মির্জা ফখরুল : বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গণবিরোধী

আগের সংবাদ

সতর্ক-সংকুলানমুখী মুদ্রানীতি : আমানত সুদের ঊর্ধ্বসীমা প্রত্যাহার > নীতি সুদহার বাড়ল > রেপো সুদহার বেড়েছে ২৫ বেসিস পয়েন্ট

পরের সংবাদ

কাশিয়ানীতে সার নিয়ে কারসাজি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি : গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে সার নিয়ে চলছে নানা কারসাজি। সরকার নির্ধারিত দামে মিলছে না সার। বেশি দামে সার চলে যাচ্ছে অন্য উপজেলার অনুমোদিত খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে। আবার অনেকে কাগজে-কলমে সার উত্তোলন করে বিক্রি করছেন জিও। সার ক্রয়-বিক্রয়ে দেয়া হচ্ছে না কোনো ধরনের ভাউচার।
সরজমিন না গিয়েও কৃষি অফিস থেকে দেয়া হচ্ছে ভুয়া অ্যারাইভাল রিপোর্ট। এমন নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে সার ডিলার ও কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে কাশিয়ানী উপজেলায় ১২ হাজার ২৯৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ধান রোপণের ভরা মৌসুমে সারের চাহিদা কাজে লাগিয়ে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি করছেন ডিলাররা। সরকার নির্ধারিত প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) টিএসপি সারের খুচরা মূল্য ১ হাজার ১০০, এমওপি ৭৫০ এবং ডিএপি ৮০০ টাকা। কিন্তু টিএসপি ১৩০০, এমওপি ১০৫০ ও ডিএপি ৯০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন কোনো কোনো ডিলাররা। ক্রেতাদের দেয়া হচ্ছে না কোনো ধরনের ভাউচার।
উপজেলার পুইশুর ইউনিয়নের বিসিআইসি সার ডিলার ‘মেসার্স শওকত হোসেন মোল্যা’র বিরুদ্ধে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অধিক দামে সার বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।
ওই বাজারের একাধিক সাব ডিলার জানান, তাদের কাছ থেকেও সারভেদে বস্তাপ্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেশি দাম নিচ্ছেন ডিলার শওকত হোসেন। সারের ক্রয়ের ভাউচার চাইলে পরবর্তীতে আর সার দেবেন না বলে হুমকি দেন তিনি। নিরুপায় হয়ে তার কাছ থেকে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এ বিষয় ডিলার শওকত হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে ১৪ জন বিসিআইসি অনুমোদিত সারের ডিলার রয়েছেন। তবে সরকারের অনুমোদিত এসব ডিলারদের অনেকেই সরকারি নির্দেশনা না মেনে স্ব স্ব ইউনিয়ন না থেকে নিজেদের খেয়াল খুশিমতো ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। দোকানে অল্প কিছু সারের বস্তা সাজিয়ে বেশির ভাগ সার গোপনে গুদাম থেকে বিক্রি করা হচ্ছে।
অধিকাংশ ডিলাররা তাদের প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বরাদ্দ টিএসপি (কমপ্লেক্স) সার, পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম থেকে নিজেদের গুদামেই না এনে কাগজপত্র (ডিও) ওখানেই বিক্রি করে দেন। বিএডিসির বরাদ্দকৃত সারের তো কোন হদিস পাওয়া যায়নি। কাগজে-কলমে সব ঠিক থাকলেও, বাস্তব চিত্র ভিন্ন।
কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতি ছাড়াই রাতের আঁধারে গুদামে সার লোড-আনলোড হচ্ছে। বিক্রয় আদেশের আগেই সার ডিলারের গুদামে যাচ্ছে সার। অফিসে বসেই অ্যারাইভাল রিপোর্ট (আগমনী বার্তা) প্রস্তুত করে ডিলারদের দিচ্ছেন কৃষি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এদিকে ২৩ ডিসেম্বর মহেশপুর ইউনিয়নের সার ডিলার আলমগীর হোসেন বিক্রির উদ্দেশ্যে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার যদুনন্দী বাজারে সার পাচারকালে নছিমনসহ ৪০ বস্তা সার আটক করেন স্থানীয় কৃষক। পৌঁছে দেয়ার শর্তে ওই বাজারের ব্যবসায়ী আবুল বাশার আলমগীরের কাছ থেকে ১০০ বস্তা সার ক্রয় করেন। পৌঁছে দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ওই ব্যবসায়ী আলমগীরকে দেয়া ১ লাখ ১৩ হাজার টাকা ফেরত চান। এতে ডিলার আলমগীর ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।

রাতইল ইউনিয়নের ডিলার হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ, ‘তিনি বেশি দাম পেয়ে নির্ধারিত ইউনিয়নের বাইরে সার বিক্রি করছেন। তিনি রাতইল ইউনিয়নের বাসিন্দা হয়েও ২৫-৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রাজপাট ইউনিয়নে তার ভাইয়ের নামে সার ডিলারের লাইসেন্স নিয়েছেন। রাতইল ইউনিয়নের ঘোনাপাড়া বাজারে একই গুদামে সার রেখে দুই ইউনিয়নে ব্যবসা করছেন। একজন কর্মচারী রেখে মাঝেমধ্যে কয়েক বস্তা সার নছিমনে করে রাজপাট বাজারে নিয়ে বিক্রি করছেন। নিয়মিত দোকান খোলা রাখেন না। খোলা থাকলেও ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত খোলা রাখেন। এরপর দোকান বন্ধ করে বাড়িতে চলে যান ওই কর্মচারী।
কৃষকদের অভিযোগ, সার কিনতে গিয়ে প্রায়ই দোকান বন্ধ পেয়ে ফিরে আসতে হয়। এছাড়া তিনি সার ডিলারদের এমওপি সার দেন না। তিনি শুধু নিজে এমওপি সার বিক্রি করেন বলে অভিযোগ সাব ডিলারদের।
দীর্ঘদিন ধরে এসব অনিয়ম চললেও কৃষি বিভাগকে কোন ধরনের ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। দোকানের সামনে টাঙানো সার সংক্রান্ত অভিযোগ সেলের নম্বরে কল করেও কখনো খোলা পাওয়া যায়নি। কৃষক পর্যায়ে সর্বোচ্চ বিক্রয়মূল্যে সার বিক্রি নিশ্চিত করার দায়িত্বে সার-বীজ মনিটরিং কমিটি থাকলেও কাগজে-কলমে।
কাশিয়ানী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সনজয় কুমার কুন্ডু তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো অস্বীকার করে বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী সরজমিন গিয়ে অ্যারাইভাল রিপোর্ট দেয়া হয়।’
কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান বলেন, ‘সারের ব্যাপারে কোনো অনিয়ম হলে ছাড় দেয়া হবে না।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. অরবিন্দু কুমার রায় বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়