বিএনপি নেতা খন্দকার মাহবুব হোসেন আর নেই

আগের সংবাদ

দেশজুড়ে জেঁকে বসেছে শীত : উত্তররাঞ্চলের কয়েক জেলায় বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ > জনজীবন বিপর্যস্ত > বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগবালাই

পরের সংবাদ

গাংনী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা : সময় শেষের আগেই সেবা বন্ধ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মেহেরপুর প্রতিনিধি : নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলছে মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। রোগীর প্রতি অবহেলা, ঠিকমতো রোগী না দেখা ও ছোটখাটো সমস্যায়ও রোগীদের রেফার করা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এছাড়া হাসপাতাল চত্বর ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। সেবাপ্রত্যাশীরা এসে কেউ হতাশা নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন আবার কেউ জেলা শহর না হয় বেসরকারি ক্লিনিকে যাচ্ছেন।
গাংনীর থানাপাড়ার জোছনা খাতুন গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে এসে হয়রানির শিকার হন। পাঁচ টাকা দিয়ে বহির্বিভাগের টিকেট কেনেন কাউন্টার থেকে। সেবা নিতে যান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১০৯ নম্বর কক্ষে। এ কক্ষে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন ডাক্তার মাসুদুর রহমান। শুধু জোছনা খাতুনই নয়, এ সময় আরো চার থেকে পাঁচজন রোগী টিকেট নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। দুপুর সাড়ে ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে তিনি চিকিৎসা দেয়ার সময় শেষ বলে কক্ষ থেকে বেরিয়ে পড়েন।
উপজেলার মাইলমারি গ্রামের রেক্সোনা খাতুন বলেন, দুপুর ১২টায় আমাকে টিকেট দেয়া হয়নি। তালা দিয়ে টিকেট বিক্রি বন্ধ করে দেন কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা মকলেছুর রহমান ও লালচাঁদ। সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত সেবাপ্রত্যাশীদের টিকেট দেয়ার সরকারি নিয়ম থাকলেও মোকলেছুর রহমান ও লালচাঁদ দুপুর ১২টা বাজলেই টিকেট দেয়া বন্ধ করে দেন। জরুরি বিভাগে সার্বক্ষণিক মেডিকেল অফিসার থাকার কথা থাকলেও তাদের দেখা মেলে মাঝেমধ্যে। সহকারী মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) দিয়ে চলে জরুরি বিভাগের সব চিকিৎসা।
জানা গেছে, ১৫ জন মেডিকেল অফিসার ও দুজন জুনিয়র কনসালটেন্ট দিয়ে চলছে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসাসেবা। জনবল সংকট, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে উপজেলার সরকারি স্বাস্থ্যসেবা। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে সেবা নিতে আসা গাড়াডোব গ্রামের মমতাজ খাতুন বলেন, আমি চেকআপ করতে এসেছি। দরজায় ঢুকতেই দেখি টয়লেটের পাইপ ভেঙে মলমূত্র পড়ছে। তা দেখে আমার বমি শুরু হয়ে যায়। কেউ সেখানে সেবা নিতে যেতে পারছেন না। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি দিন দিন চিকিৎসা নেয়ার অযোগ্য হয়ে পড়ছে। প্রতিবছর সরকারি টাকার বরাদ্দ থাকলেও সেই টাকা কোথায় যায় এমন প্রশ্ন তোলেন এই ভুক্তভোগী সেবাপ্রত্যাশী।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আব্দুল্লাহ আল মারুফ বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ম অনুযায়ী একজন চিকিৎসক সকাল ৮টায় অফিসে আসবেন এবং ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা দেবেন। বহিঃবিভাগের টিকেট বিক্রিও হবে সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত।
এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে করোনাকালে স্বেচ্ছাসেবকদের সম্মনী ভাতা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। করোনা মহামারির সময় ভ্যাকসিনেশনের জন্য স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়। প্রতিটি দলে তিনজন করে পাঁচটি দলে মোট ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করেন। সে সময় প্রতি জনের জন্য ৩৫০ টাকা করে সম্মানী প্রদানের কথা বলা হয়। এক বছর শ্রম দেয়ার পর গত ৩০ জুন ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ পায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এদের মধ্যে অধিকাংশ স্বেচ্ছাসেবক তাদের সম্মানীর টাকা পেলেও অনেকেই তাদের পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। কার কাছে চাইবেন তাদের পাওনা এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন টিকাদানকারীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেশ কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক জানান, তারা করোনা মহামারিকে উপেক্ষা করে সাধারণ মানুষকে ভ্যাকসিন প্রদান করেছেন। অথচ তাদের প্রাপ্য সম্মানীটা আজো পাননি। সেবকদের নামে বরাদ্দকৃত অর্থের ২ লাখ টাকা উত্তোলন করে তা পকেটস্থ করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব সুপ্রভা রানী।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুপ্রভা রানীর স্বাক্ষরে টাকা উত্তোলন করা হলেও ২ লাখ টাকার দায় নিচ্ছেন না তিনি। ২ লাখ টাকার দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন ইপিআই টেকনিশিয়ান আব্দুল রশিদের ওপর। টাকা হাতিয়ে নেয়ার দোষ ঢাকতে সুপ্রভা রানী ইপিআই টেকনিশিয়ান আব্দুর রশিদসহ হাসপাতালের অন্য কর্মচারীদের ওপর মানসিক নির্যাতনে মেতে উঠেছেন বলে অভিযোগ আব্দুর রশিদের।
নানা অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুপ্রভা রানী বলেন, অনিয়মের বিষয়গুলো ক্ষতিয়ে দেখা হবে। আর তার কাছে কোনো টাকা নেই। ইপিআই টেকনিশিয়ান আব্দুর রশিদ তাকে কোনো টাকা দেননি।
যেহেতু আপনি করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব আপনার স্বাক্ষরে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে, এ টাকার দায় কার? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলবেন না বলে জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়