাকার প্রায় ৫০ একর ফসলি জমিসহ নদীর পাড় কেটে মাটি ও ১০/১৫ ফুট গর্ত করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। ভেকু দিয়ে অবাধে মাটি কেটে নেয়ায় অর্ধশত কৃষক তাদের ফসলি জমি চাষাবাদ না হওয়ার আশঙ্কায় দিশাহারা হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, ওই প্রভাবশালীরা বালু উত্তোলনের নাম করে অসহায় কৃষকদের আবাদি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। ফসলি জমি থেকে ১০/১৫ ফুট গর্ত করে অবাধে মাটি কেটে নেয়ায় চাষাবাদ অনুপযোগী হয়ে পড়ছে জমিগুলো।
দীঘিরপাড় গ্রামের কৃষক আশরাফ আলী বলেন, দেশ স্বাধীনের পূর্বে দীঘিরপাড় এলাকায় মহারশি নদী ভাঙনের কবলে পড়ে অর্ধশত কৃষকের জমি। ফলে তারা ভূমিহীনে পরিণত হয়। ভাঙনকবলিত এলাকার জমিগুলো কৃষকদের নামে সিএস, আরো আর রেকর্ড থাকলেও নদী ভাঙনের কারণে বিআরএস রেকর্ড হয় সরকারের নামে।
পরবর্তীতে জমিগুলো আবারো জেগে উঠে। সমতল ভূমিতে পরিণত হয় এলাকা। পুরো এলাকা নদীভরাট হয়ে গেলে, ওই জমির মালিকরা জমিগুলো চাষাবাদ শুরু করে। ওই জমি চাষাবাদ করে পরিবারের সদস্যদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন এলাকার প্রান্তিক কৃষকরা।
দীঘিরপাড় গ্রামের কৃষক নাজিমুল হকসহ অন্য কৃষকরা বলেন, গত প্রায় এক মাস ধরে ওই প্রভাবশালীরা মহারশি নদীর বালু মহালের ইজারাদারের যোগসাজশে অবাধে ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এসব মাটি জেলা সদরের ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে।
ভেকু দিয়ে অবাধে কেটে নেয়ার ফলে তাদের জমিগুলো চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কোনো বাধা-নিষেধও মানছেন না তারা। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে কৃষকরা। শুধু তাই নয় মাহিন্দ্রযোগে এসব মাটি অবাধে পরিবহনের ফলে দীঘিরপাড় থেকে ঝিনাইগাতী সদর পর্যন্ত ২ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আগামী বর্ষায় মহারশি নদী ভাঙনের ঝুঁকির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
দীঘিরপাড় গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম, আইজ উদ্দিন, আসাদুল, আক্রাম হোসেন, দুলাল মিয়া, রহুল আমিন, মজিবর রহমানসহ অন্য কৃষকরা জানান, অবাধে তাদের ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়া হলেও তাদের ভয়ভীতি ও হুমকির মুখে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না। তাদের বাধা-নিষেধ ও কোনো উজর আপত্তি কিছুই মানছেন না তারা। প্রশাসনের দ্বারে ঘুরেও কোনো ফল পাননি তারা।
সরজমিন অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা গেছে, ভেকু দিয়ে মাটি কাটার দৃশ্য। কৃষকদের জমিগুলো ক্ষতবিক্ষত। চাষাবাদ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নিয়ম অনুযায়ী বালু উত্তোলন করার কথা নদী থেকে। কিন্তু ইজারাদারের লোকজন নিয়মনীতির প্রতি তোয়াক্কা না করে সমতল ভূমি কৃষকদের ফসলি জমি ও নদীরপাড় কেটে মাটি ও বালু নেয়া হচ্ছে। কৃষকরা তাদের জমির ওপর থেকে মাটিকাটা বন্ধের বিষয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বলে জানান তারা।
এরপরেও তাদের জমি থেকে মাটিকাটা বন্ধ হয়নি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার কৃষকদের ফসলি জমি থেকে মাটিকাটার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আল মাসুদের সঙ্গে কথা হলে তিনি ফসলি জমি থেকে মাটিকাটা বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গত কয়েক দিনেও কৃষকদের ফসলি জমি থেকে মাটিকাটা বন্ধ হয়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশ অমান্য করে প্রভাবশালীরা অবাধে ফসলি জমিও নদীর পাড় কেটে অবাধে মাটি বিক্রি করে আসছেন।
ভুক্তভোগী কৃষকরা তাদের ফসলি জমি থেকে মাটিকাটা বন্ধ করে তাদের জমিতে বোরো আবাদে সহায়তার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে মাটিকাটার সঙ্গে জড়িত সজীব মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা ৮/১০ জন মিলে ৬ লাখ টাকায় ওই জমি থেকে মাটি ও বালু উত্তোলনের জন্য বালুমহালের ইজারাদার আসাদুজ্জামান স্বপনের কাছ থেকে কনট্রাকে নিয়েছি।
ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে ইজারাদার আসাদুজ্জামান স্বপনকে ফোনে প্রশ্ন করা হলে তিনি দম্ভোক্তির মাধ্যমে উত্তর দিয়ে ফোন কেটে দেন। শেরপুরের জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তারের সঙ্গে কথা হলে তিনি এ বিষয়ে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়