ইউনেসকোর প্রতিবেদন : দেশে শিক্ষা ব্যয়ের ৭১ ভাগ বহন করে পরিবার

আগের সংবাদ

তীব্র শীতে জবুথবু জনজীবন

পরের সংবাদ

ফিরে দেখা ২০২২ > ঢাকার নিম্ন আদালত : জঙ্গি ছিনতাই নাড়িয়ে দেয় পুরো দেশ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রকি আহমেদ : ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রধান ফটকের সামনে গত ২০ নভেম্বর পুলিশকে মারধর করে ফিল্মি স্টাইলে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা নাড়িয়ে দেয় পুরো দেশকে। জঙ্গিরা নিষিদ্ধ সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য ছিল। এমন ঘটনা আগে কখনো ঢাকার আদালতে ঘটেনি। এ ঘটনা আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। এছাড়া পুরো বছর জুড়ে নানা আলোচিত ঘটনার সাক্ষী হয়েছে ঢাকার নি¤œ আদালত। রাজনৈতিক ধরপাকড়, সাবেক সেনাপ্রধানকে কারাদণ্ডসহ নানা আমলা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সাজার রায়, হুমায়ুন আজাদ হত্যা, হোসেনি দালানে বোমা হামলার মতো অনেক আগের আলোচিত মামলার রায় ঘোষণার দিক দিয়েও সারাবছর আলোচনায় ছিল ঢাকার বিচারিক আদালত। সরকারদলীয় এমপি হাজী সেলিমের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো, সাবেক যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের জামিন দিয়ে আবার নামঞ্জুর, হত্যাচেষ্টা মামলায় সজীব ওয়াজেদ জয়ের আদালতে এসে আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেয়ার ঘটনাও ছিল আলোচনায়।
জঙ্গি ছিনতাই : এ বছর আলোচিত সব ঘটনার শীর্ষে রয়েছে জঙ্গি ছিনতাই। গত ২০ নভেম্বর জঙ্গি ছিনতাইয়ের প্রায় দেড় মাস পার হতে চললেও এখনো পলাতকদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। নানা তদন্ত কমিটি গঠন, আটক থাকা আসামিদের রিমান্ডে নেয়া ও পুরস্কার ঘোষণা করলেও পলাতক জঙ্গিরা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এর পর থেকে আদালত চত্বরে বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ আসামিদের আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে ডাণ্ডাবেড়ি পরানোর প্রচলন শুরু হয়েছে।
বিএনপি নেতাকর্মী ধরপাকড় : গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংগঠনটির নেতাকর্মী ধরপাকড়ের সাক্ষী হয় ঢাকার বিচারিক আদালত প্রাঙ্গণ। নাশকতার অভিযোগে পল্টন, রমনা, হাতিরঝিলসহ ঢাকার বিভিন্ন থানার মামলায় আটক শত শত নেতাকর্মীকে প্রিজন ভ্যানে করে আনা হয় আদালতে। এ সময় তাদের স্বজন ও আইনজীবীদের উপস্থিতিতে সরগরম ছিল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণ। আওয়ামী ও বিএনপিপন্থি শত শত আইনজীবীকেও মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে স্লোগানে দিতে দেখা যায়। এসব মামলায় এখনো

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ ৪ শতাধিক নেতাকর্মী শুধু পল্টন থানার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন।
এছাড়া ঢাকার সমাবেশকে ঘিরে বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার হিড়িক দেখা যায়। বিএনপি নেতা হাবিবুন নবী খান সোহেল, নিপুণ রায়, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাইফুল ইসলাম নিরব, তরুণ নেতা ইশরাক হোসেনসহ আরো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এছাড়া চলতি বছরের ৬ এপ্রিল ইশরাককে গ্রেপ্তার করার ৬ দিন পরে ছেড়ে দেয়া হয়।
জামায়াত ও ছাত্রঅধিকার নেতাদের গ্রেপ্তার : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেপ্তার করলে রিমান্ডসহ কারাগারে পাঠান আদালত। এছাড়া গত ৭ অক্টোবর বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধলে ছাত্রঅধিকারের ২৪ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। পরে আদালতে আনা হলে তাদের মুক্তির দাবিতে আদালতে এসে আমরণ অনশন কর্মসূচির ডাক দেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর। এরপর মাস খানেকের বেশি সময় কারাভোগের পর তারা জামিন পান।
জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে নিয়েধাজ্ঞা : জাতীয় পার্টির বহিষ্কৃত নেতা জিয়াউল হক মৃধার করা মামলায় হাজিরা না দেয়ায় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে দলীয় কাজে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন আদালত। এ আদেশটি সবার আলোচনায় বিষয় হয়ে ওঠে। এছাড়া জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে পার্টির সাবেক মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা আরেকটি মামলা দায়ের করেন ।
হাজি সেলিম কারাগারে : বছরের আলোচিত অন্যতম ঘটনা ছিল দুর্নীতির মামলায় ১০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে গত ২২ মে তাকে কারাগারে পাঠান আদালত। পরে অবশ্য তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান।
সাক্ষী দিতে আদালতে জয় : ২০১৫ সালে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের মামলায় গত ১৩ নভেম্বর আদালতে এসে সাক্ষী দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তার তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। এ সময় তিনি ভুক্তোভোগী হিসেবে আদালতে ন্যায়বিচার চান।
বছরের আলোচিত রায় : গত ১২ মে ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের ৪ হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা মানিলন্ডারিং আইনের এক মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার নি¤œ আদালত। এতে ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমিনকে ১২ বছর ও প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান এম হারুন-অর-রশীদসহ ৪৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং আসামিদের ২৩শ কোটি টাকা অর্থদণ্ড করেন আদালত। এতে আশার আলো দেখেন হাজার হাজার গ্রাহক। অন্যদিকে প্রথম কোনো সেনাপ্রধানকে সাজা দেয়া হয়।
করোনা ভাইরাসের ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে প্রতারণা মামলায় গত ১৯ জুলাই জেকেজি হেলথ কেয়ারের ডা. সাবরিনা চৌধুরী ও তার স্বামী আরিফুল হক চৌধুরীসহ ৮ জনকে পৃথক ৩টি ধারায় ১১ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত। এছাড়া ২৫ এপ্রিল মানিলন্ডারিং আইনের মামলায় বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক ভূঁইয়া ও রুপন ভূঁইয়াসহ ১১ জনের ৭ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর রাতে হোসেনি দালান এলাকায় তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে পুরান ঢাকার হোসনি দালানে বোমা হামলার মামলায় গত ১৫ মার্চ রায় ঘোষণা করেন আদালত। রায়ে ৮ আসামির মধ্যে ২ জনের সাজা ও অপর ৬ আসামিকে খালাস দেন আদালত। এ সময় নির্দোষ ব্যক্তিদের চার্জশিটভুক্ত করে আসামি করায় সমালোচনা দেখা যায়।
বছরের শুরুতে ৯ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের বরখাস্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজনস) পার্থ গোপাল বণিককে ৮ বছর কারাদণ্ড দেন আদালত। এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারি ঘুষ লেনদেনের মামলায় বরখাস্ত হওয়া পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে তিন বছর এবং দুদকের বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে ৮ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। এছাড়া ২৩ অক্টোবর অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় কারা অধিদপ্তরের সাময়িক বরখাস্তকৃত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজনস) বজলুর রশীদকে ৫ বছর কারাদণ্ড দেন আদালত।
ঋণ জালিয়াতির করে সাড়ে ২৭ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলায় ২৫ মে সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হুমায়ুন কবিরসহ বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের ব্যাংক কর্মকর্তা মিলিয়ে ৯ জনকে পৃথক দুই ধারায় ১৭ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়। ২৪ জুলাই ও ১১ ডিসেম্বর দুদকের পৃথক দুই মামলায় ওই ৯ আসামিকে ১৭ বছর করে মোট ৩৪ বছর কারাদণ্ড দেন আদালত। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও লেখক হুমায়ুন আজাদ হত্যার ১৮ বছর পর গত ১৩ এপ্রিল ৪ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। আসামিরা সবাই জেএমবির সদস্য।
আলোচিত ঘটনা : ২৪ মার্চ দুর্বৃত্তদের এলোপাতাড়ি গুলিতে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু এবং কলেজছাত্রী প্রীতি হত্যা মামলার একাধিক আসামিকে রিমান্ডে নেয়া, দুই বুয়েট শিক্ষার্থী তারিকুজ্জামান সানি ও আলোচিত ফারদিন নূর পরশের হত্যা মামলা, গত ২৯ মে কেন্দ্রীয় নেত্রী তিলোত্তমাসহ ইডেন ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের অন্য গ্রুপের মামলা, ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমেদকে গ্রেপ্তার করে আদালতে আনা, ১৭ এপ্রিল রাতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মীদের সংঘর্ষে দুজনের মৃত্যুর মামলা, বনজ কুমারের মামলায় ১২ নভেম্বর বাবুল আক্তার কারাগারে যাওয়ার সময় সন্তানদের নিয়ে কান্না, ক্রিকেটার আল আমিনের বিরুদ্ধে গত ৭ সেপ্টেম্বর স্ত্রীর মামলা, ২ নভেম্বর দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক কাজী এরতেজাকে কারাগারে পাঠানোর মতো ঘটনা এ বছর আলোচিত ছিল।
বিচারের মুখোমুখি আলোচিতরা : এ বছর আনুষ্ঠানিক বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন অনেক আলোচিত ব্যক্তি। এর মধ্যে গত ১২ জুন দুদকের মামলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ করিমসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। গত ৬ এপ্রিল সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করায় সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। এছাড়া বছরের শুরুতে ৫ জানুয়ারি মাদক মামলায় অভিনেত্রী পরীমনির বিচার শুরু ও ইভ্যালির অনেক মামলার বিচার এবছর শুরু হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়