বিএনপি নেতা খন্দকার মাহবুব হোসেন আর নেই

আগের সংবাদ

দেশজুড়ে জেঁকে বসেছে শীত : উত্তররাঞ্চলের কয়েক জেলায় বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ > জনজীবন বিপর্যস্ত > বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগবালাই

পরের সংবাদ

মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা উদ্বোধন : বাজার সম্প্রসারণ-ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : স্থানীয় পর্যায়ের শিল্পকে আরো কার্যকর করতে দেশীয় বাজার স¤প্রসারণের পাশাপাশি জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমরা রপ্তানি যেমন করব, তেমনই নিজের দেশে বাজার সৃষ্টি হয় এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর দিকে নজর দেব। তাহলেই আমাদের ইন্ডাস্ট্রিগুলো আরো কার্যকর হওয়ার পাশাপাশি উৎপাদন বাড়াতে পারবে।
রাজধানীর পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে গতকাল রবিবার সকালে মাসব্যাপী ২৭তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা (ডিআইটিএফ-২০২৩) উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক), সিনিয়র বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ ও এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। পরে দেশের রপ্তানি কার্যক্রমের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে জাতির পিতাকে নিয়ে একটি স্মারক গ্রন্থ ‘আমি তোমাদেরই লোক’ প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। প্রধানমন্ত্রী পরে মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। এবারের মেলায় স্থানীয় সংস্থাগুলোর পাশাপাশি সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, কোরিয়া ও ভারতসহ ১০টি দেশের প্রায় ১৭টি সংস্থা অংশ নিচ্ছে।
আজকের কূটনীতি রাজনৈতিক কূটনীতি নয়, এটি হবে অর্থনৈতিক কূটনীতি- এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশে আমাদের সব দূতাবাসকে নির্দেশ দিয়েছি, এখনকার ডিপ্লোমেসি পলিটিক্যাল ডিপ্লোমেসি না, ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি হবে। অর্থাৎ প্রত্যেকটি দূতাবাস ব্যবসা-বাণিজ্য, রপ্তানি,

কোনো দেশে কোনো পণ্যের চাহিদা বেশি, কী আমরা রপ্তানি করতে পারি বা কোথা থেকে বিনিয়োগ আনতে পারি, সেদিকে দৃষ্টি দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। বিভিন্ন দেশে যখন যাই, তখন সেখানকার রাষ্ট্রদূতদের ডেকে এই বিষয়ে ব্রিফ করি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরও একটি উদ্যোগ রয়েছে, যেখানে যে পণ্যের চাহিদা বেশি সেই পণ্যটা আমাদের দেশে আমরা উৎপাদন করে রপ্তানি করবো। এভাবেই আমরা বাণিজ্য বাড়াবো।
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা উন্নীত হওয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা কার্যকর করতে আমরা বিভিন্ন কমিটি করে কোন খাতে কী করণীয়, সেগুলো সুনির্দিষ্ট করে এগিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা দুই বছর সময় নিয়েছি এই কোভিডের কারণে, ২০২৬ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশ কার্যকর করব, যেটা ২০২৪ এ করার কথা ছিল। এরপরই এলো যুদ্ধ, সেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংশন এবং পাল্টা স্যাংশন। যার ফলে আজকে সমস্ত বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। উন্নত দেশগুলো হিমসিম খাচ্ছে। নিজেদের মন্দার দেশ হিসেবে ঘোষণা করছে। আমরা কিন্তু এখনো সেই পর্যায়ে যাই নাই। আমরা আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি।
রপ্তানি বাড়াতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন নতুন বাজার খোঁজার পাশাপাশি দেশে উৎপাদন বৃদ্ধি ও পণ্য বহুমুখীকরণ, খাদ্য প্রকিয়াজাতকরণ শিল্পের দিকে মনোযোগী হতে ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের রপ্তানিযোগ্য পণ্য খুব সীমিত। কিছু পণ্যের ওপর আমরা খুব বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। এটা বহুমুখী করার কথা। আমি বারবার এ কথা বলে যাচ্ছি। বহুমুখী করা এবং আমরা যত বেশি বাজার পাব, তত বেশি পণ্য রপ্তানি করতে পারব। আর আমাদের দেশের মানুষের কর্মক্ষমতা যাতে বাড়ে সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।
অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর বাইরে কলকারখানা না করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যারা ইন্ডাস্ট্রি করবেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলে করতে হবে। তার বাইরে করলে কোনো ধরনের সেবা পাবেন না। আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি। এর মধ্যে অনেকগুলোর কাজ আমরা শুরু করেছি। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে আমরা ৫জি চালু করব। এটা সব জায়গায় দরকার নেই, এটা অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য বা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য প্রযোজ্য। সেভাবে আমরা পরিকল্পনা নিচ্ছি।
সেবা খাত বিশেষ করে আইটি ও আইটি এনাবল সার্ভিসের ওপর গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত অর্থবছরে এই খাতে রপ্তানি আয় ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ আর গ্যাস যদি একেবারে নিরবচ্ছিন্ন চান, তবে এগুলো ক্রয় করতে বা উৎপাদন করতে যে খরচ হবে, সেই খরচের দাম দিতে হবে। কত আর ভর্তুকি দেয়া যাবে? কারণ, ভর্তুকি তো জনগণের পয়সা, এত বেশি দেয়া যায় না। কাজেই ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের এ বিষয়ে অন্তত একটু নজর দিতে হবে। পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে যাওয়ায় এখন লোডশেডিং কমে গেছে।
পাট ও পাটজাত পণ্যকে ২০২৩ সালের ‘বর্ষপণ্য’ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক ঘাত-প্রতিঘাত অতিক্রম করে পঁচাত্তরের বিয়োগান্তক অধ্যায়ের দীর্ঘ ২১ বছর পরে ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ আবার সরকারে আসার সুযোগ পায়। আমাদের দলের যে অর্থনৈতিক নীতিমালা, সেখানে বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসি, যার মাধ্যমে বেসরকারি খাতে উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য এই খাতকে উন্মুক্ত করে দেয়। আজকে আপনারা যা যা দেখেন এত টেলিভিশন, বিমান, হেলিকপ্টার সার্ভিস, ইন্ডাস্ট্রি, ব্যাংক,বিমা, সবার হাতে মোবাইল ফোন, এতকিছু সম্ভব হয়েছে আমাদের সেই বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দেয়ার নীতিমালা নিয়ে এগিয়ে যাবার কারণে। এমনকি বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনেরও উদ্যোগ নিই। পাশাপাশি রপ্তানি পণ্য বাড়ানোরও উদ্যোগ নেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দুর্নীতি করতে আসিনি, দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি। বাবা-মা-পরিবার হারিয়ে এ দেশে দুর্নীতি করতে ফিরে আসিনি। সব হারিয়ে দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে এসেছি। ২১ বছর পর ক্ষমতায় এলে আমাদের সরকারের একটি নীতিমালা ছিল ব্যবসাবান্ধব নীতি নেয়া, সেটাই করেছি। ২০০৮ সালে আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারের ঘোষণা ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার। আজকে দেশ ডিজিটাল হয়েছে। ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও ২০২১ সালে জাতি যে সময় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছিল, সে সময়ই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, টানা তিন মেয়াদে প্রবৃদ্ধি ৮ এ তুলে আনতে সক্ষম হলেও কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার ফলে আমাদের প্রবৃদ্ধিও কিছুটা কম হয়, তবে ধারাবাহিকভাবে ৬ ভাগের ওপরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। এমনকি ৭ ভাগ পর্যন্তও তুলতে পেরেছি। মাথাপিছু আয় বাড়িয়ে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। দারিদ্র্যের হার ৪০ ভাগ থেকে ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। পাশাপাশি জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে বিনামূল্যে ঘর করে দিচ্ছি। তাদের জীবন-জীবিকারও ব্যবস্থা নেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়