প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য চাকরি মেলা

আগের সংবাদ

গুচ্ছের ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হয়নি : অনিশ্চয়তায় ২১ হাজার শিক্ষার্থী

পরের সংবাদ

মহেশখালীর এসপিএম প্রকল্প : পুনর্বাসনের আশ্বাসে উচ্ছেদ ৫ বছরেও মেলেনি পাকাঘর

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এম বশির উল্লাহ, মহেশখালী (কক্সবাজার) থেকে : স্বপ্ন দেখিয়েছিল আকাশ ছোঁয়া, প্রতিটি পরিবারকে পাকাঘর দেয়া হবে, প্রকল্পে স্থায়ী চাকরি হবে সবার এবং ক্ষতিগ্রস্ত সব পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণসহ এক বছরের মধ্যে পুনর্বাসন করা হবে। এভাবে আশ্বাস দিয়ে উচ্ছেদ করা হয় দুই শতাধিক পরিবারকে।
২০১৮ সালের মে মাসের দিকে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের সোনার পাড়ায় বন বিভাগের জায়গা অধিগ্রহণ করে নির্মাণ করা হচ্ছে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) প্রকল্প। এসপিএম প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণকৃত এই জায়গাতেই প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের বসবাস ছিল। মূলত স্থানীয় ভূমিহীন এই পরিবারগুলো বহু বছর ধরে পাহাড়ি জায়গা দখল করে বিভিন্ন ফলজ ও ওষুধি গাছ রোপণ করেছিল। পাহাড়ি ঝিরিতে সমতল জায়গায় জুম চাষসহ মিষ্টি পানের বরজ করে জীবিকা নির্বাহ করত। প্রতিটি পরিবারের বাড়ির আঙ্গিনা ও ঝিরিতে ছিল বিভিন্ন প্রকার ক্ষেত। যুগ যুগ ধরে খুব সুখেই বসবাস করে আসছিল এসব পরিবার। কিন্তু উন্নয়ন প্রকল্পের নামে অপরিকল্পিত উন্নয়নেই কেড়ে নেয় তাদের সব সুখ। একটি চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসপিএম প্রকল্প নির্মাণের জন্য এই পাহাড়ি জায়গা বেছে নেয়। শুরুতে স্থানীয়রা এর প্রতিবাদ ও বাঁধা দিতে থাকে। তারা নিজ বসতভিটা ছেড়ে দিয়ে কিছুতেই উচ্ছেদ হতে রাজি হয়নি। তবে তাদের বিভিন্ন লোভনীয় অফার দেয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল উচ্ছেদকৃত পরিবারগুলোকে এক বছরের মধ্যে পাকাঘর দেয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে উচ্চ মূল্যে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। প্রকল্পে শ্রমিকের কাজসহ স্থায়ী চাকরি দেয়া হবে। এসব লোভনীয় আশ্বাস ও চরম ভয়ভীতি দেখিয়ে নামেমাত্র স্বল্প টাকা হাতে দিয়ে উচ্ছেদ করা হয় প্রায় দুই শতাধিক পরিবারকে।
এসব পরিবারগুলোকে এক বছরের মধ্যে পাকাঘর দেয়ার আশ্বাস দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় কলোনি নামক এক উন্মুক্ত জেলখানায়। তাদেরকে মোট তিনটি কলোনিতে রাখা হয়। এর মধ্যে কালারমারছড়া বাজারের পূর্ব পাশে একটি এবং অন্য দুইটি কলোনি এসপিএম প্রকল্প লাগোয়া সোনার পাড়ায় রয়েছে। সোনার পাড়ায় দুইটি কলোনির একটিতেই বসবাস করে ২৬টি পরিবার। তিনটি কলোনির মধ্যে কম পরিবার বসবাস করে এই কলোনিতে। এক পরিবারের জন্য দুইটি করে রুম বরাদ্দ দেয়া হয়। সেখানেও বৈষম্য, কারো পরিবারে সদস্য সংখ্যা বেশি থাকা সত্ত্বেও রুম পেয়েছে ছোট। এই দুইটি রুমে বসবাস করছে পিতা-মাতা, ছেলে-মেয়েসহ ছেলের বউ বাচ্চারাও। দেখে মনে হবে এক নরক যন্ত্রণায় বসবাস করছে তারা। এই ২৬ পরিবারের জন্য টিনের বেড়া দিয়ে নির্মাণ করা হয় মাত্র তিনটি খোলা টয়লেট। ভোরে টয়লেটে যেতে নারীসহ ছোট বড় সবাইকে লাইনে দাঁড়াতে হয়। দেখতে দেখতে এভাবে কেটে গেছে প্রায় পাঁচ বছর।
এদিকে এসপিএম প্রকল্প থেকে উচ্ছেদকৃত পরিবারগুলোকে কবে নাগাদ পুনর্বাসন করা হবে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কেউ সঠিক তথ্য দিতে পারছেন না। সবাই যার যার মতো দায়সারা বক্তব্য দিয়েই এড়িয়ে

চলার চেষ্টা করছেন। 
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইয়াছিন জানান, তিনি নন, এসপিএম প্রকল্পে পুনর্বাসনের ব্যাপারে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলতে পারবেন। প্রকল্পে নিয়োজিত দোভাষী নেজাম উদ্দিন বলেন, ‘কাজের শুরুতে আমি এখানে ছিলাম না। তাই পুনর্বাসনের বিষয়ে তাদের মধ্যে কী কথা ছিল, তা আমার জানা নেই।’
এ বিষয়ে জানতে স্থানীয় কালারমারছড়ার ইউপি চেয়ারম্যান তারেক বীন ওসমান শরিফের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তা রিসিভ করেননি তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়