প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য চাকরি মেলা

আগের সংবাদ

গুচ্ছের ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হয়নি : অনিশ্চয়তায় ২১ হাজার শিক্ষার্থী

পরের সংবাদ

ঢাকা লিট ফেস্টের পর্দা নামল : আগামীর পৃথিবী আরো সুন্দর করতে বদ্ধপরিকর সবাই

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : কুয়াশাভেজা সকালে হিমেল হাওয়ার স্পর্শে কীর্তনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল চারদিনব্যাপী ঢাকা লিট ফেস্টের শেষ দিনের আয়োজন। এদিনে আলোচনার মূল আকর্ষণে ছিলেন নোবেলজয়ী লেখক আবদুলরাজাক গুরনাহ। গল্প বলেছেন নিজের শৈশব, পড়াশোনা ও লেখালেখিসহ জীবনঘনিষ্ট নানা বিষয়ে। গতকাল রবিবার রাজধানীর বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে ‘ডিজারশন’ শিরোনামের সেই সেশন সঞ্চালনা করেন তারই একাধিক বইয়ের সম্পাদক আলেক্সান্দ্রা প্রিংগেল।
আবদুলরাজাক গুরনাহ বলেন, শিক্ষা বলতে স্কুলেই শুরু। পঞ্চম শ্রেণি থেকে একটি সরকারি স্কুলে লেখাপড়া শুরু করি। এই স্কুলের একটি ভালো দিক ছিল, পবিত্র কুরআন পুরোটা পড়া শেষ হলে পরীক্ষা নেয়া হতো। পরীক্ষায় পাস করলে গ্র্যাজুয়েট বলা হতো। তারপর আর কুরআন স্কুলে যাওয়া লাগতো না। অন্য বিশেষ একটি কারণে, হয়তো বা বিশেষ প্রতিভার কারণে আমি দুইবার পড়া শেষ করেছিলাম। তখন আমার বয়স ছিল মাত্র ৯ বছর।
ছোটবেলায় বইপড়া বিষয়ে বলেন, যখন পড়ার ইচ্ছা জেগেছিল, তখন বইয়ের বেশ দাম ছিল। বই কেনার চর্চা তখন ছিল না। আমি সেগুলোই পড়তাম, যেগুলো স্কুলে পাওয়া যেত। ১০ বছর বয়সে টাইফয়েড হয়েছিল। তখন সেই রোগের চিকিৎসা খুব একটা সহজ ছিল না। আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। প্রায় ৩ মাস সেখানে ছিলাম। সেখানে থাকা অবস্থায় আসলে স্কুলের বইগুলো পড়েছিলাম।
নিজের প্রথম লেখা বই প্রসঙ্গে গুরনাহ বলেন, আমি সেই সময়টা সম্পর্কে লেখার চেষ্টা করেছিলাম। সুনির্দিষ্টভাবে কোনো কিছু না বলেই। আমি সেই সময়ের নাগরিক অধিকার নিয়ে লিখতাম। শিক্ষার পাশাপাশি অন্যান্য স্বাধীনতা নিয়েও লিখতাম। আরেকটি বিষয় নিয়ে লিখতাম যে একজনের সঙ্গে আরেকজনের এত নির্মমতা কেন! আমি কিছু মানুষকে জানতাম, যাদের সঙ্গে এমনটা করা হয়েছিল। তাদের অভিজ্ঞতাগুলো তুলে ধরার চেষ্টায় ছিলাম। যুক্তরাজ্যে নিজের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে নোবেলজয়ী লেখক গুরনাহ বলেন, সেখানকার মানুষ কোনো কিছু বলার আগে চিন্তা করে না। অসংবেদনশীল, নির্মম শব্দ ব্যবহার করতো। মুখের ওপর বাজে কথা বলে দিতো। কোনো অনুশোচনাবোধ ছিল না। অসচেতনায় বর্ণবাদী আচরণ করলেও তারা সেটি আসলেই বুঝত।
সকালে বাংলা একাডেমির লনে ‘বিশ্বায়নের কালে ভবিষ্যতের কবিতা’ শিরোনামে সেশনটি সঞ্চালনা করেন কবি আশরাফ জুয়েল। আলোচনা করেন জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা ও পশ্চিমবঙ্গের কবি গৌতম গুহ রায়। আলোচানায় কবি ও কবিতার নানা দিক দিয়ে আলোচনা হয়। ভবিষ্যতে কারা কবিতা পড়বেন, ভবিষ্যতের কবিতায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রভাব কতটুকু থাকবে, সেই প্রসঙ্গও উঠে আসে। সাহিত্যের

অন্যতম মাধ্যম কবিতা। বিশ্বায়নের কালে ভবিষ্যতের কবিতা কেমন হবে, ভাষার বিবর্তন কিংবা ভাষার মৃত্যুতে কবিতাও কি বিপন্ন হবে? কবিতা আগামী মানুষের জীবনযাপনে কতটা প্রভাব ফলবে? এমন প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এদিন ‘শৈশব’ শীর্ষক সেশনে রুশ উপকথার ‘আইভান’ হাজির হয়েছিলেন বাংলা একাডেমির নভেরা মঞ্চে ফারহানা মান্নান ও তার দলের হাত ধরে। শিশুদের উপস্থিতিতে সেশনের সূচনায় ফারহানা মান্নান সবাইকে নিয়ে করেন শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, শিল্প ও গণিত এই তিনটি বিষয়ের ইংরেজি পরিভাষার আদ্যক্ষর দিয়ে এক্রোনিম ঝ-ঞ-ঊ-অ-গ তিনি শেখান উপস্থিত সবাইকে। ক্রিকেট এখন অনেকটাই ব্যাটারদের হয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক কোচ কিংবদন্তি স্যার গর্ডন গ্রিনিজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের জাতীয় দলের সাবেক এই বিধ্বংসী ওপেনার বলেছেন, আমাদের বোলার ও ব্যাটারদের সাম্য প্রতিষ্ঠা করা উচিত। ‘আই অন দ্য বল’ শীর্ষক সেশনে এসব প্রসঙ্গে কথা বলেন তিনি।
শেষ দিনে একই মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘রান অ্যান্ড হাইড’ সেশন। যেখানে ভারতীয় ঔপন্যাসিক ও প্রবন্ধকার পঙ্কজ মিশ্র বলেন, পশ্চিমা বিশ্ব নিজেদের মতো করে রাজনীতি, অর্থনীতি, জীবনধারা ইত্যাদির ধারণা ও আদর্শ মান তৈরি করেছে। গোটা বিশ্বে সেই মানকেই কার্যকর করতে প্রভাবিত করছে। আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোও সেই মান স্পর্শ করতে চাচ্ছে। কিন্তু চাপা পড়ছে অঞ্চলভিত্তিক ভিন্ন চিন্তা ও চাহিদা।
ঢাকা লিট ফেস্টের গত চারদিনে পাঁচ মহাদেশের পাঁচ শতাধিক বক্তা, সাহিত্যিক, লেখক, শিল্পী ও চিন্তাবিদ তাদের জ্ঞান আর অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার তুলে ধরেছিলেন সবার মাঝে। এই কনকনে শীত উপক্ষো করে শিশু, তরুণসহ হাজার হাজার মানুষ সেখানে এসেছিলেন নতুন কিছু জানতে, ভাবনার আদান-প্রদান করেতে। ১৭৫টির বেশি অধিবেশনে তারা নানাভাবে শাণিত হয়েছেন। কবি-সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী আর চিন্তাবিদের সঙ্গে বিনিময় করছেন আগামীর ভাবনা। লিট ফেস্টের সমাপ্তির দিনে আগামী পৃথিবী আরো সুন্দর ও মানবিক করতে যেন সবাই বদ্ধপরিকর। আর সে গল্পগুলোই যেন এবারের লিট ফেস্টের সফল গল্প হিসেবে জমা হলো।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়