উকিল আবদুস সাত্তারকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি

আগের সংবাদ

মন্দা মোকাবিলায় দুই চ্যালেঞ্জ : ডলারের দাম যৌক্তিক জায়গায় রাখা > মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৫ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনা

পরের সংবাদ

উন্মুক্ত হলো নবরূপে সাজানো ঐতিহাসিক লালদীঘি মাঠ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : বাঙালি জাতির রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ চট্টগ্রাম নগরীর ঐতিহাসিক লালদীঘি মাঠ। স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বাংলাদেশের যে কোনো আন্দোলন সংগ্রামের সূচনা হয়েছে এই লালদীঘি মাঠ থেকে। দেশের আন্দোলন-সংগ্রামের অন্যতম সূতিকাগার চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘির ময়দান দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ছিল। সম্প্রতি এই লালদীঘি ময়দানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ছয়দফাসহ বাঙালি জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মৃতি স্মারক। টেরাকোটার কারুকাজে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। ধূসর বালি ময়দানকে মোড়ানো হয়েছে সবুজে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রায় চার কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়ার পর ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনও করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অবশেষে নতুন বছরের শুরুতেই গতকাল সোমবার দুপুরে উন্মুক্ত করা হয়েছে ঐতিহাসিক লালদীঘির ময়দানটি।
লালদীঘির ময়দানটি উন্মুক্ত করে দেন প্রকল্পটির উদ্যোক্তা স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। লালদীঘির ময়দানের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ মুসলিম হাই স্কুল কর্তৃপক্ষের অধীনে থাকার পাশাপাশি এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চসিকের সহযোগিতা চান তিনি। একইসঙ্গে বিকাল থেকে যে কোনো অনুষ্ঠান করতে মাঠের অনুমতির জন্য জেলা প্রশাসন গঠিত কমিটি থেকে অনুমোদন নেয়ার কথাও জানান শিক্ষা উপমন্ত্রী। তিনি বলেন, স্কুল চলাকালীন সময়ে মুসলিম হাই স্কুলের শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করবেন। তবে স্কুল ছুটির পর এলাকাবাসী বিকালে হাঁটতে পারবেন। এছাড়া রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন থাকবে। ময়াদানটির রক্ষণাবেক্ষণ মুসলিম হাই স্কুল করলেও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কমিটি থাকবে। কেউ এ মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে চাইলে এ কমিটির অনুমতি নেবেন। নির্দিষ্ট ফি দিয়ে জেলা প্রশাসন গঠিত কমিটি থেকে অনুমোদন নিয়ে মাঠটি ব্যবহার করা যাবে। তবে মাঠে কোনোভাবেই মাইক্রোস্ট্যান্ড আর কোনো ধরনের মেলা বসতে দেয়া হবে না। এ সময় জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, স্থানীয় কাউন্সিলর, স্কুল কর্তৃপক্ষ উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রায় চার কোটি টাকার প্রকল্পটি ২০২০ সালে কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ২০২১ সালে ১০ মার্চ। গত ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের ২৯টি প্রকল্প উদ্বোধনের সময় পলোগ্রাউন্ড মাঠ থেকে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে এই লালদীঘির ময়দানের সংস্কার কাজও উদ্বোধন করেছিলেন। লালদীঘি ময়দান নামে পরিচিত হলেও সরকারিভাবে এই মাঠটির মালিকানা চট্টগ্রাম সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের। সংস্কারের কাজ শুরু হওয়ার আগে এই বিদ্যালয়, লালদীঘি এবং আশপাশের এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করত এই মাঠেই। প্রকল্পের আওতায় রাতে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাঠে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে দুটি ২০ ফুট প্রস্থের গেট ও একটি ভিআইপি গেট। ১ হাজার ২৫০ বর্গফুট দেওয়ালে তুলে ধরা হয়েছে ১৮টি টেরাকোটার ম্যুরালে মহান মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, গণঅভ্যুত্থান, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বাঙালির গৌরবের ইতিহাস।
চট্টগ্রামের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৭৬১ সালে যখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চট্টগ্রামের শাসনভার গ্রহণ করে, তখন থেকেই লালদীঘিকে কেন্দ্র করে এই শহরের যত কর্মচাঞ্চল্য বিস্তার লাভ করে। লালদীঘি পাড়ের চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের দপ্তরটি ব্রিটিশ আমলের। তখন এটি তহশীল দপ্তর ছিল। লাল রঙের সেই ভবনকে চট্টগ্রামের মানুষ ‘লালকুঠি’ নামে চিনত। এই ভবনের পাশে ছিল ‘লালঘর’ নামে একটি কারাগার ভবন। এ দুটি ভবনের পাশে ছিল একটি পুকুর। ব্রিটিশ শাসকরা সেই পুকুরের পরিধি বড় করে সেটাকে দীঘিতে পরিণত করেন। পাহাড়ি টিলার ওপর ‘লালকুঠি’ এবং ‘লালঘর’। আর পাশের দীঘিটির নাম তাই স্বাভাবিকভাবে হয়ে গেল লালদীঘি। তার পাশের মাঠটিকেও ‘লালদীঘি ময়দান’ নামে চিনতে শুরু করল সবাই। এই ময়দানে জড়িয়ে রয়েছে ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬২ এর ছাত্র আন্দোলন, ঐতিহাসিক ছয় দফার ঘোষণা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস। এই লালদীঘি ময়দানেই ১৯৬৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইশতেহার ঐতিহাসিক ‘ছয় দফা’। এছাড়া ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ভাষার দাবিতে মিছিলে গুলির প্রতিবাদে বিকেলে চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এই মাঠে ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ও ২৫ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারির সভায় প্রথম আবৃত্তি করা হয় মাহবুব উল আলম চৌধুরী রচিত একুশের প্রথম কবিতা- ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়