কাগজ প্রতিবেদক : বিএনপিকে জনগণ রাজনৈতিকভাবে ত্যাগ (পলিটিক্যালি রিজেক্ট) করেছে বলে মন্তব্য করেছেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ফারুক খান। তিনি বলেছেন, গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করে। আইন মোতাবেক আমাদের নির্বাচন কমিশনও স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করবে। কিন্তু বিএনপি এখন বলছে, তারা এ নির্বাচন কমিশন মানে না। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। তারা মানতে চায় না যে, দেশের সর্বোচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করেছেন। এদেশে আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার কোনো সুযোগ নেই। জনসম্পৃক্ততা হারিয়ে বিএনপি এখন নানান ভুল ও বিভ্রান্তিকর কথা বলে চলেছে। গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
ফারুক খান বলেন, সংবিধান অনুযায়ী চলতি বছরের ডিসেম্বরে বা আগামী বছরের জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন হবে। নির্বাচন উপলক্ষে সব দল এখন সক্রিয়। নির্বাচনের সময় বিশ্বের সবদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থাকে এবং স্বাধীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন আয়োজন করে। স্বাভাবিকভাবে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশেও তাই হবে। কিন্তু বিএনপি ও গুটি কতক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলছে, যা অসাংবিধানিক। তারা আবার রাষ্ট্র মেরামতের হাস্যকর ফর্মুলাও দিয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় ও দেশি – আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে। কোভিডসহ নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে- মেট্রো রেল চালু হয়েছে। আমরা সব মহামারি মোকাবিলা করে অর্থনীতিকে সচল রাখতে সক্ষম হলেও বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সারাবিশ্বে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সুদক্ষ নেতৃত্বে আমরা তা সফলভাবে মোকাবিলা করে চলেছি এবং বিশ্বকে আমরা দেখিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব থাকলে অতিমারি ও যুদ্ধের প্রভাবকে মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নেয়া যায়। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব বিশ্বে দেশের মর্যাদা বাড়িয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপি দেশের জনগণকে ভ্রান্ত তথ্য দিয়ে বিভান্তির মধ্যে ফেলতে চায়। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি ক্ষমতায় এসে বারে বারে দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে, মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দিয়েছে, যার ফলশ্রæতিতে আমরা বাংলাভাই, শেখ আবদুর রহমান ও সন্ত্রাসীদের উত্থান দেখেছি। সারাদেশে বোমা হামলার মাধ্যমে দেশকে পাকিস্তানপন্থি ও জঙ্গিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করেছে। ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরসহ সব বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করেছিল। তারাই আজ সুশাসন, গণতন্ত্র, স্বাধীন ইসি, রাষ্ট্র মেরামত এসব বলে যাচ্ছে! যা হাস্যকর। বিএনপির ৭ জন এমপি পদত্যাগ করে তাদের নিজ নিজ এলাকার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে, বেইমানি করেছে।
‘শেখ হাসিনা নমিক্স’ বহির্বিশ্বে প্রশংসা পেয়েছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বঙ্গবন্ধু দেশের স্বাধীনতার পরে সব বড় বড় আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ জাতিসংঘের সদস্যপদ অর্জন করেন। তা সম্ভব হয়েছে তার ক্যাসিমেটিক ও ডায়ামেটিক লিডারশিপের জন্য। তিনি তার কর্মে আমাদের জীবনে-মননে সোনার বাংলার স্বপ্ন বুনে দিয়ে গেছেন। তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে এক সময়ের তলাবিহীন ঝুড়ির দেশকে আজ একটি সম্ভাবনাময় অর্থনীতি ভাইব্রেন্ট অর্থনীতি ও ল্যান্ড অব অপরচ্যুনিটির দেশে রূপান্তরিত করেছেন। বস্তুত শেখ হাসিনা পৃথিবীতে এক নতুন দিকদর্শন চালু করেছেন, মূল হচ্ছে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখে শান্তি ও স্থিতিশীলতা অক্ষুণ্নœ রেখে, অন্ন বস্ত্র বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা সমুন্নত রেখে ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করেছেন। এটাকে আমি ‘হাসিনা নমিক্স’ নামে অভিহিত করব। বহির্বিশ্বে এটা প্রশংসা পেয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও কর্নফুলী ট্যানেল করে প্রধানমন্ত্রী দেখিয়ে দিয়েছে, আমরাও পারি, যা বিএনপি সরকারের কাছে স্বপ্নও ছিল না। দেশবিরোধী কিছু লোক দেশের বিরুদ্ধে নানা ধরনের গুজব ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে বিশ্বের কাছে দেশকে হেয় করতে চায়। তারা বলে, দেশ শ্রীলঙ্কার মতো হয়ে যাবে, আপনার টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নেন। দেশ দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। দেশের বিরুদ্ধে এসব গুজব অমূলক। দেশ আজ স্থিতিশীল অর্থনীতির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। বিশ্বে ৩৫তম অর্থনীতির দেশ। বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করতে সংগ্রাম করেছে। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার আজ একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। প্রধানমন্ত্রীর রোডম্যাপ অনুযায়ী ২০৪১ সালে দেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধশালী দেশ। সে লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
৭৫ এর মতো ঘটনা ঘটিয়ে কি রাষ্ট্র মেরামত : রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে গণফোরামের সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেন, বাংলাদেশকে মেরামত করতে হবে। কাদের কাছ থেকে শুনছি? ‘৭৫ সালের খুনিদের কাছ থেকে।
আপনারা কি সেই মেরামত করতে চান ১৯৭৫ সালের মতো ঘটনা ঘটিয়ে। সেই মেরামত করতে চান খুনি জিয়া যেভাবে পাকিস্তানের দালাল শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিল। তারা কি বাংলাদেশের সেই রকম আরেকটি পরিবর্তন করতে চান? জিয়ার দুঃশাসনে রাতে কারফিউয়ের গণতন্ত্রের মতো মেরামত করতে চান? তারা বাংলাদেশ বেতারকে পাকিস্তান বেতার বানিয়েছিল, তারা কি সেই রকম মেরামত করতে চান? তাদের কথা শুনলে সেই রকমই মনে হয়। তাদেরকে বলব, যে সমন্ত ভাইয়েরা আজকে একদল দুই দল, ২০, ৫৪ দল, জিরো প্লাস জিরো সমান জিরো। পাকিস্তানের সন্ত্রাসী আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নামে খ্যাত দাউদ ইব্রাহীমের সঙ্গে আবুধাবিতে বৈঠক করে যারা বাংলাদেশের রাজনীতির পরিবর্তন চান সেই পাকিস্তানের ধারার রাজনীতি এই দেশে আসার আর কোনো সুযোগ নাই। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তারা ঠিক খুনি জিয়ার মাধ্যমে ক্ষমতায় আরোহণ করেছিল। কিন্তু আন্দোলন-সংগ্রাম করে মানুষের মন নিয়ে আন্দোলনের সফলতা তারা আনতে পারেনি।