বিএনপি নেতা খন্দকার মাহবুব হোসেন আর নেই

আগের সংবাদ

দেশজুড়ে জেঁকে বসেছে শীত : উত্তররাঞ্চলের কয়েক জেলায় বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ > জনজীবন বিপর্যস্ত > বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগবালাই

পরের সংবাদ

দর্শনার্থী আগমনের অপেক্ষা : গজনী বিনোদন কেন্দ্রে মনোরম সাজ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

খোরশেদ আলম, শেরপুর থেকে : শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার গজনী বিনোদন কেন্দ্রটিকে চলতি শীত মৌসুমে দর্শনার্থীদের আগমনের অপেক্ষায় মনোরম পরিবেশে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। প্রতি বছর শীত মৌসুমে এ বিনোদন কেন্দ্রটি দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়।
সারাদেশ থেকে প্রতিদিন শত শত ভ্রমণ পিপাসুদের আগমন ঘটে এ বিনোদন কেন্দ্রটিতে। তবে করোনাকালীন পর্যটন কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় কোনো পর্যটক আসেনি। এতে গত ২ বছর পর্যটন কেন্দ্রের ইজারাদার ও ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হয়েছে।
আর তাই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চলতি বছর শীত মৌসুমে দর্শনার্থীদের আগমনের অপেক্ষায় আগেভাগে মনোরম পরিবেশে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিনোদন কেন্দ্রটি। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে নেয়া হয়েছে কড়া পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
জানা গেছে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নীলাভূমি গারো পাহাড়ের পাদদেশে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলা।
এ সৌন্দর্যকে ঘিরে ১৯৯৩ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক আতাউর রহমান মজুমদার উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গজনী এলাকায় গড়ে তুলেন একটি পিকনিক স্পট। মৌজার নামানুসারে কেন্দ্রটির নাম রাখা হয় গজনী অবকাশ বিনোদন কেন্দ্র। ৫০ একর পাহাড়ি জমিতে এ পিকনিক স্পটটি গড়ে তোলা হয়।
পিকনিক স্পটটি গড়ে উঠার পর থেকেই সারাদেশ থেকে ভ্রমণ পিপাসু ও পর্যটকদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠে গজনী অবকাশ কেন্দ্রটি। এ কেন্দ্র থেকে প্রতি বছর সরকারের কোষাগারে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। এ কারণে জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণাধীন গজনী অবকাশ পিকনিক স্পটটির প্রতি আরো মনোযোগী হয়ে উঠে জেলা প্রশাসন। শুরু হয় কেন্দ্রটির সম্প্রসারণ কাজ। নানা দিক থেকে কেন্দ্রটি সম্প্রসারণ করে সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে।
এ বিনোদন কেন্দ্রটির চারপাশে সারি সারি শালগজারিসহ বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরাজি, উঁচুনিচু পাহাড়, ঝর্ণা, লেক, পাহাড়ের চুরার চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গড়ে উঠেছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী (আদিবাসী) সম্প্রদায়ের লোকদের আবাস। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী-পুরুষ শিশুরা তাদের নিজেদের হাতে তৈরি বাহারি রঙ্গের পোশাক পরিধান করে থাকে। এ যেন বিনোদন কেন্দ্রের আলাদা আরো একটি আকর্ষণ।
এ পাহাড়ের টিলায় দাঁড়িয়ে উত্তর দিকে তাকালে চোখে পড়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরার পাহাড় ও ভারতের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসএফ ক্যাম্প। এছাড়া এ বিনোদন কেন্দ্রে কৃত্রিম এ সবকিছুর পাশাপাশি অকৃত্রিম আকর্ষণীয় নানা রংয়ের ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে। যা দেখলে ভ্রমণ পিপাসুদের মন আনন্দে দোল খায়।
এ গজনী অবকাশ বিনোদন কেন্দ্রে একবার এলে আর কিছুতেই মন ফিরে যেতে চাইবে না যে কোনো ভ্রমণ পিপাসুদের। এ বিনোদন কেন্দ্রে রয়েছে, মিনি চিড়িয়াখানা, মনোরম পরিবেশে নির্মাণ করা হয়েছে লেক, লেকে রয়েছে ভাসমান পেডেল বোর্ড, এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যেতে নির্মাণ করা হয়েছে ঝুলন্ত সেতু, শিশু পার্কে মিনি ট্রেনসহ নানা ধরনের খেলাধুলার ব্যবস্থা।
জিরাফ, ডাইনোসর, হাতি, বানর, বাঘ, হরিণের ভাস্কর্য, রয়েছে গারো মার ভাস্কর্য, বাঘের মুখ দিয়ে এক পাহাড়ের নিচ দিয়ে অন্য পাহাড়ে যেতে নির্মাণ করা হয়েছে পাতালপুরী রাস্তা। পানির ফোয়ারা, কেবলকার ওয়াসটাওয়ার, নানা রংবেরংয়ের ভাস্কর্য নির্মাণ করে মনোরম পরিবেশে সাজানো হয়েছে পর্যটন কেন্দ্রটি। ঢাকা মহাখালী বাসটার্মিনাল থেকে গজনী অবকাশ বিনোদন কেন্দ্রের দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার বাসে আসতে সময় লাগে ৪ থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা।
শেরপুর জেলা সদর থেকে বিনোদন কেন্দ্রের দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। শেরপুর থেকে বিনোদন কেন্দ্র আসতে সময় লাগে ৪০ মিনিট। ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর পাড়ি দিয়ে নকশী বিজিবি সীমান্ত ফাঁড়ি পাড়ি দেয়ার পর বিনোদন কেন্দ্রে প্রবেশের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত গাড়িতে বসে মনে হবে রাস্তার দুপাশে সারিসারি শালগজারি বাগানের সুরঙ্গের মধ্যে প্রবেশ করছেন। শেরপুর জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণাধীন বিনোদন কেন্দ্রে পৌঁছার পর রেস্ট হাউসে বিশ্রামের ব্যবস্থা আছে।

রেস্ট হাউসের ভাড়া দিতে হবে ৫০০ টাকা। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে এ রেস্ট হাউসে রাত্রিযাপনের অনুমতি নেই দর্শনার্থীদের। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত দর্শনার্থীদের রাতযাপনের সুবিধার জন্য জরুরি ভিত্তিতে রেস্ট হাউসের ব্যবস্থা করা হবে। ইতোমধ্যেই কাজ শুরুর প্রস্তুতি ও হাতে নেয়া হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
বিনোদন কেন্দ্রের ইজারাদার ফরিদ আহমেদ বলেন, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কেন্দ্রটির অনেক উন্নয়ন হয়েছে। বর্তমানেও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত আছে। এর পরেও কিছু কাজ জরুরিভাবে করা প্রয়োজন। তন্মধ্যে কেন্দ্রের মাঝ খান দিয়ে যাতায়াতের রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী। এতে কেন্দ্রে আগত দর্শনার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
কেন্দ্রের প্রবেশ পথে গেট ও টোল আদায়ের ঘর নেই। ফলে দর্শনার্থীদের কাছ থেকে টোল আদায়ের ক্ষেত্রে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়। তার দাবি কাজগুলো যেন দ্রুত করে দেন প্রশাসন।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আল মাসুদ বলেন, সমস্যাগুলো সমাধানের বিষয়ে এলজিইডির সঙ্গে কথা হয়েছে রাস্তাটি সংস্কার করে দেয়ার জন্য। জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে গেটটি করে দেয়ার আশ্বাস পাওয়া গেছে। অন্যান্য সমস্যাগুলো পর্যায়ক্রমে দ্রুতই সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা প্রশাসন সাহেলা আক্তার বলেন, করোনাকালীন পর্যটন কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় ভ্রমণ পিপাসুদের আগম ঘটেনি। এতে সরকারসহ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চলতি বছর শীত মৌসুমে দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে পর্যটন কেন্দ্রের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করা হয়েছে।
বর্তমানেও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ চলমান রয়েছে। আগামীতে পর্যটন কেন্দ্রটি আরো সৌন্দর্য ও আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা হবে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, চলতি শীত মৌসুমে দর্শনার্থীদের আগমন ঘটবে বিনোদন কেন্দ্রটিতে। তারা যেন পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা ও আনন্দ উপভোগ করতে পারেন এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়