নাইক্ষ্যংছড়ি : ডিজিএফআই কর্মকর্তা নিহতের ঘটনায় মামলা

আগের সংবাদ

তিন কারণে ভালো ফলাফল : সংক্ষিপ্ত সিলেবাস, প্রশ্নপত্রে সুবিধা ও সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের প্রভাবে পাসের হার বেড়েছে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায়

পরের সংবাদ

দাউদকান্দিতে খালের মুখ বন্ধ থাকায় জলাবদ্ধতা : তিন ফসলি এক হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দাউদকান্দি (কুমিল্লা) প্রতিনিধি : কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ফসলি জমির পরিমাণ ১৬ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে জলাবদ্ধতার কারণে অনাবাদি হয়ে পড়েছে প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমি। অনাবাদি বিস্তীর্ণ জমিতে এখন কচুরিপানা আর আগাছা। এক দশক আগেও এসব জমিতে ইরি ধানসহ বিভিন্ন রকমের শাকসবজির চাষ হতো। মাঠজুড়ে ছিল বিভিন্ন ফসলের সমারোহ। বিপুল এ জমিতে চাষ না হওয়ার কারণ হিসেবে জলাবদ্ধতা ও কৃষকদের অনীহাকে দায়ী বলে মনে করছেন স্থানীয় কৃষি অফিস।
সরজমিন উপজেলার গৌরীপুর, জিংলাতুলি, বারপাড়া, সুন্দলপুর ইউনিয়নে দেখা যায়, এক সময় এসব এলাকার জমিতে চাষাবাদ হলেও বর্তমানে জলাবদ্ধতার কারণে অনেক জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে না। জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে দেখা যায়, গোমতী ও কালাডুমুর নদীর সংযোগস্থল থেকে সুন্দলপুর সেচ প্রকল্প নামে একটি খাল গৌরীপুর, বারপাড়া, সুন্দলপুর ও গোয়ালমারী ইউনিয়ন হয়ে দাউদকান্দি গোমতী নদীতে মিশেছে। উল্লেখিত এলাকার কৃষি জমিগুলো এই খালের পানি দিয়েই চাষ হতো। আবার বর্ষা শেষে এই খালই পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে গোমতী নদীর সঙ্গে সংযোগস্থল খালের মুখটি গৌরীপুর বাজারের ময়লা-আবর্জনা বন্ধ হয়ে গেছে। স্থানীয় কৃষক ও পরিবেশবিদরা মানববন্ধনসহ আন্দোলন করেও খালের মুখে ময়লা ফেলা বন্ধ করতে পারেনি।
পেন্নাই গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক বলেন, বর্ষার পানি জমি থেকে সঠিক সময়ে না নামায় আমাদের জমিগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে কোনো চাষাবাদ করতে পারছি না। কৃষক আল আমিন ও হারুন বলেন, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় গত কয়েক বছর ধরে আমাদের জমিগুলোতে কোনো ফসল ফলাতে পারছি না। ইছাপুর গ্রামের প্রবাসী আনোয়ার হোসেন বলেন, ২০ বছর আগে জমি কিনে বর্গা দিতাম। তাতে আমার নিজেদের খাবার জন্য চাল পেতাম। গত কয়েক বছর ধরে জমি বর্গা নেয়ার লোক পাই না। এখানে শুধু আমার না আরো অনেকের জমি জলাবদ্ধতার কারণে আগাছা দখল করে আছে।
বারপাড়া ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাবিহ উল্লাহ বলেন, ইছাপুর পূর্ব এবং পশ্চিম পাশের খালগুলে বন্ধ হয়ে যাওয়া এখানকার জমিগুলো অনাবাদি থাকে। খাল বন্ধ হওয়ার কারণ হিসেবে দেখা যায়, অপরিকল্পিত বাড়ি নির্মাণ, পুকুর কাটা এবং খালের সংযোগস্থল বন্ধ করা। পেন্নাই ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শেখ আব্দুল বাতেন বলেন, আমার ব্লকের (পেন্নাই ও স্বল্প পেন্নাই) প্রধান সমস্যা হলো জলাবদ্ধতা। খালের মুখটি বন্ধ থাকায় জলাবদ্ধতার কারণে তিন ফসলি জমিগুলো অনাবাদি পড়ে আছে। এখানে আরেকটি কারণ হলো জমি বিক্রি এবং অপরিকল্পিত বাড়ি নির্মাণ।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদকপ্রাপ্ত কৃষি ও পরিবেশবিদ অধ্যাপক মতিন সৈকত জানান, বৈশ্বিক মন্দায় উন্নত বিশ্ব যখন খাদ্য সংকটে এবং চড়া বাজার মূল্যে উদ্বিগ্ন। দুঃখজনক হলেও সত্য, ময়লার স্তূপ ফেলে বন্ধ করা কালাডুমুর নদের মুখটি পরিষ্কার করে খালের পানি চলাচল রাখতে কয়েকবার মানববন্ধন করেও এর কোনো সুরাহা করতে পারিনি। খালের মুখটি বন্ধ থাকায় বর্ষার পানি আসেও দেরিতে, যায়ও দেরিতে। এ জন্যই দাউদকান্দির বিভিন্ন এলাকার অনেক ফসলের মাঠ অনাবাদি থাকে। আর নব্য ধনী এবং বহুজাতিক কোম্পানির খপ্পরে পড়ে বেশি মূল্যে কৃষকের জমিও হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে প্রবাসী পরিবার রেমিট্যান্স পেয়ে কৃষি বিমুখ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী, কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হলে খালগুলো পুনঃখননের বিকল্প নেই।
দাউদকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ বিপুল হোসেন বলেন, আমি এখানে যোগদান করেছি মাত্র এক মাস হয়েছে। জলাবদ্ধতার সমস্যা নিরসনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে অনাবাদি জমিগুলো চাষের আওতায় আনার চেষ্টা করব। আর অনাবাদি জমিগুলো চাষাবাদের আওতায় আনতে পারলে একদিকে আমাদের কর্মসংস্থান বাড়বে, পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিনুল হাসান বলেন, গৌরীপুর বাজারের ময়লা-আবর্জনায় বন্ধ হওয়া গোমতী নদীর সঙ্গে সংযোগ খালের মুখটি সচল করতে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আশা করি, আগামী সপ্তাহে এর কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জলাধার ও খালগুলোকে পর্যায়ক্রমে সচল করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়