মির্জা ফখরুল : বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গণবিরোধী

আগের সংবাদ

সতর্ক-সংকুলানমুখী মুদ্রানীতি : আমানত সুদের ঊর্ধ্বসীমা প্রত্যাহার > নীতি সুদহার বাড়ল > রেপো সুদহার বেড়েছে ২৫ বেসিস পয়েন্ট

পরের সংবাদ

চরফ্যাশনে প্রাথমিকে ঝরে পড়ছে ৪২ ভাগ শিশু

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এ আর সোহেব চৌধুরী, চরফ্যাশন (ভোলা) থেকে : চরফ্যাশনে প্রাথমিক শিক্ষার পর্যায়ে ৪২ ভাগ শিশু ঝরে পড়ছে। বাল্যবিয়ে, ভবিষ্যৎ প্রশ্নে অস্পষ্টতা এবং মৌসুমী শিশু শ্রম থেকে লোভনীয় উপার্জনের সুযোগ শিশুদের শিক্ষাজীবন থেকে বিচ্যুত করছে। একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার অনুসন্ধানে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
চরফ্যাশন উপজেলার আয়তন ১১০৬ বর্গ কি.মি.। বিচ্ছিন্ন দীপাঞ্চল সমন্বয়ে এই উপজেলায় ২৬০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১১০টি স্ব^তন্ত্র এবতেদায়ী, ৭০টি সংযুক্ত এবতেদায়ী, ১৮টি কিন্ডার গার্টেন এবং 
১৩৫টি এনজিও চালিত প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বছরের শুরুতে বিদ্যালয় গমনোপযোগী সব শিশু বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও বিভিন্ন শ্রেণিতে এসে শিশুরা বিদ্যালয় থেকে ঝরে যাচ্ছে। ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির মেয়ে শিশুদের একটা অংশ নিয়মিত ঝরে যাচ্ছে বাল্যবিয়ের কারণে।
এদিকে বিদ্যালয়ে ভর্তিকৃত শিশুর ৪২ শতাংশ পঞ্চম শ্রেণির গণ্ডি অতিক্রম করার আগেই লেখাপড়ার পর্ব চুকিয়ে জীবিকার সন্ধানে নেমে পড়ে।
জানা গেছে, বিদ্যালয়ের দূরবর্তী অবস্থান, দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা, অভিভাবকদের দারিদ্র, শিক্ষা অর্জনকে ব্যয় সাপেক্ষ মনে করা, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অস্পষ্টতা এবং মৌসুমী শিশু শ্রম থেকে লোভনীয় আয়ের সুযোগ, অভিভাবকদের অসচেতনতা এবং বাল্যবিয়ে শিশুদের বিদ্যালয় থেকে জীবন সংগ্রামের ক্ষেত্রে টেনে নিচ্ছে।  
শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে প্রাথমিকে বালক ৯৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ ও বালিকা ৯৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ শিশু ভর্তির তথ্যে ৪ দশমিক ৩২ শতাংশ ঝরে পড়ার হার দেখানো হয়েছে। বিদ্যালয়গুলোর দেয়া তথ্যমতে শতভাগ ভর্তি দেখানো হলেও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু ব্যতিত ভর্তিযোগ্য কিন্তু ভর্তি হয়নি এমন শিশুর তালিকায় দেখানো হয়েছে বালক বালিকা মোট ২০৮ জন।
অন্যদিকে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে কর্মরতদের জানা নেই ঝরেপড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। অফিস সহকারী মোর্শেদা বলেন, ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের ডকুমেন্টস বা কোনো তালিকা আমাদের কাছে নেই। তবে শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা জানান, চরফ্যাশন উপজেলায় যান্ত্রিক অযান্ত্রিক ১১ হাজার ট্রলার ও নৌকায় ১০-১৮ বছরের নিচে প্রতিদিন অন্তত ১০ হাজার শিশু নদী ও সাগরে যাচ্ছে মৎস্য শিকারের জন্য।
এসব ট্রলার-নৌকায় মৎস্য শিকারের কাজ করছে ৪৪ হাজার ৩১১ জন জেলে। এই জেলেদের কাজে সহযোগিতার জন্য ঘরের শিশু বা শিশু শ্রমিকদের নিয়ে এসব ট্রলার ও নৌকায় করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী খাল ও সাগরে মৎস্য শিকারে যাচ্ছে জেলেরা।
সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ২৪টি অবৈধ ইটভাটায় ৬০ জনের বেশি শিশুকে দিয়ে মৌসুমী চুক্তিতে কাজ করাচ্ছেন ভাটা মালিকরা। এছাড়াও ধানের মৌসুমে হাজারো শিশু শ্রমিক দিয়ে ধান কাটানো হয় বলে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান।
চর কুকরি-মুকরি মাধ্যমিক বিবদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুসেন দত্ত বলেন, বিদ্যালয়ে বছরের শুরুতে ২৯০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও বছর শেষে ২২২ জন শিক্ষার্থী পাওয়া গেছে।
তিনি জানান, ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ১১ জন, ৭ম শ্রেণিতে ২০ জন, ৮ম শ্রেণিতে ১৮ জন, নবম শ্রেণিতে ১০ জন ও ১০ম শ্রেণিতে ১০ জন শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। যার মধ্যে নবম ও ১০ম শ্রেণির প্রায় ১৫ জন শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে বলেও জানান এ শিক্ষক।
ঢালচর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৮ম, ৯ম ও ১০ম শ্রেণির ১৫ জন শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ে। তিনি জানান, ঢালচর নদী ভাঙনের কারণে চরফ্যাশনের মূল ভূখণ্ডে রসুলপুর ৮ কপাটে একটি শাখা স্থানান্তর করা হয়েছে। ভাঙন কবলিত চরের বিদ্যালয়ে ৩০-৩৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মহিউদ্দিন বলেন, করোনা পরবর্তী বিদ্যালয়গুলোতে ২৫ ভাগ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। বর্তমানে শহর এলাকায় ঝরে পড়ার হার কম থাকলেও চর এলাকায় ঝরেপড়া শিক্ষার্থী রয়েছে। অভাবগ্রস্থ দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে। চর এলাকায় অভিভাবক সমাবেশের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি করে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়