‘রেজা বাহিনী’ থেকে রেহাই চান হোটেল ব্যবসায়ী

আগের সংবাদ

২৭ দফাই হবে ভোটের ইশতেহার : বিএনপির ‘রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা’ ঘষামাজার কাজ চলছে > নেয়া হবে সব স্তরের মানুষের মত

পরের সংবাদ

কর্মকর্তাদের অনিয়ম দুর্নীতি : ৯ বছরেও চুক্তির দলিল পাননি সামাজিক বনের অংশীদাররা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

খোরশেদ আলম, শেরপুর থেকে : শেরপুরের ৩ উপজেলায় বন কর্মকর্তাদের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও গাফিলতির কারণে ৯ বছরেও চুক্তিনামা দলিল পায়নি সামাজিক বনের অংশীদাররা। ফলে দলিল পাওয়া, না পাওয়া নিয়ে হতাশা আর অনিশ্চয়তায় ভুগছেন শত শত অংশীদার।
অংশীদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা নিজস্ব অর্থ ও শ্রম দিয়ে বন সৃজন করেছেন। আর বনসৃজনের পরপরই চুক্তিনামা দলিল দেয়ার কথা। কিন্তু বন কর্মকর্তাদের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে অংশীদাররা তাদের চুক্তিনামা দলিল পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে। আর দলিল না পেয়ে শত শত অংশীদার এখন দিশাহারা। শেরপুর সীমান্তে শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুরি, ঝিনাইগাতী উপজেলার রাংটিয়া ও নালিতাবাড়ী উপজেলার মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জের আওতায় প্রায় ৩ হাজার অংশীদার রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ১৯৯২ সালে বনবিভাগের জমিতে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি হাতে নেয় সরকার। বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় গড়ে তোলা হয় সামাজিক বনায়ন। পাহাড়ি এলাকার অসচ্ছল পরিবার যারা বনের ওপর নির্ভরশীল তাদের আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে করা হয় সামাজিক বনের অংশীদার। প্রথমদিকে এক হেক্টর বনের জমিতে সামাজিক বন সৃজন করে ১০ বছর মেয়াদে চুক্তি করা হয় অংশীদারের সঙ্গে। সৃজনকৃত বন দেখভালের দায়িত্ব অংশীদারদের। ১০ বছর পর বনের গাছ নিলামে বিক্রি করে ৪৫ ভাগ সরকার, ৪৫ ভাগ অংশীদার ও ১০ ভাগ পুনরায় বন সৃজনের জন্য বিভাগীয় বন কর্মকর্তার হিসাব নাম্বারে (টিএফ ফান্ডে) জমা রাখা হয়। কিন্তু নিলামে কাঠ বিক্রি করার পর ওইসব এলাকায় দ্বিতীয় দফায় সামাজিক বনায়ন সৃজনের সময় টিএফ ফান্ডের টাকাগুলো বন সৃজনের কাজে ব্যবহার না করে অংশীদারদের দিয়ে বন সৃজন করে নেয়া হয়।
জানা গেছে, সামাজিক বনের অংশীদারদের মধ্য থেকে বন কর্মকর্তাদের অনুগত ব্যক্তিদের ২ জনকে টিএফ কমিটির সভাপতি/সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। যাদের স্বাক্ষরে উত্তোলন করা হয় টিএফ ফান্ডের অর্থ। জানা গেছে, বনসৃজনের সময় টিএফ ফান্ডের ওই টাকা উত্তোলনের পর অর্ধেক টাকা টিএফ কমিটির সভাপতি/সম্পাদকের যোগসাজশে হরিলুট করেন বন কর্মকর্তারা। বাকি টাকা বন সৃজনের জন্য অংশীদারদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। কোনো কোনো সময় পুরো টাকাই হরিলুট করা হয় বলে জানান সামাজিক বনের অংশীদাররা। আবার কোনো সময় কিছু টাকা তাদের দেয়া হয় বন সৃজনের জন্য। তবে সে টাকায় বন সৃজন করা সম্ভব হয় না। অংশীদারদের নিজেদের অর্থ ও শ্রমে বন সৃজন করতে হয়। এভাবেই চলে সামাজিক বনায়নের কর্মকাণ্ড। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় বন সৃজনের সময় জনপ্রতি জমির পরিমাণ কমিয়ে অংশীদারের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। প্রতিজনের নামে দেয়া হয়েছে এক একর করে জমি। অংশীদার বাড়ানোর ক্ষেত্রেও প্রতিজন অংশীদারকে বন কর্মকর্তার হাতে দিতে হয়েছে ৫ থেকে ১০ হাজার করে টাকা। বন এলাকার দরিদ্র পরিবার থেকে অংশীদার নেয়ার নিয়ম থাকলেও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বন কর্মচারীরা টাকার বিনিময়ে বাইরে থেকেও নেয় সামাজিক বনের অংশীদার। বন কর্মকর্তাদের এসব অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতেও সাহস পায় না। আবার কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে বনকর্মচারীরা নানা কৌশলে অংশীদারের নাম বাতিল করে দেবে বলে হুমকি অন্যথায় মিথ্যা বন মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করবে। এ ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।
গজনী ফরেস্ট বিট এলাকার সামাজিক বন কমিটির সভাপতি মো. দুলাল মণ্ডল জানান, ২০১৯ সালে বন কর্মকর্তাদের এসব অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি লিখিত অভিযোগ পাঠান। কিন্তু এসব দুর্নীতির অবসান হয়নি। বরং এ সময় বন কর্মকর্তারা তার নামে ও তার এক আত্মীয়ের নামে ৫টি করে ১০টি বিভাগীয় বন মামলা দাখিল করে। এভাবে বন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রায় অর্ধশত লোকের নামে মামলা দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। আর বন মামলা থেকে রেহাই পায়নি স্থানীয় সাংবাদিকরাও। দৈনিক মানবকন্ঠের সাংবাদিক জিয়াউল হক বলেন, বন কর্মকর্তাদের এসব অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তার নামে ৫টি বিভাগীয় মামলা দেয়া হয়েছে। এ কারণে বন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলছেন না।
জানা গেছে, যাদের অংশীদার করা হয়েছে তাদের নামের তালিকা উপজেলা পরিবেশ ও বন উন্নয়ন কমিটির সভায় অনুমোদনের পর অংশীদারদের চুক্তিনামা দলিল দেয়ার কথা। কিন্তু এখানে তা করা হয়নি। ফলে গত ৯ বছরেও দলিল দেয়া হয়নি।
সামাজিক বনের অংশীদার রাংটিয়া গ্রামের আব্দুর রহমান, বাকাকুড়া গ্রামের মুসা সরদার, নাওকুঁচি গ্রামের গোলাপ হোসেন, আবুল কাশেম, নিলু রঞ্জন হাজং, গান্দিগাঁও গ্রামের এনামূল কবির মানিকসহ আরো অনেকেই জানান, ২০১২ সালে তারা সামাজিক বনের অংশীদার হন। তারা অর্থ ব্যয় করে ও শ্রম দিয়ে বন সৃজন করেছেন। কিন্তু আজও তারা চুক্তিনামা দলিল পাননি। পাবেন কিনা এ বিষয়েও অনিশ্চয়তায় ভুগছেন তারা। তাদের মতো ৩ হাজার অংশীদারের একই অবস্থা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক বন কর্মকর্তা জানান, উপজেলা বন উন্নয়ন কমিটির সভায় অনুমোদনের জন্য নামের তালিকা পাঠানো হলে দলীয়ভাবে তালিকা নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু হয়। এ কারণে নামের তালিকা পাঠানো হয়নি। রাংটিয়া ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, সমস্যাটি দীর্ঘদিনের তাই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রুহুল আমীন বলেন, সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হযেছে। অংশীদাররা চুক্তিনামা দলিল না পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, দলিল যাতে পান এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, বন এলাকার দরিদ্র পরিবারের সদস্যদের অংশীদার নেয়ার কথা। কিন্তু প্রভাবশালীরা এসে অংশীদার হতে চাপ দেয়। এ কারণে দলিল দেয়া হয়নি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়