ইউনেসকোর প্রতিবেদন : দেশে শিক্ষা ব্যয়ের ৭১ ভাগ বহন করে পরিবার

আগের সংবাদ

তীব্র শীতে জবুথবু জনজীবন

পরের সংবাদ

উদযাপন না হোক কারো কষ্টের কারণ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পরিবর্তনশীলতাই প্রকৃতির নিয়ম। প্রকৃতির নিয়মে বছর আসে, বছর শেষ হয়। মানুষ তার পুরনো দিনের সব গøানি, ব্যর্থতা, অপ্রাপ্তি ও জরাজীর্ণতার গল্প ভুলে গিয়ে নতুন বছরকে গ্রহণ করে উচ্ছ¡াস আর উদ্যমে। তবে আনন্দকে স্বাধীনভাবে উপভোগ করা যেমন মানুষের অধিকার, তেমনি একই আনন্দকে উপেক্ষা করে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকাও পাখপাখালী-গাছপালার সমান অধিকার। প্রতিবারই নতুন বছরকে আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন-উদযাপনের মধ্য দিয়ে বরণ করা হয়। একদিকে রাতের আকাশে উড়তে থাকা হাজার হাজার ফানুস, অন্যদিকে তীব্র আলোর ঝলকানিতে চলে আতশবাজির অসুস্থ প্রতিযোগিতা। ক্ষণিকের আলোয় আলোকিত পৃথিবী দেখতে যতটা সুন্দর, এর পেছনের প্রভাব ততটাই ভয়ংকর।
থার্টিফার্স্ট নাইটকে চোখ ধাঁধানো আলোয় উদযাপন করতে গিয়ে সজ্ঞানে প্রকৃতির যে কী পরিমাণ ক্ষতি আমরা করি তা হয়তো বোঝার চেষ্টাও করি না। রসায়নবিদ ও পাইরো টেকনিস্ট গুনটার গেøইন সমারের দেয়া তথ্য অনুসারে, একটি আতশবাজিতে ৭৫ শতাংশ পটাশিয়াম নাইট্রেট, ১৫ শতাংশ চারকোল এবং ১০ শতাংশ পর্যন্ত সালফার থাকতে পারে, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। পাখি, গাছপালা, বায়ু প্রকৃতির নিরবচ্ছিন্ন অংশ। এই পৃথিবীতে মানুষের পরেই প্রাণী জগতের স্থান। প্রতিটি প্রাণী এক একটি জীবনচক্রে বসবাস করে এবং এর ব্যতিক্রম হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে প্রকৃতি, পরিবেশ ও মানব সভ্যতায়। থার্টিফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে চারদিকে আতশবাজি ও আগুনের ঝলকানিতে উন্মাদ থাকে মানুষ। বুঝে না বুঝে উন্মাদনার স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়া আজকাল আমাদের স্বভাবে পরিণত হয়েছে। আতশবাজির বিকট শব্দ এবং উড়ন্ত ফানুসের কারণে অসংখ্য পাখি ছুটে বেড়ায় দিক-বেদিক।
বিকট শব্দে আতঙ্কিত হয়ে এলোপাতাড়ি উড়তে গিয়ে কখনো দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা লেগে, বৈদ্যুতিক খুঁটিতে আঘাত পেয়ে আবার কখনো হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয় মারা যায় পাখিরা। ডানার আঁচলে সন্তানদের লুকিয়ে রাখা ঘুমন্ত মা, খাদ্যের অন্বেষণে ঘুরে বেড়ানো ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত পিতা, নতুন পাতা গজানো গাছের ডালে বসে থাকা যুগলদ্বয়ের আগুনে পুড়ে যাওয়া জ্বলন্ত দেহের আর্তনাদ কি পৌঁছায় আনন্দ-উল্লাসে মত্ত থাকা সভ্য সমাজে? হয়তোবা পৌঁছায়। কিন্তু আধুনিকতার ভারী খোলস পরিহিত মনুষ্যকুলের কাছে এ আর্তনাদ অন্তঃসারশূন্য। অর্থে কেনা উল্লাসের পরিণামে পাখিরা কীভাবে তাদের নীড় ছেড়ে পালাচ্ছে এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওর দৃশ্যটি খুবই করুণ এবং মর্মান্তিক। অথচ মানুষ ও পাখি একই প্রকৃতির সন্তান। শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে মানুষ নিজেদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে, সংগ্রামের বুলি আওড়ালেও প্রকৃতির অন্য প্রাণীদের অধিকার হরণের প্রশ্নে থাকে নীরব দর্শক। ধরা যাক, পশু-পাখিরা আনন্দ উৎসবে ব্যস্ত, মানুষ তার সাজানো আবাসস্থল ফেলে যে যার মতো দৌড়ে বেড়াচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। ভাবতে পারি কি এ দৃশ্য? আমরা হয়তো কল্পনাও করতে পারি না। কিন্তু কতটা নির্দয়, নির্মম ও অবলীলায় অন্যের ক্ষতি করে যাচ্ছি। আপনজনহীন, বাসস্থানহীন মানুষের অনুভূতি যতটা যন্ত্রণার, অন্য প্রাণীর বেলায় কি তা একই রকম নয়? নাকি তারা অনুভূতিহীন বস্তু? এসব প্রশ্নে আমরা অন্ধ-বধির। মানুষের অধিকার রক্ষায় যেমন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে তেমনি পশু-পাখি রক্ষার জন্য ১৯৭৪ সালে বন্যপ্রাণী রক্ষা আইন ও ২০১২ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ-নিরাপত্তা নামে দুটি আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। যদিও বাস্তবে এগুলো যথাযথ কোনো প্রয়োগ নেই। যাই হোক, নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে গিয়ে মানুষ একই সঙ্গে প্রকৃতি ও মানুষের জন্য ভয়াবহ রকমের বিপদ ডেকে আনছে। শুধু তাই নয়, আতশবাজির শব্দ, স্বাভাবিক শব্দের চেয়ে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায় যা অল্প বয়সি শিশু ও বয়স্ক মানুষজনকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দেয়। প্রতিবারই থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনে আতশবাজি, পটকা ফোটানো বা ফানুস ওড়ানো নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নানা ধরনের বিধিনিষেধ দেয়া হয়, কিন্তু তা কেবল নির্দেশনা এবং কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে। মানুষ বিধিনিষেধকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজের মতো করেই উদযাপন করতে থাকে। কে বাঁচল কে মরে গেলে তা নিয়ে বিন্দুমাত্র ভ্রæক্ষেপ নেই। প্রকৃতির বিরুদ্ধে অবস্থান করলে প্রকৃতি কতটা ভয়ংকর রূপ নিতে পারে করোনা মহামারি তারই উৎকৃষ্ট উদাহরণ। ভুলে গেলে চলবে না আলো, বাতাস ও পানিতে পরিপূর্ণ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে সুন্দরভাবে বসবাস করার অধিকার মানুষের যতটা, পশু-পাখি গাছপালারও ঠিক ততটাই। প্রকৃতিকে বিনষ্ট ও ধ্বংস করার অধিকার কারো নেই। প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক উপাদানগুলোকে যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য আইনের পাশাপাশি প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা। সবাই মিলে আবাসভূমিকে বসবাসযোগ্য করব, এই হোক নতুন বছরের অঙ্গীকার।

সোনিয়া আক্তার : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়