কাগজ প্রতিবেদক : দেশের শহরাঞ্চলে বসবাসকারী ২১ শতাংশ মানুষ সুপেয় পানি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। বিষয়টি স্বীকার করে এ বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সুপেয় পানির দুশ্চিন্তা দূর করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদে এম আব্দুল লতিফের এক প্রশ্নের লিখিত জবাবে তিনি এ কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
প্রশ্নকর্তা সংসদ সদস্য এম আব্দুল লতিফ জাতীয় সংসদে লিখিত প্রশ্নে বলেন, ‘সম্প্রতি বিবিএসের জরিপে উঠে এসেছে দেশের শহরগুলোতে বসবাসকারী ২১ শতাংশ মানুষ তাদের খাবার পানি নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। এটি সত্য হলে এ বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সমস্যা লাঘবে সরকার কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে?’
জবাবে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, দেশের শহরগুলোতে বসবাসকারী পরিবারের ২১ শতাংশ মানুষের খাবার পানি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে- এটা জরিপে উঠে এসেছে, তবে তা লাঘবে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছে। শহরাঞ্চলে সুপেয় পানির জন্য দেশের সব পৌরসভায় পয়েন্ট সোর্সের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চালু আছে এবং অধিকাংশ পৌরসভায় পাইপলাইনের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। পৌর এলাকায় পানি সরবরাহ কভারেজ প্রায় ৯৯ দশমিক ৬ শতাংশ। এর মধ্যে পয়েন্ট ওয়াটার সাপ্লাই ও পাইপ ওয়াটার সাপ্লাইয়ের মাধ্যমে যথাক্রমে ৬১ দশমিক ৬ শতাংশ ও ৩৮ শতাংশ জনগণ পানি সরবরাহ সুবিধা পাচ্ছে [বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও ইউনিসেফের যৌথ জরিপ প্রতিবেদন- মাল্টিপল ইনডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে (এমআইসিএস)-২০১৯ অনুয়ায়ী]। তিনি বলেন, তবে পর্যায়ক্রমে সব পৌর এলাকায় পাইপলাইনের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চালুর কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে প্রায় ১৫৯টি পৌরসভায় পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চালু আছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ৯৬টি পৌরসভায় বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ কার্যক্রম বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। পৌর এলাকায় উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমগুলো হচ্ছে- পৌর এলাকায় ১২টি প্রকল্পের মাধ্যমে মোট ৬৮৮টি উৎপাদক নলকূপ, ৫ হাজার ৪৭১ দশমিক ৬৫ কি.মি. পাইপলাইন, ৮৭টি পানি শোধনাগার, ৬৬টি উচ্চ জলাধার, ১২ হাজার ৫৮৯টি গৃহ সংযোগ এবং ১৫ হাজার ৩৩২টি নলকূপ স্থাপন কাজ বাস্তবায়িত হচ্ছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ১৮টি জেলা শহরে ‘ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি সরবরাহ প্রকল্প’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাবিত রয়েছে। ওই প্রকল্পের আওতায় ৩৬টি ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি শোধনাগার, ৩৬টি উচ্চ জলাধার, ১ হাজার ৫৩৪ কি.মি. পাইপলাইন এবং ১ লাখ ৪৪ হাজারটি গৃহ সংযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। সারাদেশের ৩১টি পৌরসভায় ‘নিরাপদ পানি সরবরাহ ও এনভায়রনমেন্টাল স্যানিটেশন প্রকল্প’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাবিত রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৯৭টি উৎপাদক নলকূপ, ১০টি আয়রন রিমুভাল প্ল্যান্ট, ৯৩১ দশমিক ৮ কি.মি. পাইপলাইন, ১ লাখ ২ হাজার ৬১টি গৃহ সংযোগ, ৩১১টি পাবলিক টয়লেট, ৭৬৩টি কমিউনিটি ল্যাট্রিন, ৩১টি পৌরসভায় কম্পোজিট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং ৪০৩ দশমিক ৭৩ কি.মি. ড্রেন স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।