ইউনেসকোর প্রতিবেদন : দেশে শিক্ষা ব্যয়ের ৭১ ভাগ বহন করে পরিবার

আগের সংবাদ

তীব্র শীতে জবুথবু জনজীবন

পরের সংবাদ

পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি : আদালতের বিচার কার্যক্রম ব্যাহত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : আইনজীবী ও বিচার বিভাগীয় কর্মচারীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালত ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিজিএম আদালত এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল ৯টা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিচার বিভাগীয় কর্মচারী এসোসিয়েশনের উদ্যোগে আদালতে কর্মবিরতি ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করায় আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ১-এর বিচারককে (জেলা জজ) অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, বিচারককে প্রাণনাশের হুমকি, বিচারকাজে নগ্ন হস্তক্ষেপ, আদালতের কর্মচারীদের মারধর, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়া, দুর্ব্যবহারসহ কতিপয় আইনজীবীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা বিচার বিভাগীয় কর্মচারী এসোসিয়েশন বুধবার থেকে আদালতের বিভিন্ন প্রবেশ দ্বারে তালা ঝুলিয়ে জেলা জজ কোর্ট প্রাঙ্গণে মানববন্ধন ও কর্মবিরতি পালন করে। এতে প্রচণ্ড শীতে জেলার দূর-দূরান্ত থেকে আসা শত শত বিচারপ্রার্থী চরম বিড়ম্বনার শিকার হন।
জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ১-এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ ফারুকের বিরুদ্ধে আইনজীবীদের নিয়ে আপত্তিজনক মন্তব্যের প্রতিবাদে গত ১ জানুয়ারি থেকে ওই আদালত বর্জন করে আসছিলেন আইনজীবীরা। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে গত মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট বিচারকরা নিজেদের মধ্যে সভা করেন। ওই দিন নির্ধারিত সময়ের বেশ পরে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। এদিকে বুধবার সকালে বিচার বিভাগীয় কর্মচারী এসোসিয়েশন পূর্ব ঘোষণা না দিয়ে ওপরে উল্লেখিত বিভিন্ন অভিযোগের প্রতিবাদে আদালত প্রাঙ্গণে মানববন্ধন ও কর্মবিরতি শুরু করলে বিচারাঙ্গণে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। বিড়ম্বনার শিকার হন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সাধারণ বিচারপ্রার্থীরা।
এদিকে সদর উপজেলার বিশ্বরোডের বিচারপ্রার্থী আবুল কাশেম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, তীব্র শীতের মধ্যে সকালে কোর্টে এসে দেখি গেটে তালা ঝুলছে। আজ (বুধবার) আমার মামলার তারিখ ছিল, বুঝতে পারছি না কী হবে। সরাইল উপজেলার জজ মিয়া মেম্বার বলেন, আমাদের আগে জানিয়ে দিলে আমরা (আজ) এই শীতে কোর্টে আসতাম না। আমরা টাকা-পয়সা খরচ করে আসলাম এবং উকিল ও মহুরিকে টাকা-পয়সা দিলাম, কিন্তু কোনো কাজই হয়নি। কসবা উপজেলার ধরখার গ্রামের আবদুল হালিম ইউনুছ ক্ষোভের সঙ্গে জানান, কোনো উকিল মারা গেলে কার্যক্রম বন্ধ থাকে, কিন্তু কোর্ট খোলা থাকে। আজ এসে দেখি কোর্টের গেটে তালা।
এদিকে মানববন্ধন চলাকালে কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি কাজী উজ্জল ইসলাম বলেন, বিচার কাজে নগ্ন হস্তক্ষেপ, এজলাশে প্রবেশ করে নথি ছিনিয়ে নেয়া, কর্মচারীদের মারধর করার প্রতিবাদে কতিপয় আইনজীবীর বিরুদ্ধে আমরা আজ (বুধবার) এ মানববন্ধন ও কর্মবিরতির কর্মসূচি পালন করছি। তিনি এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মেহেদি হাসান, মো. নিশাত খান, মো. আবদুল ওয়াহাব, জেরিন আফরিন, মুহাম্মদ শরীফ উদ্দিন, জসীম উদ্দিন প্রমুখ।
এদিকে সকালে শত শত আইনজীবী আদালত প্রাঙ্গণে এসে বিচার বিভাগীয় কর্মচারীদের মানববন্ধন ও কর্মবিরতি পালন দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন। এ সময় শত শত আইনজীবী জেলা বার এসোসিয়েশন ভবনের সামনে জড়ো হয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে থাকেন। এক পর্যায়ে আইনজীবীরা আদালত প্রাঙ্গণে জেলা জজ নিগার সুলতানার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আইনজীবী তানভীর ভূঁইয়া বিচার বিভাগীয় কর্মচারী ইউনিয়নের আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আশা করি জেলা জজ মহোদয়ের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। আমরা আইনমন্ত্রী ও আইন সচিবের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এখনো কোনো কর্মসূচি দেইনি। পরিস্থিতি ঘোলাটে করা হলে জেলা জজের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আদালত বর্জন করতে বাধ্য হব।
এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিচার বিভাগীয় কর্মচারীদের অন্যায় মানববন্ধন ও কর্মবিরতির ফলে বিচারপ্রার্থীদের সীমাহীন দুর্ভোগের প্রতিবাদে এবং আইনজীবীদের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বুধবার দুপুরে আইনজীবী সহকারী সমিতির এক জরুরি সভা সমিতি ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। আইনজীবী সহকারী সমিতির সভাপতি রিয়াজুল করিম খান খায়েসের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছেনু ভূঁইয়া, সদস্য মামুনুর রশীদ, উত্তম ঘোষ, বাবুল মিয়া প্রমুখ। সভায় জজ কোর্ট কর্মচারী মোমিনসহ দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের শাস্তি দাবি করে আইনজীবীদের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন সহকারীরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়