আরো এক মামলায় রফিকুল মাদানীর বিচার শুরু

আগের সংবাদ

নাশকতার শঙ্কায় সতর্ক আ.লীগ : ষড়যন্ত্র ঠেকাতে নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশ ক্ষমতাসীন দলের, ‘পাল্টা কর্মসূচি’তে অস্বস্তি বিএনপির

পরের সংবাদ

যে কারণে দীর্ঘ ও সফল জীবন মাহাথিরের

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : দীর্ঘ ও সফল জীবনের এক উদাহরণ ড. মাহাথির মোহাম্মদ। আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি, যিনি প্রথম দফায় (১৯৮১-২০০৩) দীর্ঘ ২২ বছর সফলভাবে দেশটির নেতৃত্ব দিয়েছেন। মালয়েশিয়াকে করেছেন একটি আধুনিক ও সমৃদ্ধিশালী রাষ্ট্র।
ড. মাহাথির চল্লিশের দশকে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনা করেন। সেখানে তার সঙ্গে পরিচয় হয় সিতি হাসমাহর। পরিচয় থেকে অন্তরঙ্গতা, এরপর বিয়ে। সিতি হাসমাহও ওই মেডিকেলেরই শিক্ষার্থী ছিলেন। দ্বিতীয় দফায় (২০১৮-২০২০) রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসেন ৯৪ বছর বয়সে। তার কর্মস্পৃহা, উদ্যম রীতিমতো তাক লাগিয়ে দেয়ার মতো। এখন ৯৭ বছর বয়সেও প্রায় সুস্থ জীবনযাপন করছেন মাহাথির।
সম্প্রতি ঢাকার বাংলা একাডেমির সবুজ চত্বরে হয়ে যাওয়া লিট ফেস্টে একটি সেশনে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন মাহাথিরকন্যা মেরিনা মাহাথির। তিনি একজন সুপরিচিত মানবাধিকারকর্মী ও লেখক। মাহাথিরকে নিয়ে তার লেখা বই ‘দ্য অ্যাপল অ্যান্ড দ্য ট্রি’ নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি ছোট্ট করে উঠে এলো মাহাথিরের দীর্ঘ জীবনের প্রসঙ্গও।
ছোটবেলা থেকেই তুখোড় মেধাবী ছিলেন মাহাথির। বাবা মোহাম্মদ ইস্কান্দার, যিনি ছিলেন একটি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের প্রধান শিক্ষক, শৈশবেই ছেলের মধ্যে শৃঙ্খলা ও একাগ্রতার বীজবপন করে দিয়েছিলেন। পড়াশোনা করতে গিয়ে তাই খেলাধুলায় মনোযোগ দিতে পারেননি মাহাথির। ছাত্রজীবন থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা মানুষ মাহাথির। তার একটি প্রিয় কথা হলো, ‘আমাদের বাঁচার জন্য খাওয়া উচিত। খাওয়ার জন্য বাঁচা উচিত নয়। যেটুকু প্রয়োজন, এর বেশি খাওয়া একেবারেই উচিত নয়।’ তার পরামর্শ, স্থূলতা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়। কেউ বেশি দিন যদি বাঁচার আশা করেন, তবে তাকে শরীর থেকে বাড়তি মেদ ঝরিয়ে ফেলতে হবে। শরীরের চাহিদার চেয়ে খাবার বেশি গ্রহণ করা হচ্ছে কিনা, সেটা একজন মানুষ কীভাবে বুঝবে? এ বিষয়ে মাহাথির বলেছেন, কারও কোমরের চারপাশে যদি ফ্যাট বা চর্বি জমে যায়, তবে বুঝবেন তিনি প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করছেন। তখন তাকে প্লেটের খাবার চার ভাগের এক ভাগে বা তিন ভাগের এক ভাগে নামিয়ে আনতে হবে।
নিউ স্ট্রেইট টাইমস পত্রিকায় এক কলামে মাহাথির লিখেছেন, শর্করা (ভাত) ও চর্বিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। তাহলে কোমরের চারপাশের চর্বি কমতে শুরু করবে। খাদ্যনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার ওজন ৩৫ বছর ধরে ৬২ থেকে ৬৪-এর মধ্যে বেঁধে রাখতে পেরেছেন।
মাহাথিরের পরামর্শ : যাদের বয়স ৬০ পেরিয়েছে বা যারা অবসর জীবনযাপন করছেন, তাদের জন্য মাহাথিরের পরামর্শ হলো, সব সময় সক্রিয় থাকার চেষ্টা করতে হবে। হাঁটতে হবে, শরীরচর্চা করতে হবে। বয়স্কদের দীর্ঘ সময় ঘুমিয়ে থাকার পক্ষে নন মাহাথির, বিশেষ করে দিনের বেলায়। তিনি যেমন এই বয়সেও সকালে কাজ শুরু করে শেষ করেন রাত ১০টা বা ১১টায়।
সব মিলে প্রতিদিন সাত ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করেন মাহাথির। তার মতে, এর বেশি ঘুমালে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। একটু কম ঘুমের পাশাপাশি যদি শরীরচর্চা করা যায়, তবে মাংসপেশি ও হাড় শক্তিশালী থাকে। এতে ব্রেনও সক্রিয় থাকে।
তার মেতে, ব্রেনকে যদি কাজে লাগানো না হয়, তবে সেও হাল ছেড়ে দেবে, নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে। ব্রেনের পতন ঠেকাতে সক্রিয় থাকতে হবে, কথা বলতে হবে, বই পড়তে হবে, লিখতে হবে, সমস্যার সমাধান করতে হবে, যুক্তি দিতে হবে, বিতর্ক করতে হবে। যারা এ কাজগুলো করেন না, তারা ব্রেনের প্রধান প্রধান কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখেন। মাহাথির বলেন, তার এ অভিমত কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণার আলোকে নয়, কেবলই তার নিজস্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে।
মাহাথিরের মতে, ব্রেনকে সক্রিয় ও সুস্থ রাখার আরেকটি উপায় হলো লেখালেখি করা। মালয়েশিয়ার চতুর্থ এবং সপ্তম এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘লেখালেখি আপনার ব্রেনকে সব সময় সক্রিয় রাখতে সাহায্য করবে।

ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে ১০০ হাত দূরে থাকেন ইসলাম ধর্মের একনিষ্ঠ অনুসারী মাহাথির। কখনো তিনি কুঁজো হয়ে বা বাঁকা হয়ে দাঁড়ান না, বসেন না, একজন সামরিক অফিসারের মতো সোজা হয়ে বসেন, সোজা হয়ে দাঁড়ান।
সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য মাহাথির বিশেষ কোনো ডায়েট চার্ট দিতে চান না। তার মতে, শর্করা (ভাত, রুটি) কম খেতে হবে। শাকসবজি, মৌসুমি ফলমূল বেশি খেতে হবে। এটুকু মানলেই যথেষ্ট।
মাহাথিরের মতে, দীর্ঘদিন বাঁচা একটা বিষয়। আর দীর্ঘদিন সুস্থভাবে বাঁচা আরেকটা বিষয়। তিনি বলেন, সবকিছু আমাদের হাতের মধ্যে নেই, কিন্তু যেটুকু আছে, সেটুকু মেনে চললে বুড়ো বয়সেও সুস্থ থাকা যায়।

সূত্র : এশিয়া টাইমস, বারনামাসহ একাধিক গণমাধ্যম।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়