ইউনেসকোর প্রতিবেদন : দেশে শিক্ষা ব্যয়ের ৭১ ভাগ বহন করে পরিবার

আগের সংবাদ

তীব্র শীতে জবুথবু জনজীবন

পরের সংবাদ

শীত বাড়ছে : আসুন শীতার্তদের পাশে দাঁড়াই

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ইতোমধ্যে শীত তার আপন বৈশিষ্ট্য নিয়ে আগমন করেছে। লেপ-কম্বল নিয়ে আমরা শীতকে বরণ করেছি বেশ কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই। এখনই শীতের প্রকট রূপ ধারণ করেছে। তবে কিছুদিন পরই শীতের তীব্রতা আরো লক্ষ করা যাবে তা বোঝা যাচ্ছে। সকাল বেলা কুয়াশার চাদরে প্রকৃতি ঢেকে গেছে। শীতকালীন রোগ এখন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগের আগমনও ঘটেছে শীতের সঙ্গে সঙ্গে। হাসপাতালে গেলে এখন বৃদ্ধ আর শিশুদের পাওয়া যায়। সব মিলে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তীব্র শীতে যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুরু হয় শীতের ছুটি তখন কর্মজীবী মানুষের কোনো ছুটি নেই। শিশুশ্রমিকরাও কাটাতে পারে না কোনো ছুটি। অন্যান্য শিশুর মতো শীতে পায় না মায়ের আদর বা বাবার স্নেহ-ভালোবাসা। ঋতুর সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের রুটিন পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু প্রতিদিন যাদের শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে হয় তাদের অপরিবর্তিত রুটিনমাফিক চলতে হয়। এসব শ্রমজীবীর রুটিন শীতকালেও পরিবর্তন হয় না। অন্য ঋতুর মতো শীতেও তাদের কর্মক্ষেত্রে যেতে হয় এবং অন্য সময়ের মতো কাজ করতে হয়। যাদের কঠোর পরিশ্রম ও কাজের জন্য আমাদের দেশের এতটা উন্নতি তারা কেমনভাবে দিন অতিবাহিত করছে তা হয়তো অনেকে ভেবেছেন। কিন্তু সরকারিভাবে যেমন ভাবা প্রয়োজন ছিল তা হচ্ছে না।
শীতের শুরু থেকেই একটা জিনিস খুব দেখা যায়। আর তা হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায় শীতবস্ত্র বিতরণ। দেখা যায় কোনো সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে একটা ব্যানার সাঁটিয়ে কয়েকজন অতিথি এসে শীতার্তদের মাঝে কম্বল, সোয়েটার কিংবা চাদর বিতরণ করছেন। সঙ্গে সঙ্গে সেটার ছবি তুলে পত্রিকায়ও আসে। এটা খুব ভালো উদ্যোগ। কিছুটা হলেও শীতার্ত মানুষ স্বস্তি লাভ করে এমন গরম কাপড় পেয়ে। কিন্তু আমাদের দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো নাচ-গান, কনসার্ট কিংবা অযথা আপ্যায়নের নামে যে টাকা ব্যয় করে তার তুলনায় শীতবস্ত্রের পরিমাণ একেবারেই নগণ্য। পার্টির নামে আজ যখন সরকারি-বেসরকারি অফিসে ব্যয় করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। ভ্রমণের নামেও কম না। তখন আমাদের দেশের শিশু ও বৃদ্ধরা বাসি-পানতা খেয়ে হাড় কাঁপানো শীতে ঠক ঠক করে কাঁপছে। অনেক শিশু শীতে স্কুল যেতে পারছে না। বৃদ্ধরা পারছে না বিছানা ছেড়ে উঠতে। নিজস্ব উদ্যোগ ছাড়াও পত্র-পত্রিকায় দেখা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন শীতবস্ত্র ক্রয়ের জন্য আর্থিক সহযোগিতা করছে। সরকারিভাবে অনেক সময় শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা কিংবা সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে এগুলো এসে থাকে। আবার কখনো সরকারদলীয় নেতাদের মাধ্যমে আসে। শীতে যে কাপড়গুলো শীতার্ত গরিব মানুষ পাবে বলে ধারণা করা হয় এক্ষেত্রে ঘটে তার উল্টো। যাদের কম্বল বিতরণ করতে দেয়া হয় তাদের মধ্যেই শুরু হয়ে যায় শীতবস্ত্র সংগ্রহ ও বিতরণের প্রতিযোগিতা। বাকি যা থাকে তাও আবার চলে যায় প্রভাবশালী নেতার আত্মীয়স্বজনের কাছে। আবার শীতবস্ত্র বিতরণে দলীয়করণও লক্ষ করা যায়। শীতবস্ত্র পাবে এমন যোগ্য ব্যক্তিকে ফাঁকা রেখে দলীয় মানুষকে একটির পরিবর্তে তিনটি পর্যন্ত কম্বল দেয় হয়।
যে কোনো বিপদ বা দুর্যোগ এলে আমাদের দায়িত্ব বেড়ে যায়। শীত এলেও এমন দায়িত্ববোধ নাড়া দেয়। এ সময় শীতার্তরা শুধু আমাদের দিকে চেয়ে থাকে। তাদের চেয়ে থাকা মুখে আমরা হাসি ফুটাতে পারি কেবল দুমুঠো খাবার ও শীতবস্ত্র সরবরাহের মধ্য দিয়ে। তাদের সান্ত¡না দিতে পারি একটু সুন্দর ব্যবহার করে।

শাহাদাত আনসারী : শিক্ষা গবেষক ও লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়