প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগের ফল ১৪ ডিসেম্বর

আগের সংবাদ

১৭২ দেশে শ্রমবাজার : রেমিট্যান্স কমছে যে কারণে

পরের সংবাদ

স্মরণসভায় বক্তারা : সাংবাদিক জগলুল আহমেদ ছিলেন বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : জগলুল আহমেদ চৌধূরী ছিলেন একজন জ্ঞানী ও সাহসী সাংবাদিক। দেশের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল অপরিসীম। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করতেন। তার উদার মানসিকতা ও বন্ধুত্বের কাছে আমরা বার বার পরাজিত হয়েছি। একজন বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব হিসাবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন। অথচ সড়ক দুর্ঘটনার পর এই খ্যাতিমান সাংবাদিকের দেহ ১০ মিনিট রাস্তায় পড়েছিল। তদন্ত কমিটি আজো ঘাতক বাসটি শনাক্ত করতে পারেনি। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক জগলুল আহমেদ চৌধূরী ৮ম মৃত্যুবাষির্কী স্মরণসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাবেক খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলামের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্তের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রবীণ সাংবাদিক ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবিব, প্রবীণ সাংবাদিক আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া, বার্তা সংস্থা ইএনবির সম্পাদক ফরিদ হোসেন, সাংবাদিক মনোজ রায় প্রমুখ। এছাড়া জগলুল আহমেদ চৌধূরীর ছেলে নাবিদ আহমেদ চৌধুরী ও তাদের নিকট আত্মীয়রা স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, জগলুল আহমেদ চৌধূরী ছিলেন একজন জ্ঞানী ও সাহসী সাংবাদিক। উপমহাদেশ সম্পর্কে তার গভীর আগ্রহ ছিল। আমিও তার কাছ থেকে উপকৃত হয়েছি। সব সময় সঠিক তথ্য সংগ্রহ করে তারপর লিখতেন। জগলুল আহমেদ সবসময় উত্তম সাংবাদিকতা করতেন। কিন্তু বর্তমান সময়ের সাংবাদিকরা অনেক অপরিপক্ক। তারা অনেক সময় ভুল তথ্য দেন। বাংলাদেশের সাংবাদিকদের জগলুল আহমেদের মতো সঠিক তথ্য নির্ভর সাংবাদিকতার দিকে নজর দিতে হবে।
তিনি বলেন, সড়ক দূর্ঘটনায় জগলুল আহমেদ চৌধূরীর মৃত্যু খুবই জঘন্য ও দুর্ভাগ্যজনক। চলন্ত বাস থেকে কেউ যেন নামতে না পারে তা আইন করে বন্ধ করতে হবে। এভাবে বিশ্বের কোনো দেশে চলন্ত বাস থেকে যাত্রী নামানোর নিয়ম নেই।
এডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে জগলুল আহমেদ চৌধূরীর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব। আমি যখন ছাত্রলীগ করতাম, জগলুল তখন ছাত্র ইউনিয়ন করতো। তারপরেও আমৃত্যু আমাদের বন্ধুত্ব ছিল। দেশের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করতেন বলেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার অনেক শ্রদ্ধাবোধ ছিল। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। সাংবাদিকতায় তিনি সাহসী ভূমিকা পালন করতেন। আমরা রাজনীতিবিদরাও তার টকশো থেকে অনেক কিছু শিখতে পারতাম।
ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, জগলুল আহমেদ চৌধূরীর কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার সুযোগ হয়েছে। তরুণ সাংবাদিকদের তিনি সবসময় উৎসাহ দিতেন। তিনি বড় মাপের সাংবাদিক ছিলেন, কিন্তু নিজের প্রচার করতেন না। তার মৃত্যুর পর শেখ হাসিনা শোকবাণীতে বলেছিলেন, ‘আমি

আমার বন্ধুকে হারালাম।’ তখন আমরা জানতে পারলাম তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কের কথা। কিন্তু তার আগে দীর্ঘ সময়েও জগলুল ভাই কখনো একথা বলেননি। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো- জগলুল ভাই যার বাবা এবং শ্বশুর মন্ত্রী ছিলেন, তিনি ১০ মিনিট রাস্তায় পড়েছিলেন। পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়নি। দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হলে তিনি হয়তো বেঁচে যেতেন। মৃত্যুর পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু ঘাতক বাসটি আজো শনাক্ত হয়নি। পুলিশের গাফিলতি ছিল।
সাংবাদিক হারুন হাবিব বলেন, দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবাদকর্মী ছিলেন জগলুল আহমেদ চৌধূরী। অথচ এখানো তার মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত ঘাতক বাসটি শনাক্ত না হওয়া দুঃখজনক। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশের উদ্যোগ নিতে হবে। তার উদার মানসিকতা ও বন্ধুত্বের কাছে আমরা বার বার পরাজিত হয়েছি। দিল্লীতে থাকাকালীন সময়ে সাহিত্যিক ও সংগীত শিল্পীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিদের তার বাসায় যাওয়া-আসা ছিল। তিনি সবাইকে সম্মান করতেন।
আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, জগলুল ভাই ছিলেন একজন শক্তিশালী রাজনৈতিক বিশ্লেষক। বিভিন্ন দেশ থেকে তার কাছে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ জানতে চাওয়া হতো। শেখ হাসিনা প্রথম আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার পর দিল্লীতে বসে তিনিই প্রথম সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। তিনি লোভ, লালসা, ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে সাংবাদিকতা করেছেন।
ফরিদ হোসেন বলেন, অনেক বিষয়ে তিনি জ্ঞান রাখতেন। তিনি নিজেকে একজন বহুমাত্রিক ব্যক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন বড় মাপের কূটনৈতিক বিশ্লেষক। ভারতের সঙ্গে কোনো বিষয়ে কাজ করা উচিত বা উচিত না- জগলুল ভাই তার সাহসী বিশ্লেষণ করতেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়