আ.লীগ নেতা টিপু হত্যার প্রতিবেদন পেছাল

আগের সংবাদ

মাদকের বিরুদ্ধে ‘নতুন যুদ্ধ’ : তালিকায় ৯৩ শীর্ষ মাদক কারবারি, এক লাখ মাদকাসক্ত, জনসচেতনতা বাড়াতে প্রস্তুত অ্যাপ

পরের সংবাদ

এমপির ছেলে পরিচয়ে ৪০ নারীর সঙ্গে প্রেম-পরকীয়া : কোটি টাকা হাতিয়েছেন ফারদিন, আকৃষ্ট করতে ‘ফলোয়ারের’ ফাঁদ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ইমরান রহমান : মো. মাসুম বিল্লাহ ফারদিন ওরফে রাজু উল্লাহ ওরফে রাজু। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার ৪ লাখেরও বেশি ফলোয়ার। নিজেকে পরিচয় দিতেন গাজীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রহমত আলীর ছেলে হিসেবে। তা সত্য প্রমাণ করতে বিভিন্ন হাইপ্রোফাইল ব্যক্তির সঙ্গে ছবি তুলে নিয়মিত ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করতেন। আর এতেই একের পর এক নারীর সঙ্গে প্রেম ও পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে প্রতারণাও। প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে কিছুদিন না যেতেই বিভিন্ন বাহানায় হাতিয়ে নিতে থাকেন মোটা অঙ্কের টাকা। এভাবে কমপক্ষে ৪০ নারীকে প্রেম-পরকীয়ার ফাঁদে ফেলে হাতিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি, এক ভুক্তভোগীর দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন ভুয়া পরিচয়ে ফেসবুক আইডি অলংকৃত করে সুন্দরী মেয়েদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতেন ফারদিন। মেয়েদের আকৃষ্ট করতে ফেসবুকে ৪ লাখ ফলোয়ার বানান। কেউ ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টে সাড়া দিলেই হাই/হ্যালো শুরু করে নিজেকে সাবেক এমপি রহমত আলীর দ্বিতীয় ঘরের সন্তান হিসেবে পরিচয় দিতেন। এছাড়াও প্রেমের ফাঁদে ফেলতে মেয়েদের দামি গিফট পাঠাতেন। কেউ প্রেমের ফাঁদে পা দিলে নিয়মিত পাঁচ তারকা হোটেলে লাঞ্চ ও ডিনারের জন্য নিয়ে যেতেন। শপিং করে দিতেন নামিদামি শপিংমল থেকে। ধনাঢ্যদের বউদের পরকীয়ার ফাঁদে ফেলে নিয়মিত সিসা বার ও স্পা সেন্টারে গিয়ে উলঙ্গ অবস্থায় কাপল স্পা নিতেন। কখনো কখনো ঘুরতে নিয়ে হোটেল ও রিসোর্টে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ঘনিষ্ঠ সময় কাটাতেন ফারদিন। এরপরই সুকৌশলে প্রতারণা শুরু করতেন তিনি। এছাড়াও বিদেশে পাঠানো, সরকারি চাকরি দেয়া ও বদলির প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতেন। এজন্য তিনি বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কাগজপত্র ফেসবুক থেকে ডাউনলোড করে সফটওয়্যারের মাধ্যমে এডিট করে নিজের নামের সঙ্গে পছন্দের পদবী বসিয়ে ভিকটিমদের মেসেঞ্জার ও ওয়াটসআপে পাঠাতেন।
ডিবি জানায়, শুধু এমপির ছেলে হিসেবে নয়, ফারদিন নিজেকে মন্ত্রীর ভাই, কণ্ঠশিল্পী, পুলিশের স্বামী, সেনা কর্মকর্তার স্বামী, ট্যুরিজম বোর্ডের এক্সিকিউটিভ, বিপিএলের ফ্রাঞ্চাইজি ফরচুন বরিশালের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের যুগ্ম মহাসচিব, একটি পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার, সিরাজগঞ্জ চেম্বার অফ কমার্সের সদস্যসহ বিভিন্ন পরিচয় ব্যবহার করে প্রতারণা করেছেন।
ফারদিনের বিরুদ্ধে গত ৫ জানুয়ারি রাজধানীর কলাবাগান থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া মামলায় (নম্বর-২) এক ভুক্তভোগী নারী উল্লেখ করেন, ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে ফারদিন তাকে বড় বোন বানিয়ে পারিবারিক সম্পর্ক স্থাপন করে। একপর্যায়ে ফারদিন নিজেকে এমপির ছেলে পরিচয় দিয়ে জাইকা প্রজেক্টের আওতায় জাপান পাঠানোর কথা বলে ১৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।
ফারদিনের প্রতারণার বিষয়ে ডিবির সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের ইনচার্জ এডিসি আশরাফুল্লাহ ভোরের কাগজকে বলেন, আড়াই বছর বয়স থেকে হাজারীবাগের এক নিঃসন্তান পরিবারে বেড়ে ওঠা ফারদিন মাত্র ১২ বছর বয়সেই অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৩ সালে সর্বপ্রথম নওগাঁ সদর থানার একটি প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার হন তিনি। এরপর বিভিন্ন পরিচয়ে নারীদের সঙ্গে প্রেম-পরকীয়ার সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে প্রতারণা করতে থাকেন। তার প্রতারণার শিকার এক নারীর দায়ের করা মামলায় গত বুধবার গুলশান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বিভিন্ন প্রতারণায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। বিষয়টি আরো গভীরভাবে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়