শেখ সিরাজুদ্দৌলা লিংকন, কয়রা (খুলনা) থেকে : খুলনা জেলা শহর থেকে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে কয়রা উপজেলার শেষ প্রান্তে সুন্দরবন বেষ্টিত পাতাখালি গ্রাম। দুর্গম এ গ্রামটিতে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের বসবাস। অথচ গ্রামে নেই কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্থানীয়রা জানান, ১৯৯৬ সালে ওই গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য স্থানীয় কয়েকজন ৩৩ শতক জমি দান করেন। সেখানে ২০০১ সালে সরকারিভাবে একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। তৎকালীন পাতাখালি কমিউনিটি বিদ্যালয়ে প্রায় সাত বছরের মতো পাঠদান চলে। এরপর বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে বিদ্যালয়ের ওই ভবনটি জীর্ণশীর্ণ ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় এখানকার প্রায় চার শতাধিক শিক্ষার্থী প্রতিদিন পাঁচ-ছয় কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে অন্য গ্রামে লেখাপড়া করতে যায়। তবে দূরবর্তী এলাকায় বিদ্যালয় হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাওয়ার অনীহা বাড়ছে দিনের পর দিন। তবে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য বারবার ধরনা দিলেও তারা কেবল শুধু আশ্বাসই পেয়েছেন। বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। স¤প্রতি ওই এলাকার অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা অন্তত একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করে ওই গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের দাবি জানান। পাতাখালি গ্রামের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের গ্রামে কোনো বিদ্যালয় নেই। এতে কষ্ট করে পাশের গ্রামের বিদ্যালয়গুলোতে গিয়ে আমাদের লেখাপড়া করতে হচ্ছে। গ্রামে বিদ্যালয় না থাকায় আমাদের অনেক সহপাঠী দূরের স্কুলে যায় না। অনেকে লেখাপড়াও ছেড়ে দিয়েছে। আমরা আমাদের গ্রামে একটি বিদ্যালয় চাই। লেখাপড়া শিখে আমরা মানুষের মতো মানুষ হতে চাই।’ স্থানীয় ইউপি সদস্য গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘গ্রামে বিদ্যালয় না থাকায় আমার সন্তানসহ গ্রামের অনেক শিশু-কিশোর দূরে খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করছে। অনেকে ঝরে পড়ছে। শিক্ষার অভাবে শিশু-কিশোর ও যুবসমাজ বিপথগামী হচ্ছে। তবে পাতাখালি গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপন হলে সুশিক্ষা গ্রহণ করে আগামীতে একটি সুন্দর সমাজ গঠন করতে পারবে এলাকার শিশু-কিশোররা।’ এ ব্যাপারে কয়রা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হাবিবুর রহমান জানান, পাতাখালি গ্রামে একটি বিদ্যালয় প্রয়োজন। যে প্রকল্পের আওতায় অনেক আগে একটা কমিউনিটি বিদ্যালয় হয়েছিল, সেটি এখন বন্ধ আছে। এ বিষয়ে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোকুনুজ্জামান বলেন, ‘পাতাখালি গ্রামে বিদ্যালয় নেই তা আমার জানা ছিল না। এ ব্যাপারে আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’ স্থানীয় সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে প্রত্যেকটি গ্রামে নতুন ভবন নির্মাণ ও স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হচ্ছে। সুন্দরবন বেষ্টিত দক্ষিণ বেদকাশির ওই দুর্গম পাতাখালি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে দ্রুত অবহিত করা হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।