রাষ্ট্রপতির ভাষণের আলোচনায় এমপিরা : শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ফের ক্ষমতায় আসার প্রত্যয়

আগের সংবাদ

বরিশালে ড্রেজিং করা বালু ফের নদীতে, খোয়া যাচ্ছে টাকা!

পরের সংবাদ

অবশেষে আলোর মুখ দেখছে সাতক্ষীরার বসন্তপুর নদীবন্দর

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মসিউর রহমান ফিরোজ, সাতক্ষীরা থেকে : অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে বসন্তপুর নদী বন্দর। সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলায় ‘বসন্তপুর নদীবন্দর’ স্থাপনের সদয় অনুমতি জ্ঞাপন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এতে আমদানি-রপ্তানির চাহিদা মিটিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টজনরা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপমহাদেশে সবার আগে দেশের জন্য নিজস্ব সমুদ্র এলাকা দাবি করেন। তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমুদ্র বিজয়ের মাধ্যমে মেরিটাইম বাংলাদেশের প্রকৃত যাত্রা শুরু হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় সাতক্ষীরা কালিগঞ্জ উপজেলাস্থ ভারত সীমান্তবর্তী ইছামতি নদীর উপকণ্ঠ ধরে কোমরপুর, বসন্তপুর হয়ে রথনপুর, বাগমারা এলাকাব্যাপী বিস্তীর্ণ প্রায় ৩৫ কি.মি.। ১৯৬৫ সালে সাতক্ষীরা ও ভারতের সীমান্তবর্তী ইছামতি, কালিন্দী ও কাকশিয়ালি নদীর মোহনায় কালিগঞ্জ উপজেলার বসন্তপুর নামক স্থানে নৌবন্দর স্থাপনের কার্যক্রম চললেও ১৯৬৫ সালে পাক ভারত যুদ্ধের কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। কাস্টমস অফিসের ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা এখনো বিদ্যমান। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বসন্তপুর নৌ বন্দর স্থাপনের দাবিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেন জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক এজাজ আহমেদ স্বপন। শেখ হেলাল এমপির সুপারিশপত্রসহ বসন্তপুর নৌবন্দর স্থাপনে সংশ্লিষ্টদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে বসন্তপুর নদী বন্দর স্থাপনের কার্যক্রম।
সাতক্ষীরা ভারত সীমান্তবর্তী ইছামতি নদীর উপকণ্ঠ বসন্তপুর বিস্তীর্ণ এলাকাব্যাপী প্রায় ৫ কিলোমিটার অভ্যন্তরে বিস্তীর্ণ এলাকাটি নদী-বন্দর নির্মাণের জন্য উপযুক্ত একটি অঞ্চল। তাছাড়া বন্দর উন্নয়ন ও পরবর্তী সম্প্রসারণের জন্য এখানে প্রচুর পরিত্যক্ত জমি আছে। পাশাপাশি সার্বজনীন ও অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ অন্যান্য অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্যও রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ সরকারি উন্মুক্ত স্থান।
ফলে কন্টেইনার, বাল্ক, সাধারণ কার্গো, এলএনজি ও যাত্রী টার্মিনাল নির্মাণের পাশাপাশি অর্থনৈতিক অঞ্চল, তৈরি পোশাক শিল্প কারখানা, মৎস্য, আম, সবজি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলসহ আরো নানাবিধ কর্মক্ষেত্র গড়ে তোলা সম্ভব হবে। বসন্তপুর নদী বন্দর প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বিভিন্ন খাতে ব্যাপক কর্মক্ষেত্র তৈরি হবে। নতুন শিল্পাঞ্চল সৃষ্টির সুবাদে বন্দর সংলগ্ন জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, যশোরসহ দেশের মানুষের একদিকে যেমন কর্মসংস্থান হবে, অন্যদিকে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি নিশ্চিত হবে। বন্দরকে কেন্দ্র করে এসব শিল্প খাত বিকশিত হলে অচিরেই বাংলাদেশ বিশ্বে দরবারে রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বলে আশা করা যায়। সড়ক পথের তুলনায় নৌপথে যাতায়াত ও মালামাল সরবরাহ অধিকতর সহজ ও সাশ্রয়ী বিধায় সাতক্ষীরা হয়ে খুলনা, যশোর, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খাদ্যশস্য সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে এই নদী বন্দর।
এ প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে ব্যাপক প্রসার ঘটবে এবং অর্থনীতিতে নতুন দিগন্তের সূচনা ঘটবে। বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারত এবং চীনের সমন্বিত উদ্যোগে দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে গড়ে উঠছে ইকোনমিক করিডর। ইছামতি নদীর সন্নিকটে বন্দর নির্মিত হলে প্রতিবেশী দেশ ট্রানজিট সুবিধা গ্রহণ করতে আগ্রহী হয়ে উঠবে। এছাড়া ভৌগোলিক অবস্থান থেকে ভারত সাতক্ষীরার দূরত্ব সুবিধার কারণে এ নদী বন্দরটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হয়ে ওঠারও সম্ভাবনা রয়েছে।
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থল বন্দরের ব্যবসায়ীরা বলেন, দ্রুত নদী বন্দর স্থাপন হলে সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণবঙ্গের মৎস্য ব্যবসায়ীসহ কৃষিপণ্য উৎপাদন, বিপণন ও আমদানি রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা স্বস্তি ফিরে পাবেন। কৃষক তথা উৎপাদনকারী তাদের উৎপাদিত মৎস্য, আম ও কৃষিজাত পণ্য দ্রব্যের ন্যায্যমূল্য পাবেন। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে সাতক্ষীরাসহ দেশের অসংখ্য বেকারের। বসন্তপুর নদী বন্দর স্থাপনের মাধ্যমে দক্ষিণবঙ্গের অবকাঠামোগত খাতে আসবে আমূল পরিবর্তন।
জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক এজাজ আহমেদ স্বপন ‘বসন্তপুর নদী বন্দর’ স্থাপন প্রসঙ্গে বলেন, পাক ভারত যুদ্ধের কারণে বসন্তপুর নদী বন্দর স্থাপনের কার্যক্রম চাপা পড়লে সাতক্ষীরার আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নদী বন্দর স্থাপনের দাবিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে বসন্তপুর নদী বন্দর স্থাপনের অনুমোদন দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।
আরো বলেন, নদী বন্দর স্থাপনে আর কোনো জটিলতা না থাকায় দ্রুত সময়ে নদীবন্দর স্থাপনের কার্যক্রম শুরু করার জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিউটিএসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়