আ.লীগ নেতা টিপু হত্যার প্রতিবেদন পেছাল

আগের সংবাদ

মাদকের বিরুদ্ধে ‘নতুন যুদ্ধ’ : তালিকায় ৯৩ শীর্ষ মাদক কারবারি, এক লাখ মাদকাসক্ত, জনসচেতনতা বাড়াতে প্রস্তুত অ্যাপ

পরের সংবাদ

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রায়ই ‘গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু দুই দশক ধরে এটি একটি বহুসংস্কৃতির সমাজে রূপান্তরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদ, ঘৃণামূলক অপরাধ এবং আইন প্রয়োগকারী দ্বারা বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ অসংখ্য ঘরোয়া মানবাধিকার সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। ঘৃণামূলক অপরাধ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং পুলিশি সহিংসতা মার্কিন সমাজের দৈনন্দিন সমস্যা। সরকার কার্যকর নীতি চালু করতে বা প্রণয়ন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। উপরন্তু বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে দায়মুক্তির একটি ব্যাপক সংস্কৃতি রয়েছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের কেমব্রিজে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের এক যুবক। স্থানীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, নিহত ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস আমহার্স্টের ছাত্রের নাম আরিফ সাঈদ ফয়সাল, বয়স ২০। তার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে হলেও তার বাবা-মা চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার বাসিন্দা। পুলিশের বরাত দিয়ে সিবিএস নিউজ জানায়, ফয়সালের কাছে একটি বিশাল ছুরি ছিল। কিন্তু নিহতের চাচা সেলিম জাহাঙ্গীর দৃঢ়ভাবে এই দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। মিডিয়া রিপোর্টেও বলা হয়েছে, তাদের কাছে ফয়সালের ধারালো বস্তুর দাগ দেয়ার কোনো ভিডিও দেয়া হয়নি।
গত বছরের ২৪ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আরো একবার রক্ত ঝরেছিল। সালভাদর রামোস নামে ১৮ বছরের তরুণ ১৯টি শিশু ও দুজন শিক্ষককে হত্যা করেছিল। টেক্সাসের উভালদে রব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটার পর পুলিশ পৌঁছানোর আগেই সীমান্ত টহল এজেন্টরা ওই তরুণকে গুলি করে হত্যা করে। অর্থাৎ আরেকটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটে। টেক্সাসের ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গুলি চালানোর কিছুক্ষণ পরেই কানাডার টরন্টোতে স্কুলের আশপাশে একজন বন্দুকধারীকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে। এগুলো বিচারবহির্ভূত মৃত্যুদণ্ডের উদাহরণ, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় সংঘটিত হয়েছে। দুটি দেশই উন্নত মানবাধিকার আইনের জন্য বিশ্বে পরিচিত।
এ রকম ঘটনা প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে। বিবিসি ও এএফপি জানিয়েছে, গত বছরের মে মাসে নিউইয়র্কের বাফেলোতে একটি সুপারস্টোরে গুলিতে ১০ জন নিহত হয়েছেন। ২০১২ সালে কানেক্টিকাটের স্যান্ডি হুক এলিমেন্টারি স্কুলে বন্দুকধারীর গুলিতে ২০ জন শিশু এবং আরো ছয়জন নিহত হয়। গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের গুলিবর্ষণের ২৬টি ঘটনা ঘটেছে। ২০২০ সালে শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে গুলির সংখ্যা সড়ক দুর্ঘটনাকে ছাড়িয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দ্বারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে তুরস্কের চ্যানেল ‘টিআরটি ওয়ার্ল্ড’ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ২০১৩ থেকে ২০১৯- এই সাত বছরে যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে ৭ হাজার ৬৬৬ জন মারা গেছে। এদের মধ্যে অধিকাংশই শ্বেতাঙ্গ নন। এ ছাড়া শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের চেয়ে অন্তত তিনগুণ কালো আমেরিকান পুলিশের গুলিতে নিহত বা আহত হয়েছেন বলেও পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে।
যে কোনো বিচারবহির্ভূত মৃত্যুদণ্ড ভুল। এ ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অনেক দেশেই ঘটে থাকে। তবে সেখানে এমন পদক্ষেপ নেয়ার সাহসের অভাব রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। এটি যুক্তি দেয়া সঠিক যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডার মতো দেশগুলোর এখন সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর আলোকে নিজেদের পরীক্ষা করা উচিত। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি যে লেন্সের মাধ্যমে তারা দেখে তা পরিবর্তন করার সময় এসেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন নিজেই মানবাধিকার লঙ্ঘন করে, তখন একই বিষয়ে অন্যদের তদারকি করার যোগ্যতা হারায়।

সুফিয়ান সিদ্দিকী : লেখক, ঢাকা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়