প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগের ফল ১৪ ডিসেম্বর

আগের সংবাদ

১৭২ দেশে শ্রমবাজার : রেমিট্যান্স কমছে যে কারণে

পরের সংবাদ

মাদক নির্মূল করতে হবে

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। সব বয়সের মানুষই মাদকের দিকে ঝুঁকছে। এমনকি তরুণ-তরুণী ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যেও এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। মাদক সহজলভ্য হওয়ায় নতুন করে অনেকেই আসক্ত হচ্ছে। এখন মাদক এতটাই সহজলভ্য যে শুধু শহর নয়, প্রত্যন্ত গ্রামেও হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। স্বাভাবিকভাবেই মাদকের প্রভাব কমানো যাচ্ছে না। বরং এর প্রভাব সামাজিক বিপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বছর দুয়েক আগে ইয়াবাবিরোধী অভিযানের পর পত্রিকার খবরেই বলা হয়েছিল ইয়াবার চালান আরো বেড়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞই তখন বলেছিলেন, মাদকবিরোধী অভিযানের অ্যাপ্রোচ ঠিক ছিল না। তার কারণেই সমস্যাগুলো হচ্ছে মাদক না কমে বরং পরিমাণে ও উপকরণে বাড়ছে।
মিয়ানমারে তৈরি মাদকের বড় বাজার বাংলাদেশ। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ (আইস) পাচারে বেছে নেয়া হয়েছে সাতটি নতুন রুট। এর মধ্যে রয়েছে ভারতের মিজোরাম, আসাম ও মণিপুর হয়ে ত্রিপুরার দুটি রুট, আর বান্দরবান, কক্সবাজার, বরিশাল, যশোর ও সাতক্ষীরার পাঁচটি রুট। গত সেপ্টেম্বরে পঞ্চম দ্বিপক্ষীয় সভায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে এসব রুটের ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। সীমান্তে যৌথ অভিযানের প্রস্তাবও দিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তবে এখনো মিয়ানমারের পক্ষ থেকে সাড়া মেলেনি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যানুযায়ী নতুন সাতটি রুটে বর্তমানে মিয়ানমার থেকে দেশে আসছে ইয়াবা ও আইস। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ গত আগস্ট মাসে ৯ লাখ ৩৫ হাজার ১৪৪ পিস, সেপ্টেম্বরে আট লাখ ৩১ হাজার ৫৯৪ পিস ও নভেম্বরে ৫ লাখ ৭৩ হাজার ৩৯৩ পিস ইয়াবা এবং ২ কেজি ১২০ গ্রাম আইস উদ্ধার করে। মিয়ানমারের শান ও কোচিন প্রদেশে কারখানা স্থাপন করে ইয়াবা উৎপাদন করা হচ্ছে। শান প্রদেশ ও আশপাশের এলাকা থেকে বাংলাদেশে আসছে ইয়াবা ও আইস। রাজধানীর কিছু বিত্তশালী মাদকসেবী এরই মধ্যে আইস গ্রহণ শুরু করেছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী পরিবারের সন্তানরাও সর্বনাশা এই নেশার জগৎ ঘিরে গড়ে তুলেছে বাণিজ্যিক সিন্ডিকেট। মাদকের অপব্যবহার শুধু মাদকেই সীমিত থাকে না, আরো বহু অপরাধের কারণ হয়। অন্যদিকে মাদকসেবীরা যেমন পরিবারের জন্য, তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তরুণ-যুবকদের বেশ বড় একটা অংশ এই আত্মঘাতী আসক্তির শিকার। তবে মাদকাসক্তি শুধু এই বয়সিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, পূর্ণবয়স্ক, এমনকি শিশু-কিশোরদের মধ্যেও মাদকাসক্তি ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের অসংখ্য স্থানে প্রকাশ্যে মাদকদ্রব্য কেনাবেচা চলে। নির্মূল করা দূরে থাক, নিয়ন্ত্রণও করা যাচ্ছে না। সীমান্তপথে মাদক চোরাচালান ও দেশের ভেতরে মাদকদ্রব্যের কেনাবেচা অত্যন্ত কঠোর হাতে বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে বিজিবি, পুলিশ, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জবাবদিহি নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি। কারণ তাদের একাংশের সহযোগিতা ছাড়া এই মাত্রায় মাদকের ব্যবসা চলা সম্ভব নয়। মাদকাসক্তি দূর করার জন্য সামাজিক ও পারিবারিক প্রচেষ্টাও খুব জরুরি। প্রতিটি পরিবারের সন্তানদের দিকে দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন; খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ইত্যাদি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করার পরও দেশে মাদকের ব্যবহার ও পাচার সন্তোষজনক মাত্রায় রোধ করা যায়নি। সরাসরি মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে অনেক মাদক কারবারি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। এত সব কঠোর সিদ্ধান্তের পরও থামানো যাচ্ছে না মাদকের কারবার। দেশে আইনির চেয়ে বড় কোনো শক্তি থাকতে পারে না। তারা যতই ক্ষমতাধর হোক আইনি শক্তির কাছে এক সময় তাদের মাথানত করতে হবে। সরকারকে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অব্যাহত রাখতে হবে। যে কোনো মূল্যে সমাজ থেকে মাদক নির্মূল করতে হবে। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিচক্ষণ কর্মকর্তাদেরও কৌশলী হতে হবে। তাহলেই তাদের পরাজিত করা সম্ভব। আমরা মনে করি, সরকারের নীতি-কৌশলের রূপান্তর ঘটিয়ে হলেও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। তাহলেই রক্ষা পাবে আগামী দিনের কর্ণধার দেশের যুবসমাজ। মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের অভিযান সফল হোক- এই প্রত্যাশা আমাদের।

আর কে চৌধুরী
মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়