বিএনপি নেতা খন্দকার মাহবুব হোসেন আর নেই

আগের সংবাদ

দেশজুড়ে জেঁকে বসেছে শীত : উত্তররাঞ্চলের কয়েক জেলায় বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ > জনজীবন বিপর্যস্ত > বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগবালাই

পরের সংবাদ

শওকত ওসমান : জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

১৯১৭ সালের ২ জানুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার সবল সিংহপুর গ্রামে শওকত ওসমানের জন্ম। বাবার দেয়া নাম শেখ আজিজুর রহমানের পরিবর্তে সাহিত্যিক শওকত ওসমান নামে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে। ১৯৪৭-এ ভারতবর্ষ বিভক্তির পর তিনি পশ্চিম বাংলা ছেড়ে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান তথা পূর্ব বাংলায় চলে আসেন। এখানে এসে হয়ে ওঠেন বাংলা সাহিত্যের এক প্রবাদপ্রতিম কথা সাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক, কবি, গল্পকার, রম্য ও শিশু সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক এবং অনুবাদক। কথাসাহিত্যের অন্যতম প্রাণপুরুষ শওকত ওসমানের লেখায় সমাজ সচেতনতা, শিল্প ভাবনা জীবন চিত্র অঙ্কনে বৈচিত্র্যমণ্ডিত ছিল। তিনি মুক্তচিন্তা ও অসাম্প্রদায়িকতার ধারক, সমাজতান্ত্রিক ধারার লেখকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তার রচিত ষাট দশকের ক্রীতদাসের হাসি, জননী, চৌরসন্ধি, সমাগম ইত্যাদি উপন্যাস পাঠক মহলে সমাদৃত হয়।
বায়ান্নর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, বাষট্টির গণবিরোধী শিক্ষানীতি বিরোধী আন্দোলন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্টের প্রতি সমর্থন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সচেতনতা সৃষ্টিতে তিনি অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নভেম্বর মাসে তার প্রথম উপন্যাস ‘জাহান্নাম হইতে বিদায়’ প্রকাশিত হয়। এর প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল বাঙালির ওপর পাকিস্তান সামরিক জান্তার অবর্ণনীয় নির্যাতন উপস্থাপনা। পাকি পাশবিকতাকে তিনি জাহান্নামের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র লেখক স্বয়ং শরণার্থী হয়ে পরভূমে আশ্রিত হয়ে বন্ধুদের উৎসাহেই চরম প্রতিকূলতার মধ্যে পাকিস্তানি নৃশংসতা উপস্থাপনা করেছেন। যেহেতু মাত্র একটি উপন্যাসে এহেন পৈশাচিকতা উপস্থাপন সম্ভব নয়, তাই তিনি একাধিক উপন্যাস রচনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
‘জাহান্নাম হইতে বিদায়’ উপন্যাসের নামকরণ ছিল যথার্থ ও তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ তখন পাকিস্তানি জল্লাদ ও তাদের পোষ্য রাজাকার-আলবদর, আলশামসদের নির্মমতায় আমাদের মাতৃভূমি জাহান্নামে পরিণত হয়েছিল। জাহান্নাম থেকে মুক্তির আকুতি এ উপন্যাসের মূল উপজীব্য। এ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মাস্টার সাহেব গাজী রহমান একজন সমাজ সচেতন মুক্ত চিন্তার বাঙালি, যিনি দেশ ও জনগণের দুঃখ-দুর্দশা, আশা-আকাক্সক্ষা সম্পর্কে অবগত, দেশের আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক অনাচার সম্পর্কেও সচেতন। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের বাস্তব বেদনাদায়ক চিত্র ‘জাহান্নাম হইতে বিদায়’ গ্রন্থে স্বচ্ছ হয়ে উঠেছে।
শওকত ওসমানের সত্তরের দশকের অন্যতম গ্রন্থ ‘দুই সৈনিক’। এই উপন্যাসের মধ্যমে শওকত ওসমান পাকি সেনাদের নিষ্ঠুরতার পাশাপাশি আমাদের সামাজিক সরলতা তুলে ধরেছেন। ১৯৭৪-এ প্রকাশিত হয় শওকত ওসমানের ‘নেকড়ে অরণ্য’ যাতে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে। চালের গুদামে বন্দি শিবিরে পাকি হানাদার বাহিনী কর্তৃক উলঙ্গ করে রাখা বিপুলসংখ্যক নারীর ওপর অসহনীয় নির্যাতনের কথা এতে প্রকাশিত হয়েছে। নির্যাতন সইতে না পেরে অনেক তেজস্বী নারী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন, আত্মসম্মান রক্ষার্থে। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় পাঁচ বছর শওকত ওসমান স্বেচ্ছা নির্বাসনে ছিলেন। ১৯৯৮-এ সেলিব্রাল এটাকে আক্রান্ত হয়ে ইহলোক ত্যাগ করেন। তিনি অসাম্প্রদায়িক, কুসংস্কার বিদ্বেষী, স্বৈরাচারবিরোধী, গণতান্ত্রিক চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে সদা সোচ্চার ছিলেন। তিনি আধুনিক বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র। বাঙালি সংস্কৃতির ভবিষ্যৎ যাত্রার উপাদেয় সব কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে অন্তরের অন্তস্থলে ধারণ করে তিনি জাতিকে দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। মহান এই কথাশিল্পী এভাবেই হয়ে উঠেছিলেন বাংলা সাহিত্যের পথিকৃৎ এবং সমকালীন সমাজ প্রগতির পুরোধা ব্যক্তিত্ব। শওকত ওসমানের জন্মবার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধা।

হাসান-উজ-জামান
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়