মির্জা ফখরুল : বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গণবিরোধী

আগের সংবাদ

সতর্ক-সংকুলানমুখী মুদ্রানীতি : আমানত সুদের ঊর্ধ্বসীমা প্রত্যাহার > নীতি সুদহার বাড়ল > রেপো সুদহার বেড়েছে ২৫ বেসিস পয়েন্ট

পরের সংবাদ

মাদক নিয়ন্ত্রণে ‘কম্প্রিহেন্সিভ অ্যাকশন প্ল্যান’ : কার্যক্রমের বাস্তবায়ন দেখতে চাই

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

গতকাল ভোরের কাগজের খবরে প্রকাশ, মাদক নিয়ন্ত্রণে ‘কম্প্রিহেন্সিভ অ্যাকশন প্ল্যান’ বা সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামার কথা ভাবছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। শুধু ধরপাকড় নয়, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রতিটি ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ে মাদকাসক্তদের চিকিৎসা, কাউন্সিলিং ও সচেতনতা বাড়িয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কথাও বলা হচ্ছে। এ জন্য গত ১০ মাসের বেশি সময় ধরে সারাদেশে কর্মশালা করে প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সহযোগিতায় মাদকের সরবরাহ ও কারবার ঠেকাতে ইতোমধ্যেই তৈরি করা হয়েছে বিশেষ অ্যাপ। তালিকা করা হয়েছে ১ লাখ মাদকাসক্তের। যাদের চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হবে। কাজ চলছে মাদক কারবারিদের তালিকা তৈরিরও। এরই মধ্যে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা শীর্ষ ৯৩ মাদক কারবারির তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। উদ্যোগটি সময়োপযোগী। সামাজিক অবক্ষয় রোধে এটি দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি মনে করছি। মাদকের ভয়াবহতা যে কতটা আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি। কোনোভাবেই এটা হ্রাস হচ্ছে না। বরং দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে প্রায় দিনই একাধিক চালান উদ্ধার ও বহনকারী গ্রেপ্তার হলেও যেন অপ্রতিরোধ্য মাদক কারবারিরা! জানা যায়, ২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকে মাদক নিয়ন্ত্রণে ‘কম্প্রিহেন্সিভ অ্যাকশন প্ল্যান’ বা সমন্বিত কর্মপরিকল্পনার খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়। ২২ ডিসেম্বর থেকে কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা ছিল। করোনা মহামারির কারণে তা হয়নি। গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকা বিভাগে কার্যক্রম উদ্বোধনের মাধ্যমে প্রাথমিক যাত্রা শুরু হয় কম্প্রিহেন্সিভ অ্যাকশন প্ল্যানের। এ কার্যক্রমের সুফল দেখতে চাই আমরা। প্রায়ই কোনো না কোনো গণমাধ্যমে মাদকসংক্রান্ত খবর আমরা পড়ছি। বিশেষ করে মিয়ানমার সীমান্ত হয়ে ইয়াবার চালান আসছে প্রতিনিয়ত। সাগর, পাহাড় আর সড়কপথে নানা কৌশলে পাচার হচ্ছে এ ভয়ংকর নেশার ট্যাবলেট। ভারত থেকে ফেনসিডিলের চালান পাচার হয়ে আসছে। যে পরিমাণ ধরা পড়ছে তার তিনগুণেরও বেশি মাদক সীমান্ত এলাকা থেকে বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, এখন সবচেয়ে বেশি ইয়াবা আসছে কক্সবাজার এলাকা দিয়ে। এ ছাড়া রাজশাহী, কুমিল্লা ও সিলেটের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গাঁজা, ফেনসিডিল ও হেরোইনের চালান নিয়ে আসছে মাদক কারবারিরা। মরণ নেশা ইয়াবা দেশের তরুণ সমাজকে এখন সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করছে। মুড়ি-মুড়কির মতো সর্বত্র ইয়াবা পাওয়া যাচ্ছে। ইয়াবাকে পুঁজি করে রমরমা ব্যবসা চলছে। ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন প্রণয়ন করেছে সরকার। আইন প্রণয়নের চেয়ে আইনের যথাযথ প্রয়োগের বিষয়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এ দিকটিতে জোরালো দৃষ্টি দিতে হবে। দেখা যাচ্ছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় মাদক হিসেবে ইয়াবার আগ্রাসন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। সরকারি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে মাদকাসক্ত মুক্ত হতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর মধ্যে ৮০ শতাংশ ইয়াবায় আসক্ত। দেশের বিরাটসংখ্যক তরুণশক্তি নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখছি, অথচ প্রতিনিয়ত ইয়াবার নেশায় ধ্বংস হচ্ছে তারুণ্য, জাতির ভবিষ্যৎ। তাই তারুণ্যগ্রাসী ইয়াবার বিস্তার এখন জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। ইয়াবার থাবা রুখতে হবে যে কোনো মূল্যে। সীমান্তবর্তী এলাকার মিয়ানমার অংশে ইয়াবা তৈরির কারখানাগুলো নিষ্ক্রিয় করা এবং এ দেশে ইয়াবা অনুপ্রবেশ রোধে বাংলাদেশ-মিয়ানমার আলোচনার মাধ্যমে কার্যকর সমঝোতায় উপনীত হওয়া জরুরি। কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে যেসব চিহ্নিত প্রভাবশালী ব্যক্তি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যেসব সদস্য তাদের সহায়ক, সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়