প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
কৃষিতে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। কৃষিজমি কমতে থাকা, জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। ধান, গম ও ভুট্টায় বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। করোনার পর সুস্থ হয়ে উঠেছে পৃথিবী। ফলে কৃষিক্ষেত্রে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার সময় এখনই।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (অও), যাকে বাংলায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলা হয়, যা হলো কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি শাখা। সৌভাগ্যবশত কৃষি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উভয়ই বেশ বিস্তর ক্ষেত্র। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অনেক শাখা-প্রশাখা আছে। তার মধ্যে আজকাল দুটি শাখায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহারিক কাজ হচ্ছে বলে আমার মনে হয়। একটা হলো কম্পিউটার ভিশন, বাংলায় যান্ত্রিক দৃষ্টি বলতে পারি। আরেকটা হলো প্রেডিকশন বা পূর্বাভাস। আমি আলোচনা যান্ত্রিক দৃষ্টিতে সীমাবদ্ধ রাখব। কৃষির অনেক শাখা আছে, আমি উদ্ভিজ্জ ফসলে সীমাবদ্ধ রাখছি।
এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হয়ে উঠেছে শিক্ষা এবং আধুনিক কৃষিক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনার অংশ। ইতোমধ্যে কৃষিতেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার শুরু হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে কৃষিতে অও প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মদিনা টেক লিমিটেডের (১৩ মার্চ ২০২২) সিইও মদিনা আলীর নেতৃত্বে একদল তরুণ আইটি ইঞ্জিনিয়ার ও কৃষিবিদরা যুগান্তকারী ‘ডা. চাষী’ মোবাইল অ্যাপ প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে গুগল প্লে-স্টোরে রিলিজ করেছে। এ অ্যাপ দিয়ে এখনই আপনি ছাদ-বাগান এবং মাঠ ফসলের রোগ ও পোকামাকড়ের সঠিক তথ্য ও সমাধান জানতে পারেন। এ অ্যাপ দিয়ে ফসলের আক্রান্ত স্থানের ছবি তুলুন, তা হলেই ‘ডা. চাষী’ বলে দেবে আপনার ফসলের সমস্যা ও সমাধান। ইতোমধ্যে ‘ডা. চাষী’ অ্যাপ তৈরির জন্য বেসিসের আইসিটি চ্যম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড ২০২২ লাভ করেছেন মদিনা টেক লিমিটেডের সিইও মদিনা আলী।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে (ব্রি) ধানের রোগবালাই চিহ্নিতকরণের লক্ষ্যে ‘রাইস সল্যুশন’ (সেন্সরভিত্তিক ধানের বালাই ব্যবস্থাপনা) নামক একটি মোবাইল অ্যাপস উদ্বোধন করা হয়েছে। যা ধানের ক্ষেত থেকেই আক্রান্ত ধান গাছের ছবি দেখে রোগ চিহ্নিত করতে সক্ষম। ২ জানুয়ারি কৃষিমন্ত্রী গাজীপুর ব্রিতে অনুষ্ঠিত ছয় দিনব্যাপী বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ মোবাইল অ্যাপসটি উদ্বোধন করেন।
দেশের কৃষি বিশ্ব^বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে বলে জানা যায়। বাংলাদেশ সরকারের প্রতিরক্ষা ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, নেদারল্যান্ডসের টুয়েন্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম উন্নয়নকেন্দ্র যৌথভাবে ‘স্টারস’ প্রকল্পের আওতায় দেশের কৃষি গবেষণায় আধুনিক, উন্নত ও কার্যকর প্রযুক্তি হিসেবে ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। কৃষিতে অও প্রযুক্তি সংবলিত ড্রোন অর্থাৎ ড্রোনের সঙ্গে অও কাস্টমাইজ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ইন্টিগ্রেট করলে ড্রোন একবার ফসলের ক্ষেতের ওপর দিয়ে উড়ে গেলে ওই এলাকার যে সার্বিক অবস্থা জানান দিতে আগামীতে সক্ষম তা হলো- ফসলের মাঠের আর্দ্রতা পরিমাপ করা, ফসলে উপাদানের উপস্থিতি নির্ধারণ করা, শস্য রোপণ ডিজাইন করা, বীজ রোপণ করা, পোকার আক্রমণ জানা (ইমেজ প্রযুক্তি), কীটনাশক স্প্রে করা, সেচ মনিটরিং করা, ফসলের উৎপাদন জানা, ফসলের সার্বিক মনিটরিং করা, মাটির নিউট্রেন্ট, আর্দ্রতা, তাপমাত্রা, পিএইচ, লবণাক্ততা জানা, ফসলের নিউট্রেন্টের অভাব জানা, ফসলের রোগ ও পোকামাকড় জানা উপস্থিতি জানা, কৃষি ওয়েদার ফোরকাস্টিং এন্ড আগাম এলার্মিং দেয়া, ফসলের আগাম সম্ভাব্য ফলনের পূর্ভাবাস দেয়া ইত্যাদি। স্মার্ট কৃষিতে ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে কৃষিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্প্রসারণ ঘটিয়ে কৃষিকে সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিদীপ্ত প্রযুক্তিভিত্তিক স্মার্ট দেশ গড়ার এখনই সময়।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।