মৃত্যুবার্ষিকী আজ : সাবেক মেয়র হানিফ স্মরণে নানা কর্মসূচি

আগের সংবাদ

সমাবেশ ঘিরে দুপক্ষের হুঙ্কার : বিএনপি নেতাদের বক্তৃতায় প্রচ্ছন্ন হুমকি > ছাড় না দেয়ার ঘোষণা আওয়ামী লীগ নেতাদের

পরের সংবাদ

চেম্বার জজ আদালত : ‘কৃষকের কোমরে দড়ি, কোটি টাকা খেলাপিদের কিছু হয় না’

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ঋণের দায়ে পাবনার ১২ কৃষককে কারাগারে পাঠানোর প্রসঙ্গ টেনে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেছেন, মাত্র ২৫ হাজার টাকার জন্য সাধারণ কৃষকদের কোমরে দড়ি বেঁধে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অথচ লাখ-কোটি টাকা খেলাপিদের কিছুই হয় না। কোনো ব্যাংক চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারবে না, এ সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত আবেদনের শুনানিতে গতকাল সোমবার তিনি এ মন্তব্য করেন।
শুনানির শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন আদালতকে বলেন, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় বিষয়। হাইকোর্ট রায় দিয়ে বলেছেন, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যক্তির বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনারের মামলা করতে পারবে না। নি¤œ আদালতে এ সংক্রান্ত বিচারাধীন সব মামলায় স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। তখন চেম্বার বিচারপতি বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় না দেখে এ বিষয়ে আপাতত কিছু বলা যাবে না। আদালত এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে কিছুটা উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, আপনারা ২৫ হাজার টাকার জন্য সাধারণ কৃষকদের কোমরে দড়ি বেঁধে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। অথচ যাদের কাছে লাখ-কোটি টাকা পাওনা, তাদের কিছু হয় না।
ঋণ দেয়ার সময় গ্রাহকের কাছ থেকে নেয়া ব্ল্যাংক চেকের বিষয়ে চেম্বার বিচারপতি বলেন, এই চেকে কে স্বাক্ষর করে, কে টাকার অঙ্ক বসায়, কে কলাম পূরণ করে, তার কোনো হদিস নেই। এই চেক নেয়া যাবে না বলে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। তারপরও ব্যাংকগুলো কেন মানছে না? তখন অ্যাটর্নি জেনারেল চেম্বার বিচারপতির কাছে হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে বলেন, হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দরকার। নইলে ঋণের টাকা আদায় করা যাবে না। তখন চেম্বার বিচারপতি এ সংক্রান্ত উদাহরণ দেখতে চাইলে তা দেখাতে ব্যর্থ হন অ্যাটর্নি জেনারেল। পরে চেম্বার আদালত আগামী ১ ডিসেম্বর শুনানির তারিখ ধার্য করে ব্র্যাক ব্যাংকের আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।
ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারবে না। এমন নির্দেশনা দিয়ে গত ২৩ নভেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়, ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারবে না কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তবে অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর বিধান অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা করা যাবে। এ রায় স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে আবেদন করে ব্র্যাক ব্যাংক। গতকাল চেম্বার আদালতে বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে। আদালতে ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন এ এম আমিন উদ্দিন। বাদীপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুল্লা আল বাকী।
অর্থ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের নিয়ে দুদক নাটক করছে : এদিকে অর্থ কেলেঙ্কারীর পৃথক আরেকটি মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশনকে উদ্দেশ করে হাইকোর্ট বলেন, সব ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। আমরা কি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখব? এটা কি হয়? আদালত বলেন, এসব অর্থ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে দুদক যা করছে তাতে মনে হয়, আমরা নাটক দেখছি। হাততালি আর বসে বসে দেখা ছাড়া আর কী করার আছে।
বেসিক ব্যাংকের অর্থপাচারের মামলার আসামি মোহাম্মদ আলীর জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল শুনানিকালে গতকাল সোমবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। আদালতে মোহাম্মদ আলীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম আবুল হোসেন। দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
শুনানির সময় আইনজীবী এস এম আবুল হোসেন বলেন, পাঁচ বছর পার হয়ে গেলেও দুদক এ মামলায় চার্জশিট দিচ্ছে না। তাই বিচারও শেষ হচ্ছে না। আমার মক্কেল একজন কেরানি হিসেবে কাজ করেছেন। এখানে তার অপরাধ কী দুদক সেটিও সুনির্দিষ্ট করতে পারেনি। মামলায় টাকা ও সম্পদের যে বিবরণ এসেছে সেখানে আমার মক্কেলের নিয়ন্ত্রণে কিছুই ছিল না। এখানে বিশ্বাস ভঙ্গেরও কিছু ছিল না।
তিনি বলেন, দুদক দৌড়ায় টাকার পেছনে। দুদক নিজেই দুর্নীতিগ্রস্ত। এ মামলায় এখনো ১০৪ জন আসামি ধরাছোঁয়ার বাইরে। অথচ আমার মক্কেল ২০১৯ সাল থেকে কারাগারে আছেন। দুদক ড্রামা (নাটক) করছে। আমার বলার কিছু ছিল না। পরে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান সময় প্রার্থনা করলে আদালত আজ মঙ্গলবার শুনানির দিন ধার্য করেন।
এর আগে গতকাল সকালে বেসিক ব্যাংকের ২ হাজার ৭৭ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় আলামত চেয়ে মালয়েশিয়ায় অনুরোধ পাঠানোর তথ্য হাইকোর্টকে জানায় দুদক। হাইকোর্টে দাখিল করা প্রতিবেদনে দুদক জানায়, পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তির (এমএলএআর) আওতায় মালয়েশিয়াকে অনুরোধ পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় দায়ের করা ৫৬ মামলার মধ্যে ১২ মামলার আসামি ব্যাংকটির সাবেক কর্মকর্তা মোহম্মদ আলীর জামিন শুনানিতে গত ৮ নভেম্বর হালনাগাদ তথ্য চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল প্রতিবেদন দাখিল করে দুদক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়