ঢাকা-ওয়াশিংটন : রোহিঙ্গা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা

আগের সংবাদ

একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি : শিক্ষার্থী পায়নি ২০০ প্রতিষ্ঠান

পরের সংবাদ

ইটভাটায় মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন কৃষকরা : কুমারখালীতে কমছে কৃষিজমি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি : কয়েক বছর আগেও পদ্মা নদীর তীরের কয়েক হাজার বিঘা জমিতে বাদাম, সরিষা, মসুর, তিলসহ নানা জাতের ফসলের আবাদ করা করা হতো। কিন্তু এখন ওই জমিতে দিন-রাত চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। জমির মালিকরা ইটভাটায় মাটি বিক্রি করে দিয়েছেন মাটি। তাই ভাটা মালিকরা দিন-রাত মাটি কেটে গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছেন। সাময়িক লাভের লোভে জমিতে চাষাবাদ না করে ইটভাটায় মাটি ও বালু বিক্রি করছেন অনেকেই। এতে একদিকে কৃষিজমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের মাজগ্রাম, ছোট মাজগ্রাম ও জুড়ালপুর এলাকায় গিয়ে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।
সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, শিলাইদহ ইউনিয়নের মাজগ্রাম, ছোট মাজগ্রাম ও জুড়ালপুর এলাকায় পদ্মানদীর তীরঘেঁষে বিস্তীর্ণ চর জেগে উঠেছে। এই চরের উর্বর জমিতে সরিষা, মসুর ও কলাগাছসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করা হয়েছে। এসব আবাদি জমির আশপাশে অন্তত ১৫টি ভেকু দিয়ে চরে মাটি ও বালু কাটা হচ্ছে। আর এই মাটি শ্যালো ইঞ্জিনচালিত লাটাহাম্বা, ট্রলি, মাহেন্দ্র লরিসহ বিভিন্ন পরিবহনযোগে বিভিন্ন ইটভাটায় নেয়া হচ্ছে। অনেকেই তাদের মাটি বিক্রির উদ্দেশ্যে জমি মাপজোক করে সীমানা নির্ধারণ করছেন।
এ সময় কথা হয় মাজগ্রামের কৃষক সুলতান খানের সঙ্গে। তিনি জানান, তার প্রায় ৯০ শতাংশ জমি রয়েছে। জমিতে দু-তিন বছর আগে বাদামের চাষ করতেন তিনি। কিন্তু চাষের চেয়ে মাটি বিক্রিতে লাভ বেশি। বর্তমানে সবাই চাষাবাদ বন্ধ করে ভাটায় মাটি বিক্রি করেন। তাই তিনিও প্রতি ৩৩ শতক জমির মাটি ১ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন।
একই এলাকার আবুল হোসেন নামে আরেক কৃষক বলেন, আগে সবাই চাষাবাদ করত। কিন্তু চাষে তেমন লাভ হয় না, তাই প্রতি বিঘা জমির মাটি ও বালু ৯০ হাজার টাকা করে বিক্রি করেছেন তিনি।
জানা গেছে, শিলাইদহ ইউনিয়নে বর্তমানে ১২টি ইটভাটা চালু রয়েছে। অথচ গত দুই-তিন বছর আগে এ ইউনিয়নে ভাটার সংখ্যা ছিল মাত্র ২-৩টি। দিন দিন ভাটার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় পদ্মা কোলের বেশ কয়েকজন কৃষক ভাটা মালিকের দালালদের দেয়া প্রলোভনে কৃষি উৎপাদন বন্ধ করে ভাটায় মাটি ও বালু বিক্রি করছেন। এতে অন্য কৃষকদেরও চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে।
এ বিষয়ে শাকিল হোসেন নামে এক কৃষক জানান, তার চার বিঘা জমিতে কলার চাষ করেছেন। কিন্তু বালু মাটিতে ফসল ভালো হচ্ছে না। তাই কলাগাছ কেটে বালু বিক্রি করছেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে ভাটা মালিক রানা জোয়ার্দার জনান, প্রতি বিঘা জমি কৃষকের কাছ থেকে ১ লাখ টাকায় কিনেছেন তিনি। কৃষকদের বৈধ কাগজপত্র আছে।
জুড়ালপুর গ্রামের মো. আমির হোসেন বলেন, চাষাবাদ করলে পদ্মার বুকে ভালো ফসল ফলানো সম্ভব। কিন্তু কিছু অসাধু ভাটা মালিক ও কৃষক আইন অমান্য করে বালু ও মাটি কেনাবেচা করছেন। দোষীদের শাস্তি হওয়া দরকার।
স্থানীয় কলেজ শিক্ষক আরিফুজ্জামান বলেন, প্রত্যন্ত গ্রামে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটা। এতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ফলে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।
তিনি আরো বলেন, ইটভাটার কাজের অজুহাতে ছোট-বড় অসংখ্য অবৈধ যানবাহন গ্রামীণ সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ফলে ভালো সড়কগুলো দ্রুতই খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকেও অবগত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাইসুল ইসলাম বলেন, কয়েক বছর আগেই সেখানে বাদামসহ বিভিন্ন তেল জাতীয় ফসলের চাষাবাদ হতো। সরকার কৃষির উৎপাদন বাড়াতে প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু ইটভাটার কারণে কৃষিজমি ও কৃষি উৎপাদন অনেকাংশে কমে যাচ্ছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমিরুল আরাফাত বলেন, কৃষিজমির মাটি ও বালু কাটা এবং জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা সরকারিভাবে সম্পূর্ণ নিষেধ রয়েছে। এমন চিত্র থাকলে দ্রুতই প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়