নিউমার্কেটে সংঘর্ষ : তিন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল পেছাল

আগের সংবাদ

নামমাত্র প্রস্তুতিতে পাঠদান : বই পায়নি অনেক শিক্ষার্থী > বই, সহায়িকা ছাড়াই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ > নোট-গাইড ছাপার তোড়জোড়

পরের সংবাদ

আশ্রয়ণের ১৪ ঘর বিক্রি তালাবদ্ধ ৩৫ ঘর

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কমলনগর (ল²ীপুর) প্রতিনিধি : কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ৪টি আশ্রয়ণ প্রকল্প এখন দালালরা নিয়ন্ত্রণ করছেন। দালালদের কথায় চলছে এসব আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলো। ৪টি কলোনির ১৪টি ঘর বিক্রি ও ৩৫টি ঘর তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। বরাদ্দ নিয়ে এসব ঘরে থাকছে না লোকজন। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তির পরিবর্তে অন্যরা থাকছেন। আবার বরাদ্দ একজনের নামে থাকেন অন্যজন। এ ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর ঘর নিয়ে চলছে বাণিজ্য। একশ্রেণির দালাল এসব অনৈতিক কাজের মাধ্যমে কলোনির বাসিন্দাদের জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নেন। এসব দালালরা তাদের পছন্দের লোকজন এনে কিছু টাকা পয়সা নিয়ে ঘরে থাকতে দেয়। প্রতি মাসে নতুন নতুন মুখের লোকজনের আনাগোনা বেড়ে গেছে কলোনিতে। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরকে বাণিজ্য হিসেবে বেছে নিয়েছে দালাল চক্রটি। উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন কলোনির বাসিন্দারা। এসব আশ্রয়ণ প্রকল্পে মাদক কারবারিদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা আশ্রয়ণ প্রকল্পকে নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে।
সূত্র জানায়, উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ডাক্তারপাড়া কলোনি, মধ্যম চরকাদিরা ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আশ্রয়ণ প্রকল্প, চরঠিকা আশ্রয়ণ প্রকল্প ও ফজুমিয়ারহাট বাজারের পূর্ব পাশে ভূলুয়া নদীসংলগ্ন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নিয়ে এসব অভিযোগ উঠেছে। এসব কলোনিতে ঘর পাওয়া অধিকাংশ ব্যক্তিরা টাকার বিনিময়ে অন্যদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন ঘরগুলো। আবার সচ্ছল পরিবারের লোকজন ঘর বরাদ্দ নিয়ে ব্যবহার করছে না। তাদের আত্মীয় স্বজনদের থেকে টাকা নিয়ে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন। একই পরিবারের ৩/৪ জনের নামে একাধিক ঘর বরাদ্দ দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। সরজমিন উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ডাক্তারপাড়া, পূর্ব চরকাদিরা ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আশ্রয়ণ প্রকল্প, চরঠিকা আশ্রয়ণ প্রকল্প ও ফজুমিয়ারহাট বাজারের পূর্ব পাশে ভূলুয়া নদীসংলগ্ন আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে বেশির ভাগ ঘর তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। ব্যবহারের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।
পার্শ্ববর্তী ঘরের বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, এমন অনেক পরিবার আছে, যাদের থাকার কোনো জায়গা নেই, তারা ঘর পাননি। অথচ ধনাঢ্য পরিবারের লোকজনকে ঘর দেয়া হয়েছে। তারা এখানে বসবাস করছে না। সারাবছর দেখি অন্য লোকজন থাকে। আবার অনেকেই ঘর বিক্রি করে দিয়েছেন।
চরকাদিরা ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের  ডাক্তারপাড়া কলোনিতে প্রায় ১০টি ঘর তালাবদ্ধ দেখা গেছে। ৮টি ঘর বিক্রি করেন বিভিন্ন নামে বরাদ্দ পাওয়া সুফলভোগীরা। নির্মাণের পর থেকে ঘরগুলোতে কেউ থাকে না। তবে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ঘরগুলো বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। চরকাদিরা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আশ্রয়ণ প্রকল্পে মোট ৭৪টি ঘরের মধ্যে ১৭টি ঘর তালাবদ্ধ। নির্মাণের পর থেকে এসব ঘরগুলো কেউ ব্যবহার করছে না। এর মধ্যে ২৬৬, ১৮১, ২৭৮, ২৬৫, ২৬৮ ঘরগুলো বিক্রি করা হয়েছে।
ফজুমিয়ারহাট ভূলুয়া নদীসংলগ্ন স্বাধীনতা সংগ্রাম আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের সংখ্যা ৫৫টি। এর মধ্যে ২৩০ নম্বর ঘরটি নাজিরগঞ্জ এলাকার কামাল ও ২৫০ নম্বর ঘরটি জান্নাতের নামে বরাদ্দ হয়। কিন্তু তাদের বাড়িঘর থাকায় এখানে মাঝে মধ্যে এসে দেখাশোনা করে চলে যান তারা। থাকেন না আশ্রয়ণে। ২৫৬ নম্বর ঘরটির কবুলিয়াত হয় আবুল বাসার ও লিপির নামে। তারা থাকেন চট্টগ্রামে। পরে ঘরটি রুমার কাছে বিক্রি করে দেন। বর্তমানে বিক্রি করা ঘরে রুমাও থাকেন না। দীর্ঘদিন ধরে ঘরটি তালাবদ্ধ। নির্মাণের পর থেকে ৩৮০ নম্বর ঘরটি একেবারে খালি। কে বরাদ্দ পেয়েছেন তাও বলতে পারছে না কলোনির বাসিন্দারা। এছাড়া ৩১২, ২২৭, ৩২১, ২৪৮, ২৩২, ৩৩৩, ৩৩৫ ও ৩৩৬ নম্বর ঘরগুলোও রয়েছে তালাবদ্ধ। কলোনির বাসিন্দা শাহিনুর বলেন, বহু গরিব মানুষ এখনো ঘর পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। কিন্তু ঘর পাচ্ছে না। অথচ ধনীরা ঘর পেয়ে তারা ঘরে থাকে না। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ঘরগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন তারা। ওই কলোনির সভাপতি আবুল খায়ের জানান, তীব্র শীত চলছে। আমরা কলোনির বাসিন্দারা সরকারি কোনো সহায়তা পাচ্ছি না। এই শীতে প্রশাসন থেকে একটা কম্বলও আমাদের ভাগ্যে জোটেনি। কলোনির বাসিন্দা ফারুক, আয়েশা ও নাজমা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরগুলোতে অচেনা লোকজন থাকে। যারা ঘর পেয়েছে , তারা স্টাম্পের মাধ্যমে বিক্রি করে দিয়েছেন। বেশির ভাগ ঘর সব সময় দেখি তালামারা। সরকারি অফিসাররা কোনো খবর নেয় না। সবগুলো কলোনিতে কয়েকজন দালাল এসে ঘর পাল্টায়। একেক সময় একেক জনকে এনে কিছু টাকা-পয়সা নিয়ে ঘরে থাকতে দেয়।
উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রথম ধাপে ৫০০ ঘর নির্মাণ করেন উপজেলা প্রশাসন। পরে দ্বিতীয় ধাপে ৬ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে চরকাদিরা ইউনিয়নের চারটি কলোনিসহ এ উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় আরো ২৬০টি ঘর নির্মাণ করা হয়। এতে মোট ঘরের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৬০টি। বর্তমানে বেশির ভাগ ঘর এখনো ফাঁকা রয়েছে। আবার অধিকাংশ ঘর স্টাম্পের মাধ্যমে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় স্থানীয় দালালরা নিয়ন্ত্রণ করেন এসব আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, ঘর বিক্রির বিষয়টি প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। একেকটা ঘরের ক্ষেত্রে একজনই মালিক। যিনি কবুলিয়তের শর্ত ভঙ্গ করবেন। আমরা তার ঘর বাতিল করে দেব। এবং প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নিয়ে দালালি বা বাণিজ্য করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়