ঢাবিতে পর্দা নামল নন-ফিকশন বইমেলার

আগের সংবাদ

কালো মানিকের জন্য শোকার্ত বিশ্ব

পরের সংবাদ

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ : রুশ-মার্কিন বাগযুদ্ধের নেপথ্যে নিষিদ্ধ জাহাজ!

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা নিয়ে গত সপ্তাহে রুশ-মার্কিন বাগযুদ্ধ যখন প্রকাশ্যে, ঠিক তখন আড়ালে এই দুদেশের তৎপরতা চলেছে নিষিদ্ধ একটি রুশ জাহাজকে বাংলাদেশে ভিড়তে দেয়া না দেয়া নিয়ে। তবে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক মাধ্যমে জানিয়েছে তারা রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়াতে চায় না এবং জড়াবেও না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ‘উরসা মেজর’ নামে রাশিয়ার পতাকাবাহী জাহাজটি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল নিয়ে গত ১৪ নভেম্বর রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ বন্দর ছেড়ে আসে। গত ২৪ ডিসেম্বর জাহাজটির বাংলাদেশে পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু সেটি বাংলাদেশে আসার আগেই যুক্তরাষ্ট্র ঢাকাকে জানায়, ‘উরসা মেজর’ নামের জাহাজটি আসলে ‘স্পার্টা ৩’ নামে রাশিয়ার মালিকানাধীন একটি জাহাজ। এর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া আছে। এই জাহাজটিকেই নাম বদলে নতুন নাম ‘উরসা মেজর’ হিসেবে নিবন্ধন দেয়া আছে। নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন জাহাজকে বাংলাদেশে ভিড়তে দিলে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে রাশিয়ার চাপ ছিল জাহাজটিকে ভিড়তে দেয়ার। বিষয়টি বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত গড়ায়। গত ২২ ডিসেম্বর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে রাশিয়ার প্রতিনিধির উপস্থিতিতে জানিয়ে দেয়া হয়, নীতি অনুযায়ী বাংলাদেশ কোনো নিষিদ্ধ জাহাজ ভিড়তে দেবে না। সেদিন ঢাকায় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে এ কথা জানিয়ে দেয় সরকার। বাংলাদেশ বলেছে, অতীতে যে সব জাহাজে করে রাশিয়া রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামাল পাঠিয়েছে আগামীতেও সেভাবে পাঠাতে পারে। কিন্তু নিষিদ্ধ কোনো জাহাজে করে নয়।
এর আগে গত সপ্তাহের শুরুর দিকে ঢাকায় রুশ দূতাবাস অভিযোগ করে, গণতন্ত্র, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ বা কোথাও হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে। রাশিয়ার নীতি হলো কখনো অন্য দেশে হস্তক্ষেপ না করা। এরপর ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাশিয়াকে খোঁচা দিয়ে বলেছিল, রাশিয়ার ওই নীতি কি ইউক্রেনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য? ২২ ডিসেম্বর মস্কোতে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রও ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতসহ পশ্চিমা কিছু দেশের কূটনীতিকদের তৎপরতা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলে মন্তব্য করে। রুশ মুখপাত্র ঢাকায় জার্মান দূতাবাসেরও নাম নিয়েছেন। ২৫ ডিসেম্বর ঢাকায় জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ত্রোস্তার এক টুইট বার্তায় বলেন, বড় দিনের উৎসবেও ইউক্রেনে রাশিয়ার বোমাবর্ষণ ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়াবে না যুক্তরাষ্ট্র : রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক মাধ্যমে জানিয়েছে তারা রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়াতে চায় না এবং জড়াবেও না। বুধবার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টিভিকে এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দেন ল্যাভরভ। সেখানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকারে ল্যাভরভ জানান, ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্র প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাঠাবে। কিন্তু এ ব্যবস্থার সঙ্গে কোনো মার্কিন বিশেষজ্ঞকে পাঠাবে না। এ ব্যাপারে ল্যাভরভ বলেন, আমরা কূটনৈতিক মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জানতে চেয়েছিলাম তারা এখনো ইউক্রেনে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাঠাতে চায় কিনা। আমরা সঙ্গে এ-ও বলেছিলাম, প্যাট্রিয়ট একটি জটিল ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। এটি পরিচালনায় মার্কিন বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন হবে। তারা কি ইউক্রেনে প্যাট্রিয়টের সঙ্গে বিশেষজ্ঞও পাঠাবে? এর জবাবে যুক্তরাষ্ট্র জানায়, কোনো বিশেষজ্ঞকে পাঠাবে না। কারণ রাশিয়ার সঙ্গে তারা সরাসরি যুদ্ধে জড়াতে চায় না এবং জড়াবেও না।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ইউক্রেন প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাবে। এদিকে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনা চলছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এক সপ্তাহ আগে হুমকি দিয়ে বলেছেন, প্যাট্রিয়ট একটি পুরনো ব্যবস্থা। এর চেয়ে রাশিয়ার এস-৩০০ অধিকতর শক্তিশালী। প্যাট্রিয়ট ইউক্রেনে ঢোকামাত্র হামলা চালানো হবে।
ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী : মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের পণ্যবাহী রুশ জাহাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরী। গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মার সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের পণ্য নিয়ে আসা রাশিয়ার জাহাজ ‘উরসা মেজর’কে মোংলা বন্দরে ঢুকতে দেয়নি সরকার। ওই জাহাজের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেটিকে ভিড়তে দেয়া হয়নি বলে মস্কোকে জানায় ঢাকা। তবে ঢাকার এই অবস্থানকে ‘গ্রহণযোগ্য নয়’ বলে বার্তা দিয়েছে মস্কো। রাশিয়ার প্রস্তাব গ্রহণ না করে জাহাজটিকে দেশে ফেরত যেতে বলেছে সরকার।
এ প্রসঙ্গে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র একটি মেগা প্রকল্প। এটাকে প্রধান্য দিয়ে থাকি আমরা। জাহাজটি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে- বিষয়টি জানা ছিল না। এখন যেহেতু নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানা হয়েছে, এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
জানা যায়, অক্টোবরে ওই পণ্য মোংলা বন্দরে পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের অনুমতি চায় রাশিয়া। তখন তারা জানিয়েছিল যে পণ্যবাহী জাহাজের নাম ‘স্পার্টা ৩’। কিন্তু ওই জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তারা একই জাহাজের নাম পরিবর্তন করে এবং নতুন নাম দেয় ‘উরসা মেজর’। কিন্তু আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি জাহাজের একটি নম্বর থাকে, যেটি তারা পরিবর্তন করেনি। ফলে বিষয়টি ধরা পড়ে যায়।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, নিষেধাজ্ঞা থাকা জাহাজ দেশে প্রবেশ করতে দিলে সেই দেশের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। সেদিক থেকে সরকারের অবস্থান যুক্তিযুক্ত। ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে আলাপের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী জানান, শিগগিরই ভারতের একটি ক্রুজ শিপ বাংলাদেশে আসছে। এ বিষয়ে কাস্টমস, ইমিগ্রেশনসহ কয়েকটি ব্যাপারে কিছুটা চ্যালেঞ্জ আছে। এসব চ্যালেঞ্জ ও ক্রুজ শিপ আগমন উপলক্ষে ভারতের একটি টিম চাঁদপুর, বাগেরহাট ও মোংলা পরিদর্শন করবে। সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি জানান, কোভিডের পর স্থলবন্দরগুলো পুরোদমে শুরু হয়নি। অনেক জায়গায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ভিসা ইস্যু করছে না, সমস্যা হচ্ছে। সেসব বিষয়ে কথা হয়েছে। তারা পদক্ষেপ নেবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সীমান্ত ভালো আছে। অসুবিধা নেই। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে। দুদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। স্থলবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণে বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে সমস্যা হয়। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হয়। বিচ্ছিন্ন ঘটনা যাতে আর না হয় সেজন্য দুদেশের সরকার কাজ করছে। অনেক স্থলবন্দর অপারেশনের অপেক্ষায় আছে। এর মধ্যে খাগড়াছড়ির রামগড় স্থলবন্দরও রয়েছে। রামগড় স্থলবন্দর উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সামারি (সারসংক্ষেপ) পাঠানো হয়েছে। জানুয়ারিতে চালু করার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী এপ্রিল বা মে মাসে পায়রা বন্দরের ফার্স্ট টার্মিনাল চালু করা হবে। আন্ধারমানিক নদীতে ব্রিজ নির্মাণকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেখানে ফেরি চলবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়