মির্জা ফখরুল : বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গণবিরোধী

আগের সংবাদ

সতর্ক-সংকুলানমুখী মুদ্রানীতি : আমানত সুদের ঊর্ধ্বসীমা প্রত্যাহার > নীতি সুদহার বাড়ল > রেপো সুদহার বেড়েছে ২৫ বেসিস পয়েন্ট

পরের সংবাদ

সিংগাইরে লোভের ফাঁদে কৃষক : মাটিখেকোরা বেপরোয়া, শত শত বিঘা জমি জলাশয়ে পরিণত

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মাসুম বাদশাহ, সিংগাইর (মানিকগঞ্জ) থেকে : ফসলি এলাকা খ্যাত মানিকগঞ্জের সিংগাইরে মাটিখেকোদের দৌরাত্ম্যে কৃষিজমির টপ সয়েল যাচ্ছে বসতবাড়ি, পুকুর, ডোবা ও ইটভাটায়। এভাবে মাটি কাটার ফলে গত কয়েক বছরে শত শত বিঘা জমি বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে।
অপরদিকে দিনরাত ড্রাম ট্রাক ও ট্রলি দিয়ে মাটি বহনের কারণে গ্রামীণ সড়কগুলো ধসে, দেবে ও ভেঙে যাচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকায় নির্মিত রাস্তা, ব্রিজ ও কালভার্ট।
এসব বিষয়ে ভুক্তভোগীরা বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ জানিয়েও স্থায়ী প্রতিকার পাচ্ছেন না।
জানা গেছে, মাঠ থেকে আমন ধান ওঠার পরপরই ফসলি জমির মাটি বিক্রি শুরু হয়। আর এ মাটি মিনিড্রাম ট্রাক ও ট্রলিতে করে নিয়ে যাওয়া হয় ইটভাটায়। সেইসঙ্গে ভরাট করা হয় বসতবাড়ি, পুকুর ও ডোবা-নালা।
মূলত কৃষিজমির মালিকদের আর্থিক সুবিধার টোপ দেয় মাটিখেকোরা। তাৎক্ষণিক নগদ টাকা হাতে পেয়ে দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা না করে জমির টপ সয়েল বিক্রি করছেন কৃষকরা। এভাবে লোভের ফাঁদে পা দিয়ে কৃষকরা তাদের জমির উর্বরতা হারাচ্ছেন।
গত সোমবার দুপুরে চারিগ্রাম চকে গিয়ে দেখা যায়, মেসার্স ফ্রেন্ডস এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে প্রকাশ্যে মজিবর রহমান ও আক্তার হোসেনের ৬০ শতাংশ জায়গা থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। ওই প্রতিষ্ঠানের ই¯্রাফিল, খোরশেদ, পাপুল, রিয়াজুল, নান্টু ও ফিরোজের ৪-৫টি মিনিড্রাম ট্রাক ও ট্রলিযোগে চারিগ্রাম কবরস্থানসংলগ্ন জনৈক মনির পোদ্দারের জায়গা ভরাটের জন্য মাটি নেয়া হচ্ছে।
চারিগ্রাম, চান্দহর ও বলধারা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রতিদিন এমন চিত্র এলাকাবাসীর চোখে পড়লেও প্রশাসন যেন অন্ধ। স্থানীয় প্রশাসন এসব মাটিখেকোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ফলে বেপরোয়াভাবে চলছে তাদের কর্মযজ্ঞ।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ৮-১০ ফুট গভীর করে মাটি কেটে নেয়ার ফলে পাশের জমিগুলো ভেঙে পড়ছে।
এ চক্রটি দীর্ঘদিন যাবৎ সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে মাটি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দিনের পাশাপাশি রাতের আঁধারেও মাটি কাটা হচ্ছে। এতে কমছে ফসলি জমি, হুমকির মুখে পরিবেশ এবং নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তাঘাট। ফসলি জমি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন সিংগাইর উপজেলাবাসী।
চারিগ্রামের মাটি ব্যবসায়ী অভিযুক্ত ই¯্রাফিল ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘পত্রিকায় লিখলে সাময়িক কাজ বন্ধ হবে। যেহেতু মাটি ব্যবসা করি, আজ হোক, কাল হোক মাটি তো কাটবই।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চারিগ্রাম ইউনিয়ন (ভূমি) সহকারী কর্মকর্তা মো. খায়রুল বাশারকে একাধিকবার মোবাইলে কল দিলেও তা রিসিভ করেননি তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ টিপু সুলতান স্বপন বলেন, ‘কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কাটলে জমি তার উর্বরতা হারায়। আর গভীর করে কাটলে স্থায়ী ক্ষতি হয়। এছাড়া ফসলি জমি হ্রাস পেয়ে খাদ্য নিরাপত্তায় ব্যাঘাত ঘটছে। কৃষিজমি রক্ষায় আমাদের সবার এগিয়ে আসা উচিত।’
এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিপন দেবনাথ বলেন, ‘নায়েবকে পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তারপরেও মাটি কাটা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়