প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য চাকরি মেলা

আগের সংবাদ

গুচ্ছের ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হয়নি : অনিশ্চয়তায় ২১ হাজার শিক্ষার্থী

পরের সংবাদ

আদিবাসীদের স্বীকৃতি প্রসঙ্গে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জয়পুরহাটের সীমান্তঘেঁষা নওগাঁ জেলার ধামইর উপজেলার ইশোকপুর ইউনিয়নের পড়ান গ্রামের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব বয়সি মিনত পাহান। তিনি কবে তার স্বামীকে হারিয়েছেন তার দিন-তারিখও স্মরণ নেই। তবে তার মনে আছে তিনি যখন তরুণী ছিলেন তখন তার স্বামীর মৃত্যু দেখেছেন। স্বামীর অকাল মৃত্যুতে জেঁকে বসে দারিদ্র্যের ছায়া। কারণ স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তি বলতে শুধু ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছু নেই। পরবর্তী সময়ে তিনি তার ছোট তিন মেয়েকে নিয়ে বিপদে পড়েন। সন্তানদের লেখাপড়া তো দূরের কথা মুখের খাবার জোগাড় করা যেন কঠিন হয়ে যায়। মানুষের বাড়িতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শ্রম দিয়ে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা দিনে আয় করে সামান্য কিছু টাকা জমিয়ে পাড়া-প্রতিবেশীর কাছে সাহায্য নিয়ে তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এখন বয়সের ভারে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে পারেন না। কনকনে শীতে তার ভাঙা টিনের ঘরে ঠাণ্ডা হাওয়ায় থরথর করে কাঁপতে থাকেন।
এমন বৃদ্ধ বয়সেও বুকে স্বপ্ন বুনে রাজপথে নেমেছেন বৈষম্যমূলক সমাজ পাল্টানোর। রাজপথে নেমেছেন সাম্যের সমাজের দাবি নিয়ে। জেলা চিনিকল রোড থেকে বাটার মোড় পর্যন্ত সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের মিছিলে কাঁধে নিয়েছেন লাল পতাকা। বজ্রকণ্ঠে আওয়াজ তুলেছেন- ঘরে বাইরে নারী নির্যাতন বন্ধ করো, আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে, কর্মক্ষেত্রে নারীদের ন্যায্য মজুরি দিতে হবে। আরো নানা সেøাগানে শরীর কাঁপছে, কাঁধে লাল পতাকা হিমেল হাওয়ায় উড়ছে অবিরাম। মিছিল শেষে বাসদ অফিসে আসা মাত্রই কম্বল দিয়ে জড়িয়ে দিলেন জেলা বাসদ নেতৃবৃন্দ। কম্বল পেয়ে তিনি বলেন, গরিব হয়ে জন্ম নেয়া পাপের। বয়সের ভারে পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য টাকা আয় করতে পারি না। এর মধ্যে শীতে কম্বল কেনার টাকা কই পাব? তবে এই কম্বল পেয়ে এবারের শীত কাটাতে পারব। কম্বল পেলাম কিন্তু আমরা আদিবাসী মানুষ সাংবিধানিক স্বীকৃতি কবে পাব?
তার প্রশ্ন শুনে ভাবনার জায়গা তৈরি হয়েছে। ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা, সে স্বাধীনতা সংগ্রামে আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের দাগ লেগে রয়েছে। কারণ আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান আছে। আর সেই রক্তের অক্ষরে আছে বর্মণ, বানাই, হদি, চাকমা, মারামা, ত্রিপুরা, রাখাইন, সাঁওতাল, মাহাতো, বাগদী, রাই, সিং, মুনিপুরী, খাসিয়া, ম্রো, তংচঙ্গা, পাংখুয়া, চাক, খুমী, লুসাই, ডালু, মং, উড়াও ও কোলসহ ৫৪টির মতো আদিবাসী সম্প্রদায়কে বাঙালি নামে অভিহিত করে বাঙালি জাতিতে পরিণত করেছে। যার প্রমাণ হিসেবে আমরা দেখতে পাই সংবিধানের ৬ (২) অনুচ্ছেদে বলা আছে- ১। ‘বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনের দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হইবে। ২। বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশি বলিয়া পরিচিত হইবেন’। এখানে আদিবাসী জাতির জনগণ গণপ্রজাতন্ত্রের ‘জনগণ’। সুতরাং জনগণ বলতে যেহেতু আদিবাসী জাতিগুলোকে বোঝানো হয়, সেহেতু গারো, হাজং, চাকমা, মারমা এরাও জাতি হিসেবে বাঙালি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যদি কোনো গারো, কিংবা হাজংকে জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনারা কি বাঙালি? তখন উত্তর নিশ্চিত পাওয়া যাবে তারা বাঙালি নয়। কারণ তাদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাস ইত্যাদি। ফলে জাতি হিসেবে বাঙালি নয় আদিবাসী। আর এ জাতিকে স্বীকৃতি দিতে চলে নানা তালবাহানা। কেউ এ জাতির দুর্দশার কথা চিন্তা করে না। দুঃখজনক কথা যে আদিবাসীরা নানামুখী শোষণ ও বৈষম্যের শিকার হয়ে তাদের আত্মপরিচয় ও সংস্কৃতি হারাতে বসেছে।
তাই সময় এসেছে আর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নয়- তাদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। আদিবাসীদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, নিজ নিজ মাতৃভাষার শিক্ষক নিয়োগ এবং পর্যায়ক্রমে দেশের সব আদিবাসী ভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য জাতীয় বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিতে হবে। আদিবাসীদের নিজ নিজ সামাজিক অনুশাসন, প্রথা, কৃষ্টি, নিজস্ব ধর্মীয় বিশ্বাস ও মর্যাদা বৃদ্ধি এবং প্রতিপালনে ‘আদিবাসী কল্যাণ ট্রাস্ট’ গঠন করতে হবে। আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমিগুলোতে তাদের সংস্কৃতি উন্নয়নে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে এবং তাদের সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ও গবেষণার জন্য বিশেষ বরাদ্দসহ একাডেমির নিয়োগে আদিবাসীদের প্রাধান্য দিতে হবে। শিক্ষা-সংস্কৃতিতে আদিবাসীদের বৈষম্য দূর করতে হবে।

রাশেদুজ্জামান রাশেদ, সাংবাদিক ও লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়