৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে সংসদ অধিবেশন

আগের সংবাদ

চ্যালেঞ্জ অনেক, প্রত্যয়ী আ.লীগ : অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা > সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরা ও অপপ্রচারের জবাব দেয়া

পরের সংবাদ

ঐক্য পরিষদের সম্মেলনে মানিক : বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে আমরা অনেক দূরে সরে গেছি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেছেন, একটি অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র সৃষ্টির জন্য আমরা যুদ্ধ করেছিলাম। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ধর্মভিত্তিক দেশ হবে না, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি দেশে চলবে না। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আমরা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে আমরা অনেক দূরে চলে গেছি। গতকাল শুক্রবার হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। সকালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম মিলনায়তনে এ সম্মেলন হয়।
সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশ উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করে। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে এ দেশকে পাকিস্তান বানানোর কাজ শুরু করে। জিয়া গোলাম আযমকে পাকিস্তান থেকে এনে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। জিয়ার পর এরশাদ এসে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করল। আর তারপর জিয়ার স্ত্রী খালেদা এ দেশে ধর্মান্ধতা প্রতিষ্ঠা করে। বেগম খালেদা জিয়া বলল- আওয়ামী লীগ ভোটে জিতলে মসজিদে আজান হবে না, হবে উলুধ্বনি। এর থেকে বড় সা¤প্রদায়িক উক্তি আর নেই।
তিনি বলেন, ২৫ বছর ধরে এ দেশে ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতার চর্চা হয়েছে। জিয়া এরশাদ খালেদার কারণে পাকিস্তানপ্রেমী সাম্প্রদায়িকদের জন্ম হয়েছে। তাদের বিনাশ করতে হবে। ধর্মান্ধ, ধর্ম ব্যবসায়ীরা ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তাদের কথায় সম্প্রীতির কথা থাকে না, মানবিকতার কথা থাকে না। নারীদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে। তাদের কথায় থাকে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি-সহিংসতা। সরকার তাদের বিরুদ্ধে সঠিকভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক আরো বলেন, কদিন আগে চট্টগ্রামে কুখ্যাত রাজাকার সাকা চৌধুরীর ছেলে বলল- প্রধানমন্ত্রীকে নাকি ক্ষমা চাইতে হবে। হে সাকা পুত্র, তুমি পাকিস্তানে চলে যাও। এ দেশ তোমার না।
নওগাঁর জেলা জজ হাসান মাহমুদুল ইসলাম বলেছেন, মালাউনরা হারলে আমি খুশি হই। অবিশ্বাস্য! প্রশাসন, পুলিশ, নি¤œ আদালতে রাজাকার-আলবদরে ভরে গেছে। সরকার অনেককে সরিয়ে দিয়েছে। অন্যদেরও সরাতে হবে।
সাবেক এই বিচারপতি বলেন, সা¤প্রদায়িক সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। কাজী নজরুল ইসলাম, লালন, রবীন্দ্রনাথের দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো জায়গা থাকতে পারে না। রাষ্ট্রধর্ম সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম থাকতে পারে না। কদিন আগে আইনমন্ত্রী বলেছেন- রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধান থেকে সরানো হবে। আমরা সেদিকে তাকিয়ে। অপেক্ষায় রয়েছি ৭২ এর সংবিধান পুরোপুরি কায়েম কখন হবে। ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িকরা বেশ শক্তিশালী। রাতারাতি তাদের উৎখাত সম্ভব নয়। তবে প্রক্রিয়া চলছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা ধর্মান্ধ ধর্ম ব্যবসায়ীদের উৎখাত করবেন এটা বিশ্বাস করি।
সম্মেলন উদ্বোধন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিমচন্দ্র ভৌমিক। প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। এছাড়া অতিথি ছিলেন সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. জিনবোধি ভিক্ষু, সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামল কুমার পালিত, মুক্তিযোদ্ধা ইন্দু নন্দন দত্ত, দক্ষিণ জেলার সভাপতি তাপস হোড়।
সংগঠনের নগর শাখার সভাপতি প্রকৌশলী পরিমল কান্তি চৌধুরীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ, কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগবিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী শুভ্র দেব কর, দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট প্রদীপ কুমার চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য উত্তম কুমার শর্মা। সম্মেলনে পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্তকে ‘বাংলাদেশের নেলসন ম্যান্ডেলা’ উপাধিতে ভূষিত করেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
এ সময় কর্মী-সমর্থকদের ঘরে ঘরে রানা দাশগুপ্তের ছবি রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা-নিপীড়ন বন্ধের দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে সম্মেলনস্থলে আসেন নেতাকর্মীরা। জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে সম্মেলন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। পরে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন হয়।
সম্মেলন শেষে বিকেলে ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে সরকারি দলের প্রতিশ্রæতি- সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, বৈষম্য বিলোপ আইন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনসহ ৭ দফা দাবিতে রোড মার্চ (চলো চলো ঢাকা চলো) কর্মসূচি উদ্বোধন করা হয়। চট্টগ্রামসহ সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সমর্থক ও নেতাকর্মীরা। আজ শনিবার দুপুরে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমবেত হয়ে পদযাত্রা সহকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে স্মারকলিপি পেশ করার কথা রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়