রাজধানীর বাজারদর : সবজিতে স্বস্তি মাছ-ডিমের দাম অপরিবর্তিত

আগের সংবাদ

বই সংকটে উৎসবে ছন্দপতন : শিক্ষার্থীদের হাতে দেয়া হয় একটি-দুটি অথবা গতবছরের বই > ফেব্রুয়ারির আগে সব শিক্ষার্থী বই পাবে না

পরের সংবাদ

শেরপুরে অভিযানের পরও বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ ইটভাটা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

খোরশেদ আলম, শেরপুর থেকে : শেরপুরে অবাধে চলছে অবৈধ ইটভাটা। ইটভাটা স্থাপন নীতিমালার তোয়াক্কা না করে জেলা সদরসহ ৫টি উপজেলা ও পৌর এলাকায়সহ গ্রামাঞ্চলে হাটবাজার, স্কুল, মসজিদ ও জনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে, ইটভাটাগুলো। এসব ইটভাটাগুলোতে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে গারো পাহাড় থেকে সংগ্রহীত কাঠ ও মাত্রাতিরিক্ত সালফার সমৃদ্ধ আমদানিকৃত কয়লা। ফলে ইটভাটার চিমনি থেকে ছড়িয়ে পড়া কালো ধোঁয়ায় পরিবেশের ওপর পড়ছে বিরূপ প্রভাব। কোথাও কোথাও তিন ফসলি কৃষিজমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ ইটভাটা। এসব ভাটাগুলোতে ইট তৈরির কাজে মাটি সংগ্রহ করা হচ্ছে কৃষিজমি থেকে। সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে জমির মালিককে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে এস্কাবেটর বসিয়ে অবাধে কেটে নেয়া হচ্ছে মাটি। এতে ফসলি জমি উর্বরতা হারিয়ে চাষাবাদ অনুপযোগী হয়ে পড়লেও স্থানীয় প্রশাসন নীরব।
এদিকে এসব জমির মালিকরা জানে না এ ব্যাপারে সরকারি বিধিনিষেধ আছে। জমির মালিকরা বলেন, ‘আমার জমির মাটি আমি বিক্রি করব তাতে অন্যের কী?’ ভাটা মালিকদের অর্থের লোভে কৃষকরা মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে জমিগুলো উর্বরতা হারিয়ে অনাবাদি হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা। এসব ইটভাটার জন্য মাটি সংগ্রহ করা হচ্ছে কৃষিজমির টপসয়েলের মাটি কেটে নিয়ে। দীর্ঘদিন থেকেই অবৈধভাবে এই মাটির ব্যবসা করে আসছেন একটি চক্র।
বর্তমানে দিনে রাতে ছুটছে মাটি পরিবহনকৃত ড্রামট্রাক ও মাহিন্দ্র। এসব ড্রামট্রাকেরও আবার নেই বৈধ রোড পারমিট। এমন অভিযোগ ও রয়েছে। ড্রামট্রাকের অবাধ যাতায়াতে গ্রামাঞ্চলের রাস্তা-ঘাট ভেঙে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে মাঝে মধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা।
সম্প্রতি শ্রীবরদী উপজেলার চৈতাজানী এলাকায় সোহাগ মিয়া (২৫), শেরপুর পৌর এলাকায় রংমিস্ত্রি নুরুল ইসলাম (৪০) নিহত হ?য়। হতাহত হয়েছেন অনেক পথচারী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইটভাটা মালিক জানান, ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নিলে কৃষকের ক্ষতি হয়। ব্যবসার স্বার্থেই দালালদের মাধ্যমে ফসলি জমির মাটিও কিনতে হচ্ছে তাদের। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যেই অভিযান চালানো হয়। ভাটা মালিকদের কাছ থেকে জরিমানা আদায়সহ চুল্লি ও ভেঙে দেয়া হয়। কিন্তু স্থায়ীভাবে ব্যবস্থাগ্রহণ না করায় বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ ইটভাটাগুলো। চলতি বছরের ১০ এপ্রিল জেলার নকলা উপজেলায় অনুমোদনবিহীন ৫টি ইটভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মালিকের কাছ থেকে ৯ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
ভাটাগুলো বন্ধ অথবা অন্যথায় পরিবেশসম্মত স্থানে স্থানান্তরের নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু অভিযানের পর আবারো ইট পোড়ানোর কাজে ফিরে আসে ইটভাটাগুলো। ভাটা মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় নানাভাবে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে অবাধে চালিয়ে আসছে ইট পোড়ানোর কাজ। পরিবেশ ধ্বংস হলেও মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের কিছু যায় আসে না।
শেরপুর পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শেরপুর জেলায় ইটভাটা রয়েছে ৬২টি। তার মধ্যে মাত্র ৩টি ভাটার বৈধ অনুমতি রয়েছে। বাকি ৫৯টির আবেদন নামঞ্জুর করে ইটভাটা বন্ধ এবং অন্যত্র পরিবেশসম্মত স্থানে স্থানান্তর করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ১৩টি ইটভাটা বন্ধ রয়েছে। অবশিষ্ট অবৈধ ৪৬টি ইটভাটা বন্ধ করতে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। গত বুধবার জেলার শ্রীবরদী উপজেলার অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আল আমিন ব্রিকসকে ৩ লাখ, ইলিয়া ব্রিকসকে ৭ লাখ, ফাতিমা ব্রিকসকে ৩ লাখ, জনতা ব্রিকসকে ২ লাখ, মুনিরা ব্রিকসকে ৩ লাখ, একতা ব্রিকসকে ৩ লাখসহ মোট ১৮ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এছাড়া আল আমিন ব্রিকস-২ এবং ফাতেমা ব্রিকস এক্সাভেটর দিয়ে ভেঙে দেয়া হয়। এ সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহের উপপরিচালক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুবেল মাহমুদ, শেরপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আল মাহমুদ, পরিদর্শক সুশীল কুমার দাসসহ পুলিশ সদস্য, ফায়ার সার্ভিস এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রীনভয়েসের শেরপুর জেলার সভাপতি রফিক মজিদ বলেন, ‘আমাদের দেশ এমনিতেই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। তার ওপর ইটভাটার প্রভাবে আরো বিপর্যস্ত হচ্ছে পরিবেশ। ব্যাহত হচ্ছে খাদ্য উৎপাদন। স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ নানা সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইতোমধ্যেই শেরপুরসহ সারাদেশে পরিবেশবান্ধব বালি ও সিমেন্টের ব্লক ইট চালু হয়েছে। কিন্তু আমরা কেউই এই ইট ব্যবহারে সচেতন ন?ই। প্রচার প্রচারণাও তেমন নেই বললেই চলে। তাই এ বিষয়ে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সবাইকে সচেতন হতে হবে। সেই সঙ্গে ইটভাটা মালিকদের?ও মাটির ইটের পরিবর্তে ব্লক ইটের ব্যবসায় ফিরে আনা জরুরি হয়ে পড়েছে।
অপরদিকে অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং অবশিষ্ট সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার প্রস্তুতি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে শেরপুরের পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আল মাহমুদ ভোরের কাগজকে বলেন, যেসব ভাটা মালিক পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশ অমান্য করবেন তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়