প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
উত্তরের বাতাস জানান দিচ্ছে হিম শীতের বার্তা। এখনই সময় এই শীতে নিজেকে ফ্যাশনেবল করে তোলার রসদ জোগাড় করার। শীত ঠেকাতে তাই চমৎকার বুনন আর আকর্ষণীয় ডিজাইনের শালে আগ্রহ ফ্যাশনিস্তাদের। বলা যায়, এক প্যাঁচে শীত তাড়াতে জুড়ি নেই শালের।
সাদিকুর রহমান সাকিব
শীতের সময় বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানে গায়ে জড়িয়ে শাল পরার প্রচলন বেশি দেখা যায়। তবে আমাদের এখানে
শালের ধরনটাই বেশ বদলে গেছে। একসময় ৪৫ থেকে ৪৮ ইঞ্চি পর্যন্ত চওড়া শাল বানানো হতো। বর্তমানে ৩২ ইঞ্চি পর্যন্ত চওড়া হয়ে থাকে। শাল পরার কায়দায়ও চলে এসেছে নতুনত্ব। এফ কমার্স পেইজ উই ক্র্যাফটের সহ-উদ্যোক্তা জাহিরা খানম বলেন, “একসময় শাল মোটা সুতায় তৈরি হতো। এখন এটার সঙ্গে অ্যাক্রিলিক, সিনথেটিক সুতা, উল মেশানো হচ্ছে। মূলত এভাবে একটু উষ্ণতা বাড়ানোর চেষ্টা করা। ডিজাইন হিসাবে কাঠ ব্লক বা স্ক্রিন প্রিন্ট বেশ জনপ্রিয়। তবে খরচ বাড়ে মেশিন এমব্রয়ডারিতে ভ্যালু এডিশন হলে। আমরাও ক্রেতা চাহিদার ভিত্তিতে এভাবেই রঙিন শাল তৈরি করছি। তবে শাল হওয়া চাই পোশাকের ধরন বুঝে। এখন শাল কেবল কাঁধে রাখছেন তা নয়। কেউ কেউ শাল স্কার্ফ কিংবা কেপের মতো করেও ব্যবহার করেন।”
মূলত: আঠারো শতকের মাঝামাঝি থেকেই শাল ও চাদরের ব্যবহার বিশদভাবে দেখা যায়। প্রথমদিকে এটি অভিজাত মানুষের পোশাক হিসেবে প্রচলিত থাকলেও পরে তা জনসাধারণের পছন্দের পোশাকের মধ্যে জায়গা পায়। সে সুবাদে বেশ আগে থেকেই শালকে ক্যানভাস করে ফুটে ওঠে একেক দেশের সংস্কৃতি। বর্গাকার, ত্রিকোণাকার শালের বুননেও রয়েছে বিশেষ ভিন্নতা। আমাদের দেশে শালের নকশা করা হয় শীত মাথায় রেখে। তবে এক্ষেত্রে একটু ব্যতিক্রম চাদরের ব্যবহার। চাদর মূলত ইসলাম ধর্মাবলম্বী নারীদের একটি বিশেষ পোশাক হিসেবেই শুরু থেকে প্রচলিত। প্রথমে তা শুধু পার্সিয়ান নারীরাই ব্যবহার করত। ধীরে ধীরে একই প্যাটার্নের পোশাক ছড়িয়ে পড়ে সারাবিশ্বে। তবে একেক জায়গায় একেক নামে। আর মিশে যায় সে দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে। যেমন মিশে গেছে চাদর হয়ে আমাদের দেশে। তবে কিছু পার্থক্য দেখা যায় চাদর এবং উত্তরীয়র ব্যবহারে। উত্তরীয় চাদর থেকে একটু ছোট আকারেই হয়ে থাকে সাধারণত, যা শুধু পাঞ্জাবির সঙ্গেই ব্যবহার করা হয় এবং শীতের বাইরেও দেখা যায় এর ব্যবহার।
বিভিন্ন ডিজাইন ও মোটিফের নান্দনিক চাদর পাবেন বাজারে। দেশি শালের মধ্যে বাঙালি মেয়েদের প্রথম পছন্দ খাদি বা সুতি শাল। সিল্ক, এন্ডি সিল্ক, খাদি, পশমি সুতা, মোটা সুতা ইত্যাদি কাপড়ের ওপর নির্মিত হচ্ছে আমাদের দেশের ফ্যাশন হাউসগুলোর শীতের চাদর। নানা মোটিফের শালে প্রাধান্য পাচ্ছে দেশীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। ডিজাইনে ভিন্নতা নিয়ে আসতে কখনও ব্যবহার করা হচ্ছে ব্লক-বাটিকের কাজ। আবার কখনও কারচুপি, স্প্রে, অ্যাপলিক, ব্রাশ, এমব্রয়ডারি, হ্যান্ডপেইন্ট চাদরে নিয়ে আসছে ভিন্নতা। চাদরের বুকে শুধু সেলাই করেও তৈরি হচ্ছে মনোরম নকশা। এ ছাড়া জরি, পুঁতি, চুমকি ও পাথরের কাজ করা চাদর রয়েছে চাহিদার তালিকায়। অঞ্জন’স ফ্যাশন ব্র্যান্ডের শীর্ষ নির্বাহী শাহীন আহমেদ জানান “ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন নকশায় অ্যাক্রিলিক টিস্যু উলেন শালও পাওয়া যাবে। নকশিকাঁথা ও ব্লক প্রিন্টের চাদরে নতুনত্ব নিয়ে আসা হয়েছে এবারের শীতে। অনেক ফ্যাশন হাউস কুমিল্লা, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ ও টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের তাঁতকে বেছে নিচ্ছে প্রধান উপাদান হিসেবে।”
এদিকে বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজার থেকে আসা আদিবাসী শালও এখন বেশ জনপ্রিয়। দুরঙের সমন্বয়ে তৈরি করা মণিপুরি শালকেও বেছে নিতে পারেন। বর্তমানে চাদরের ফ্যাশনে এগিয়ে আছে তরুণ প্রজন্ম। রঙবেরঙের দেশি চাদর প্রয়োজনের পাশাপাশি হয়ে গেছে ফ্যাশনের একটি অংশ। শাল ও চাদর সরাসরি ব্যবহৃত হয় আমাদের দেশীয় পোশাক হিসেবে। এর বাইরে দেশের কাপড়ে, দেশীয় সংস্কৃতির নকশায় করা ডিজাইন একটু ভিন্ন প্যাটার্নে তৈরি হয় আমাদের দেশেই।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।